গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২২ জুলাই ২০২৫, ০৭:৩৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

স্বাভাবিক হচ্ছে গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি, পাঁচ দিন পর কবর থেকে তোলা হলো ৩ লাশ

খুলেছে দোকানপাট
স্বাভাবিক হচ্ছে গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি, পাঁচ দিন পর কবর থেকে তোলা হলো ৩ লাশ

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ও সমাবেশে হামলা, সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জারি করা কারফিউ ও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের পর গোপালগঞ্জ শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করেছে। গতকাল সোমবার শহর এলাকায় দোকানপাট খোলার সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি জনসমাগমও বেড়েছে। এদিকে সংঘর্ষে প্রাণহানির পাঁচ দিন পর গতকাল সোমবার ময়নাতদন্তের জন্য তিনজনের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে গতকাল দুপুরে শহরের পৌর কবরস্থান থেকে ইমন তালুকদার ও রমজান কাজী এবং টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী কবরস্থান থেকে সোহেল রানা মোল্লার লাশ তোলা হয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ।

গত বুধবার সংঘর্ষ ও সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন নিহত হয়। তাদের মধ্যে দীপ্ত সাহা নামেও একজন ছিলেন। তাকে হিন্দু ধর্মীয় রীতি অনুসারে সৎকার করা হয়। এ ছাড়া সংঘর্ষে আহত রমজান মুন্সী নামে একজন বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে গোপালগঞ্জে দাফন করা হয়।

এর আগে এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতদের ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফন ও সৎকার হাওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়। এর মধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কবর থেকে লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দেন আদালত। এরপর গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল মুন্সি ও রন্টি পোদ্দারের উপস্থিতিতে জেলা শহরের পৌর কবরস্থান থেকে নিহত ইমন তালুকদার ও রমজান কাজীর মরদেহ উত্তোলন করা হয়। অন্যদিকে টুঙ্গিপাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মারুফ দস্তগীরের উপস্থিতিতে নিহত সোহেল রানার মরদেহ দক্ষিণ টুঙ্গিপাড়া কবরস্থান থেকে উত্তোলন করা হয়। এ সময় নিহতের পরিবারের সদস্যসহ সদর ও টুঙ্গিপাড়া থানার পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

স্বাভাবিক হচ্ছে গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি: সংঘর্ষের পর কারফিউ জারি করা হলে গোপালগঞ্জ শহরের রাস্তাঘাটে লোকসমাগম একেবারেই কমে যায়। বন্ধ থাকে দোকানপাটও। গত রোববার থেকে দোকানপাট খুলতে শুরু করলেও শহরের রাস্তাঘাটে জনসমাগম তেমন বাড়েনি। গ্রেপ্তার আতঙ্কে মানুষের চলাচল ছিল সীমিত। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন রোববার রাতে কারফিউ ও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নিলে জেলায় স্বস্তি ফিরতে শুরু করে স্থানীয়রা জানান। এরপর গতকাল সকাল থেকে শহরের হাট-বাজারগুলো অনেকটা জমে উঠতে দেখা যায় এবং সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচলও বাড়তে দেখা যায়। এ ছাড়া জেলা সদর ও উপজেলাগুলোতে কাঁচাবাজারের পাশাপাশি বিপণীবিতানগুলোতে গতকাল লোকজনের ভিড় দেখা গেছে।

পুলিশ প্রশাসনও জেলার পরিস্থিতিতে বর্তমানে স্বাভাবিক হিসেবে উল্লেখ করছে। তবে গত কয়েকদিনে জেলা সদর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায় মানুষের ঘরবাড়িতে ঢুকে তল্লাশিসহ লোকজনকে আটক করার ঘটনায় জেলাজুড়ে এখনো গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। বিশেষ করে জেলা সদর, টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া ও কাশিয়ানিতে অনেকটা নির্বিচারে গ্রেপ্তারের অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য পুলিশ এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। গত রোববার ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে কোনো গণগ্রেপ্তার হচ্ছে না।

এদিকে গতকাল গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত তিনশর বেশি ব্যক্তিকে আটক করা হলেও পরে যাচাই-বাছাই করে ২৩০-২৪০ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

জেলা বিএনপির সংবাদ সম্মেলন: গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশ ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় কোনো নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় নাগরিক যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জেলা বিএনপি। সোমবার শহরের বড়বাজার পৌর মার্কেটে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান। সেখানে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কাজী আবুল খায়েরসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকাল ১০টায় শহরের পুলিশ লাইন মোড় হতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শরীফ রফিকুজ্জামান বলেন, ১৬ জুলাই এনসিপির পূর্ব ঘোষিত সমাবেশ পণ্ড করার উদ্দেশ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও তার সব অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা শহরে ঢুকে সব সড়ক অবরোধ করে রাখে। কর্তব্যরত সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের মারধর, গাড়ি ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে জনমনে ভীতির সৃষ্টি করে। হামলা চালিয়ে সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও বিএনপি নেতাদের বেশ কয়েকটি তোরণ ভাঙচুর করে। সমাবেশ শেষ হলে তারা এনসিপির নেতাদের আক্রমণ করতে চড়াও হয়। এক পর্যায়ে এনসিপির নেতাকর্মী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় অনেক লোক হতাহত হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কয়েকটি মামলা করেছে উল্লেখ করে সেসব মামলায় কোনো নিরীহ শান্তিপ্রিয় নাগরিককে হয়রানি না করার জন্য সংশ্লিষ্ট বাহিনীর প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পারিশ্রমিক বাড়ালেন জাহ্নবী

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে সরকার স্ট্যাবল হবে না : মুশফিকুর রহমান

মিশরের কাছে আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র 

আ.লীগের ২ নেতা গ্রেপ্তার, বিএনপি অফিসে ককটেল বিস্ফোরণ

কেন ভেঙে যায় আহান-সুহানার প্রেম?

চাপাতির কোপে বড় ভাই নিহত, ছোট ভাই হাসপাতালে

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে চাপে পড়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

থানায় ঢুকে এএসআইকে ছুরিকাঘাত, পুকুরে লাফিয়ে উধাও দুর্বৃত্ত

আজ ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

সমুদ্র উত্তাল, শূন্য হাতে ফিরেছে শত শত ট্রলার

১০

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

১১

শুক্রবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১২

২৫ জুলাই : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৩

জি-৭ দেশগুলোর মধ্যে ফিলিস্তিনকে প্রথম স্বীকৃতি দিচ্ছে ফ্রান্স

১৪

২৫ জুলাই : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৫

সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ১১ জেলে অপহৃত

১৬

ভারতে পালানোর সময় সাবেক শ্রমিক লীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৭

মধ্যরাতে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

১৮

বিপিসির দুই মহাব্যবস্থাপকের পদোন্নতি

১৯

ত্রিভুজ প্রেমের বলি প্রবাসী ফিরোজ

২০
X