চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) দুই নম্বর ফটক থেকে কিছুদূর গেলে ইমাম বোখারি মাদ্রাসার ফটক। সেই ফটক ধরে আরও কিছুক্ষণ হাঁটলে জোবরা গ্রামের পশ্চিমপাড়া। এই পাড়ার একটি টিনশেড ভাড়া বাসায় থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ১২ শিক্ষার্থী। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা জিনিসপত্র নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছেন। তাদেরই একজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের জেষন চাকমা। তিনি কালবেলাকে বলেন, স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের পর থেকে বাসায় আর নিরাপদবোধ করছেন না। দুদিন ধরে হলে অবস্থান করছেন। এখন এসে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার আসবেন।
একই অবস্থা সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহরও। তিনি দুই নম্বর ফটকের পাশেই একটি বাসায় থাকেন। দুদিন ধরে তিনিও শহরে এক বন্ধুর বাসায় থাকছেন। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে ও সার্বিক অবস্থা দেখতে এসেছেন।
শুধু এই দুজনই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে বিভিন্ন কটেজ বা মেসে থাকা অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অবস্থা এমন। অজানা আতঙ্কে নিরাপত্তার অভাবে তারা বাসা ছেড়ে হল বা শহরে পরিচিত কারও বাসায় গিয়ে থাকছেন।
একই পরিস্থিতি দেখা গেল জোবরা গ্রামেও। এই গ্রামের বেশ কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তারাও আতঙ্কে আছেন। গ্রেপ্তার বা হামলার আতঙ্কে যুবক বয়সী কেউ রাতে গ্রামে থাকেন না। যৌথ বাহিনীর গাড়ি দেখলেই তারা দৌড়ে লুকিয়ে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীর দুদিনের সংঘর্ষে উত্তেজনা এখনো পুরোপুরি প্রশমিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তৎপর হলেও শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর মধ্যে সম্প্রীতি ফেরানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রীতি না ফিরলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর মধ্যে সম্প্রীতি ফেরানো এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। না হলে উত্তেজনা যে কোনো সময় ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি এই বিরোধ যাতে স্থায়ীভাবে নিরসন করা যায়, সে উদ্যোগই নিতে হবে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন বলেন, ‘দুপক্ষই আমাদের। আমরা গ্রামবাসীকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক কামাল উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘দুই পক্ষের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়াতে আমরা একটা কমিটি গঠন করেছি। কমিটি কাজ শুরু করেছে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬৬ সালে জোবরার পাশের পাহাড় ঘেঁষে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় ২ হাজার ৩১০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা এ ক্যাম্পাসে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৮ হাজার ৫১৫। তবে আবাসনের সুযোগ সীমিত। ১৪টি হল ও একটি হোস্টেলে প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থী থাকলেও বাকি প্রায় ১৯ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসের বাইরে কটেজ, মেস বা শহরের ভাড়া বাসায় থাকতে হয়।
ঘটনা বড় হলো কেন: শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর ফটক এলাকায় এক ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। রাত সোয়া ১২টা থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে দফায় দফায় শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসন চাইলে ঘটনা রাতেই মীমাংসা করে ফেলতে পারত। ঘটনা শুরু হওয়ার পর অন্তত পৌনে এক ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে আসে প্রক্টরিয়াল টিম। এর মধ্যে ঘটনা অনেক দূর গড়িয়ে যায়। কয়েকজন ছাত্রনেতা উসকানি দিতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল মাত্র কয়েকজন পুলিশ।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আয়উবুর রহমান তৌফিক সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকেই ঘটনাস্থলে ছিলেন। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘প্রক্টরিয়াল বডি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুপস্থিতি ঘটনাকে বড় করেছে। সংঘর্ষ শুরু হয়েছে সোয়া ১২টার দিকে। আর প্রক্টরিয়াল ঘটনাস্থলে এসেছে ১টার পর। তাদের বারবার কল দিলেও পাওয়া যায়নি। তারা সঙ্গে সঙ্গে এসে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে তাৎক্ষণিক মীমাংসা করতে পারত। কিন্তু তারা যখন আসে তখন ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।’
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত বলেন, ‘ঘটনা বড় হওয়ার জন্য প্রশাসনই দায়ী। শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে ধরে প্রশাসনের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন কল ধরেনি।’
তবে শিক্ষার্থীদের এই দাবি নাকচ করে দিয়েছেন সহকারী প্রক্টর বজলুর রহমান। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা ঠিক সময়েই গেছি। শিক্ষার্থীরা না জেনেই এসব বলছে।’
জোবরা গ্রামের ঘরে ঘরে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর ফটক থেকে কিছু দূর গেলেই ইমাম বোখারী মাদ্রাসার ফটক। এ ফটক ধরে এগোলেই ভাঙচুরের দৃশ্য চোখে পড়ে। প্রথমে রয়েছে নুরুল ইসলাম কোম্পানি নামের একজনের গ্যারেজ। এই গ্যারেজের দারোয়ান জানান, সেখানে থাকা ৫টি সিএনজি, ৮ থেকে ৯টি অটোরিকশা, কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। কয়েকটিতে আগুনও দেওয়া হয়েছে। গ্যারেজে ঢুকে একই চিত্র দেখা যায়।
এই গ্যারেজের কয়েক কদম পরে নান্নু মিয়ার দোকান। এই দোকানে চা-নাশতার পাশাপাশি মুদি মালপত্রও বিক্রি করা হয়। এই দোকানে ভাঙচুরের পাশাপাশি জিনিসপত্র লুটপাট করা হয়েছে।
দোকানের সামনে গিয়ে দেখা হয় নান্নু মিয়ার ছেলে মো. রুকনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দোকানে প্রায় ৩ লাখ টাকার মালপত্র ছিল। দোকান ভেঙে মালপত্র লুট করে নিয়ে গেছে। ক্যাশ ভেঙে টাকা নিয়ে গেছে। কিছুদিন আগে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দোকানে মাল তুলেছিলাম। এখন কী করব বুঝতেছি না।’ তার দাবি, দোকানের আশপাশে যেসব শিক্ষার্থী থাকেন, তারাই এই কাজের সঙ্গে জড়িত।
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ৪০ বছর ধরে রিকশা চালান একই এলাকার মোহাম্মদ সিরাজ। তিনি বলেন, ‘১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে রিকশা কিনেছিলাম। শিক্ষার্থীরা আমার রিকশা ভেঙে দিয়েছে। এটা মেরামত করতে ৬০ হাজার টাকা লাগবে। আমার কাছে এখন ৬০ পয়সাও নেই। ঘরে চালও ছিল না, আরেকজন থেকে ধার করে এনে রান্না হচ্ছে। আমি ক্ষতিপূরণ চাই।’
গত মাসের ১৯ তারিখ বিদেশ থেকে এসেছেন আব্দুল মান্নান। তার দাবি, শিক্ষার্থী তার বাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আনা ৭ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৪ লাখ টাকা নিয়ে গেছে।
গ্রামবাসীর দাবি, তারা শিক্ষার্থীদের হামলা করতে ক্যাম্পাসে যায়নি। শিক্ষার্থীরা তাদের গ্রামে ঝামেলা করতে এসেছে। তারা শুধু প্রতিরোধ করেছে।
জোবরা গ্রামের জনগণ পাড়ার বাসিন্দা মো. মহিউদ্দিন বলেন, তার ঘরের টিনগুলো কোপানো হয়েছে। দুপুরে ভাত খেতে এসেছিলাম। হুট করে হামলা হয়। ছোট দুটি বাচ্চাকে নিয়ে বিল পেরিয়ে একটি পাকা ঘরে অবস্থান নিয়েছি।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল কাদের কালবেলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের হামলায় গ্রামে আনুমানিক ৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুই শতাধিক বাড়ি ও প্রায় ৩৫টি দোকানে হামলার পাশাপাশি লুটপাট হয়েছে। গ্রামের তেভাগা খামার মোড়, বাছা মিয়ার দোকান, পশ্চিম পাড়া, জনগণ পাড়া, বড় বাড়ি, শিকদার পাড়া, বড়ুয়া পাড়ার আংশিক এলাকা ভাঙচুর করা হয়েছে।’
মূল ঘটনা না জেনেই সংঘর্ষে যায় অনেক গ্রামবাসী: শনিবারের সংঘর্ষ যখন শুরু হয়, তখন অধিকাংশ গ্রামবাসী ঘুমে। মসজিদের মাইকে ডাকাত আক্রমণ করেছে বলে ঘোষণা শুনেই সবাই ছুটে যান। অনেকে ঘটনার মূল কারণ জানতে পারেন সকালে।
পশ্চিম পাড়ার এক যুবক বলেন, ‘আমরা রাতে দৌড়ে গেছি ঠিক, কিন্তু কারণ জানতাম না। সকালে জেনেছি মূল কারণ।’
ষাটোর্ধ্ব জসিম উদ্দীন বলেন, ‘আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। সকাল সকাল ঘুমিয়ে যাই। রাতে হঠাৎ ডাকাত আক্রমণ করেছে বলে মাইকে ঘোষণা হয়। এরপর ঘুম থেকে জেগে বের হই।’
কেন বারবার এই সংঘর্ষ: বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করা অন্তত পাঁচজন শিক্ষক, বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংঘর্ষের পেছনে মনস্তাত্ত্বিক কারণই বড়। এর বাইরে বাসা ভাড়া, কেনাকাটা, চাঁদাবাজি, স্থানীয় ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, মাদক ব্যবসা, দুর্ব্যবহার, পাহাড়ের গাছ কাটাসহ নানা কারণে বারবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক আলী আজগর চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ‘এসব ঘটনার পেছনে মনস্তাত্ত্বিক বিষয় বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। শিক্ষার্থীরা মনে করে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আর গ্রামবাসীরা মনে করে বিশ্বিবদ্যালয় আমাদেরই এলাকায়। দুই পক্ষই নিজেদের বড় মনে করে। শিক্ষার্থীরা মাঝেমধ্যে রিকশাচালকদের তুইতোকারি করে, রিকশা চালকরাও তুইতোকারি করে। এসব ছোটখাটো বিষয় থেকেই মূলত ঘটনা বড় হয়ে যায়। এ ঘটনায় দুই পক্ষই জয়ী হতে চায়। কথায় জয়ী হতে না পারলে হাতাহাতি জড়ায়, মারামারিতে জড়ায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা হতেই পারে। পরিবারেও হয়। এটা সমাধান করতে হলে দুই পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে। তাৎক্ষণিক মীমাংসার চেষ্টা করতে হবে। এলাকায় গণ্যমান্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধিদের ডেকে তাৎক্ষণিক মীমাংসা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।’
সাবেক প্রক্টর ও বর্তমান বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আল আমীন বলেন, ‘প্রতিবেশীকে তো পরিবর্তন করা যায় না। প্রতিবেশীকে আমার অবদান বুঝতে হবে, প্রতিবেশীরও আমার অবদান বুঝতে হবে। এটা যতক্ষণ না দুই পক্ষ না বুঝবে, ততক্ষণই কেউই স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পারবে না। এখন দুই পক্ষের মাঝে সম্প্রীতি ফেরানো বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতেই হবে।’
বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের বিক্ষোভ: এ দিকে স্থানীয়দের হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে শাখা ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও নারী অঙ্গন। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে ছাত্রদল ও বাকিরা জিরো পয়েন্টে এ কর্মসূচি পালন করে।
এ সময় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন বলেন, ‘বর্তমান প্রশাসন শিক্ষার্থীদের তেমন কোনো প্রত্যাশাই পূরণ করতে পারেনি। না পেরেছে আবাসন নিশ্চিত করতে, না নিরাপদ খাবার দিতে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এখন হুমকির মুখে। আমরা এই ব্যর্থ প্রশাসনের পদত্যাগের দাবিতে এখানে অবস্থান নিয়েছি। এ প্রশাসনের অব্যাহতি না হওয়া পর্যন্ত আমরা এ দাবি চালিয়ে যাব।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মামলা: সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল হাটহাজারী থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দুর রহিম বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় ৯৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয়ের ৮০০ থেকে ১ হাজার জনকে আসামি করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে ১৫৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
শিক্ষার্থীদের রামদা, ছুরি জমা দেওয়ার নির্দেশ: বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তর থেকে লুট হওয়া রামদা, দা, রড, ছুরিসহ দেশি অস্ত্র ফিরিয়ে দিতে শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এসব ফিরিয়ে দেওয়া না হলে লুটের ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা জানানো হয়। গত রোববার গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় এসব অস্ত্র শিক্ষার্থীরা লুট করেছিলেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে। সব মিলিয়ে এসব অস্ত্রের সংখ্যা ১৩০টি। গত ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন আবাসিক হলে অভিযান চালিয়ে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছিল।
জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বেশকিছু সিদ্ধান্ত: এদিকে চবি প্রতিনিধি জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল সন্ধ্যায় জরুরি সিন্ডিকেট সভা বসে। সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর মধ্যে রয়েছে আহত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রণয়নসহ তাদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে; শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মডেল থানা স্থাপন, রেলগেট এলাকায় নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন ও শাটল ট্রেনে নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেওয়া; যেসব ভবন ও কটেজে শিক্ষার্থীরা বসবাস করে, সেসব ভবনের মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের ঘটনাসহ অন্যান্য অসন্তোষ নিরসনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ; বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার আধুনিকায়নের লক্ষ্যে দুটি অ্যাম্বুলেন্স ক্রয় ও ৫০ শয্যায় উন্নীত করার লক্ষ্যে ডিপিপির মাধ্যমে সরকারকে জানানো; সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় করার লক্ষ্যে ১০ তলা বিশিষ্ট পাঁচটি ছাত্র ও পাঁচটি ছাত্রী হল নির্মাণে ডিপিপি প্রস্তুত করে সরকারের কাছে পাঠানো এবং বিদ্যমান আবাসিক হল সংস্কার করা; পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত যৌথ বাহিনী মোতায়েন থাকবে, দুই দিনের সংঘর্ষের কারণ অনুসন্ধান, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও দোষীদের চিহ্নিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য সরকারকে অনুরোধ জানানো হবে; একই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভার সিদ্ধান্ত, স্থানীয় নিরীহ মানুষের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে তা পূরণের জন্য সরকারকে অনুরোধ জানানো হবে।
মন্তব্য করুন