ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বর্তমানে দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ সমর্থিত সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি)। গাজায় এখন দুর্ভিক্ষ চলছে উল্লেখ করে বৈশ্বিক এ সংস্থার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘সর্বশেষ তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে, গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ অংশ দুর্ভিক্ষের সীমায় পৌঁছেছে এবং গাজা নগরীতে মারাত্মক অপুষ্টি দেখা দিয়েছে।’
আইপিসি হলো দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি চিহ্নিত করার জন্য জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, ত্রাণ সহায়তা গোষ্ঠী এবং সরকারগুলোর একটি বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ। তারা বিশ্বের নানা প্রান্তের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষুধার মাত্রা নির্ধারণ করে থাকে। আইপিসির এ সতর্কবার্তায় এলাকাটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষপীড়িত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়নি। এ ধরনের ঘোষণা শুধু বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেওয়া যায় বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। আইপিসি বলেছে, তারা বিলম্ব না করে গাজা উপত্যকাকে দুর্ভিক্ষকবলিত হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার কাজ শুরু করবে।
আন্তর্জাতিক ২১টি সংস্থার বৈশ্বিক উদ্যোগ আইপিসি তাদের সতর্কবার্তায় বলেছে, গাজা উপত্যকায় এ মুহূর্তে সংঘাতের অবসান এবং বাধাহীন ও ব্যাপক পরিসরে জীবনরক্ষাকারী মানবিক সহায়তার অনুমতি দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। শুধু এ পদক্ষেপই সেখানে মৃত্যুহার ও মানবিক বিপর্যয় ঠেকানোর একমাত্র উপায়।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ২১ লাখ মানুষের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকায় খাদ্যগ্রহণের দিক থেকে দুর্ভিক্ষের মাত্রা অতিক্রম করেছে। এ ছাড়া গাজা নগরীতে তীব্র অপুষ্টির মাত্রাও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আইপিসির সতর্কবার্তার আগে ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির প্রধান ডেভিড মিলিব্যান্ড এক বিবৃতিতে বলেছেন, দুর্ভিক্ষের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা সবসময় বাস্তবতার পেছনে পড়ে থাকে।
আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, মঙ্গলবার পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনই শিশু। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে সংঘাত শুরুর পর অপুষ্টিজনিত কারণে এখন পর্যন্ত ১৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৮৮ জনই শিশু। বর্তমানে প্রতিদিন ২০০-র মতো ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করলেও জাতিসংঘ বলছে, প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০টি ট্রাক প্রয়োজন গাজার পরিস্থিতি মোকাবিলায়। সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোকে স্বাগত জানালেও তারা মনে করছে, এখন পর্যন্ত পাঠানো ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
মন্তব্য করুন