কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২৫, ০৭:৩২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ইউক্রেনের নিরাপত্তায় নতুন পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র-ন্যাটোর

শান্তিচুক্তি নিয়ে শঙ্কায় ট্রাম্প
ইউক্রেনের নিরাপত্তায় নতুন পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র-ন্যাটোর

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে যুদ্ধ-পরবর্তী নিরাপত্তা নিশ্চিতে নতুন এক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে যে কোনো চুক্তির অধীনে নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এ পরিকল্পনা সামরিকভাবে কতটা কার্যকর হবে এবং রাশিয়ার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। কেননা ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধ বন্ধে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হয়তো শেষ পর্যন্ত শান্তিচুক্তি করতে চাইবেন না। এ পরিস্থিতিতে কিয়েভ ও পশ্চিমা জোটের মধ্যে একদিকে যেমন নতুন আশা জেগেছে, অন্যদিকে ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর সংশয়ও তৈরি হয়েছে। এই জটিল প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা সামরিক সহায়তার নতুন দিক নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে, যার মধ্যে শুধু অস্ত্রের সরবরাহ নয়, বরং সম্ভাব্য স্থল ও আকাশপথে সহায়তার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অন্যদিকে, ক্রেমলিন ইউক্রেনে ন্যাটোর যে কোনো ধরনের উপস্থিতির বিপক্ষে। ফলে ইউক্রেনের ভবিষ্যতের নিরাপত্তা ও শান্তি আলোচনার পথ এখনো অনিশ্চয়তায় ভরা, কারণ উভয়পক্ষই তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরে আসতে নারাজ।

যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর নতুন পরিকল্পনা: যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় সামরিক পরিকল্পনাকারীরা এরই মধ্যে ইউক্রেনের জন্য যুদ্ধ-পরবর্তী নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তাদের মতে, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করা এবং যে কোনো চুক্তির অধীনে ইউক্রেনকে রক্ষা করতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যদিও সোমবারের শীর্ষ সম্মেলনে কিয়েভের নিরাপত্তা নিয়ে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতিতে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা বেশ উৎসাহিত, তবু এর বাস্তবায়ন নিয়ে অনেক প্রশ্ন অমীমাংসিত রয়ে গেছে। রয়টার্সকে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর (পেন্টাগন) বর্তমানে এমন কিছু পরিকল্পনা করছে, যাতে শুধু অস্ত্র সরবরাহের বাইরেও ইউক্রেনকে ব্যাপক সহায়তা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

এ পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে একটি সম্ভাব্য প্রস্তাব হলো ইউরোপীয় বাহিনীকে ইউক্রেনে পাঠানো। তবে তাদের কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, এই সেনারা ন্যাটোর ব্যানারে নয়, বরং নিজ দেশের পতাকাবাহী বাহিনী হিসেবে কাজ করবে। এ বিষয়ে পেন্টাগন ও ন্যাটো তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে হোয়াইট হাউস এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি সমন্বয় করতে সহায়তা করতে পারে।

আকাশপথে সহায়তার ইঙ্গিত ট্রাম্পের: ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ইউক্রেনে পাঠাবেন না। তবে মঙ্গলবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য সামরিক সহায়তার পথ খোলা রেখেছেন। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে আকাশপথে সহায়তা দিতে পারে। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ইউরোপীয়রা স্থলভাগে লোক পাঠাতে ইচ্ছুক, আমরা তাদের আকাশপথে সাহায্য করতে পারি, কারণ এক্ষেত্রে আমাদের যে সামর্থ্য রয়েছে, তা তাদের নেই।’ তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত তথ্য দেননি।

যুক্তরাষ্ট্রের বিমান সহায়তা বিভিন্নভাবে আসতে পারে, যেমন ইউক্রেনকে আরও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেওয়া বা ফাইটার জেটের মাধ্যমে ‘নো-ফ্লাই জোন’ বজায় রাখা। ২০২২ সালে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করেছে। একসময় ট্রাম্প প্রশাসন এই সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিলেও পরে তা আবার চালু করা হয়। ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, প্রধানত প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র পাঠিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে সহায়তা করে যাবেন।

পুতিনের চুক্তি নিয়ে ট্রাম্পের আশঙ্কা: ক্রেমলিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের বিষয়ে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ অবসানের ব্যাপারে আলোচনা করতে আবারও দুই নেতাকে আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রাম্প নিজেই স্বীকার করেছেন, এ সংঘাতের সমাধান করা কঠিন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সম্ভবত সংঘাতের ইতি টানতে আগ্রহী নন। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমরা হয়তো জানতে পারব পুতিন কেন চুক্তি করতে রাজি নন।’ ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, ‘যদি সেটাই হয়, তাহলে পুতিন এক কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বেন।’ তবে এর বাইরে তিনি কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি।

এর আগে পুতিন সোমবার ট্রাম্পকে জানিয়েছিলেন, তিনি ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার ব্যাপারে ‘উদার’। কিন্তু পরের দিনই রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ আলোচনার প্রস্তাবে পানি ঢেলে দেন। তিনি বলেন, ‘যে কোনো বৈঠকের প্রস্তুতি ধীরে ধীরে এবং বিশেষজ্ঞ স্তর থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।’

রাশিয়ার পক্ষ থেকে জাতিসংঘের উপপ্রতিনিধি দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বিবিসিকে বলেন, ‘সরাসরি আলোচনার সুযোগকে কেউই নাকচ করেনি। তবে শুধু নামমাত্র বৈঠকের কোনো মানে হয় না।’ এদিকে, পুতিন ট্রাম্পকে মস্কোয় বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা ইউক্রেনের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। এটি সম্ভবত রাশিয়ার একটি কৌশল ছিল, যা এতই অবাস্তব যে কিয়েভ তাতে রাজি হবে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আরও উন্নত ব্যাকআপ সুবিধা নিয়ে গুগল

গেণ্ডারিয়ায় ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণে দগ্ধ একজনের মৃত্যু

যুক্তরাষ্ট্রে ৫ কোটি ৫০ লাখ ভিসাধারীকে যাচাই শুরু, প্রমাণ মিললে ব্যবস্থা

পিআর পদ্ধতির নামে নির্বাচন পেছাতে ষড়যন্ত্র চলছে : মীর সরফত 

খানকাহ রহমানি মসজিদ : রাজীব থেকে রাহুল গান্ধী

সৌদির নারীদের সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ১৭৩ জন

মোবাইলের ডায়াল প্যাড আগের মতো করবেন যেভাবে

কোন জিনিস কতদিন ব্যবহার করা নিরাপদ

শাপলা চত্বর গণহত্যার বিচারে আলাদা কমিশন গঠনের দাবি

১০

‘১৭ বছরে ব্যবসা ছেড়ে ভারতে গেছেন অনেক স্বর্ণ ব্যবসায়ী’ 

১১

ইতিহাস-ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ গোপালগঞ্জ : নুরুল হক 

১২

ঐকমত্য কমিশনে মতামত দিয়েছে ২৩ দল

১৩

আন্ডারটেকার ও মাইক টাইসন আসছেন ‘বিগ বস ১৯’-এ!

১৪

চিলিতে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত

১৫

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

১৬

সাবেক প্রেসিডেন্ট রণিল বিক্রমাসিংহে গ্রেপ্তার

১৭

রাতে যেসব জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড় ও বজ্রবৃষ্টির আভাস

১৮

সাফে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার

১৯

পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৮৮০

২০
X