বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে মতভিন্নতা কেটেছে

বৃহস্পতিবার উঠছে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে মতভিন্নতা কেটেছে

সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ-২০২৫-এর খসড়া নিয়ে মতভিন্নতা দূর হয়েছে। সামান্য সংশোধন সাপেক্ষে চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবারই এ অধ্যাদেশের চূড়ান্ত খসড়া উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উঠছে। আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এর আগে গত ১৩ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের আইন বাছাই সংক্রান্ত কমিটির কাছে পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়। তবে খসড়ার ৮ ধারা নিয়ে আপত্তি জানায় বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। খসড়ার ৮ নম্বর ধারায় বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলা বিধানসংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কমিটি গঠনের কথা বলা হয়। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের কমিটিতে সদস্য হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের সচিবকে রাখার কথা বলা হয়।

কমিটিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে রাখার প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি তুলে অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ‘আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি, পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার খসড়া আইনে বিচারকদের বদলি ও পদায়নের জন্য গঠিত কমিটিতে মাননীয় বিচারপতি মহোদয় ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার পাশাপাশি নির্বাহী বিভাগের প্রতিনিধি তথা অ্যাটর্নি জেনারেলকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি সংবিধানের ১১৬ নম্বর অনুচ্ছেদ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মূলনীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

অ্যাসোসিয়েশনের এ প্রতিক্রিয়ার পর গত ১৫ অক্টোবর আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এ বিষয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কিছু বিষয়ে এখনো মতভিন্নতা আছে। সেটা নিয়ে আরেকটু আলাপের প্রয়োজন রয়েছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অধ্যাদেশটা উপদেষ্টা পরিষদে পেশ করা হবে। উপদেষ্টা পরিষদ যদি মনে করে তাহলে এটা পাস করা হবে। আমার ধারণা, এ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই সুপ্রিম কোর্ট পৃথক সেক্রেটারিয়েট করতে পারবে।’

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ-২০২৫ নিয়ে যে মতভিন্নতা তৈরি হয়েছিল, তা দূর হয়েছে। এখন চূড়ান্ত খসড়ায় বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলা বিধানসংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সাত সদস্যের কমিটি গঠনের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে। এ কমিটির পরিবর্তে বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলা বিধানের বিষয়টি বিদ্যমান সুপ্রিম কোর্টের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিএ) কমিটির হাতেই রাখা হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে জিএ কমিটি গঠনের ক্ষমতা প্রধান বিচারপতির একক হাতে না রেখে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের হাতে রাখার বিধান করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় থেকে বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলার ব্যাপারে প্রস্তাব পাঠাবে সুপ্রিম কোর্টের কাছে। এরপর জিএ কমিটি তাদের সিদ্ধান্ত দেবে।

বিচার-কর্ম বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা নাগরিক সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায় থেকে দীর্ঘদিনের দাবি। এ সচিবালয় প্রতিষ্ঠার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। পাশাপাশি বিচার বিভাগ পৃথককরণ সংক্রান্ত ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রায়েও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় করার কথা বলা হয়েছে। ওই রায়ের আলোকে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণার পরও বিচারকদের নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও শৃঙ্খলা বিধানের ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব থেকে যায়। পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সরকারের আমলে বিচার বিভাগ পৃথককরণের কাজ আর এগোয়নি।

গত বছর ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিচার বিভাগের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব নেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। দায়িত্ব নেওয়ার অল্পদিনের মাথায় গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি তার অভিভাষণে বিচার বিভাগের সংস্কারের লক্ষ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। সে অনুযায়ী একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পাশাপাশি বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের রিপোর্টেও পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়। এরপর সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শে আইন মন্ত্রণালয় থেকে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়-২০২৫-এর খসড়া তৈরি করা হয়। খসড়ায় এ সচিবালয় প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা হিসেবে সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ, সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদ এবং মাসদার হোসেন মামলার রায়ের বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়েছে। খসড়া অধ্যাদেশে বিচার বিভাগের আর্থিক স্বাধীনতার বিষয়টি পৃথক সচিবালয়ের হাতেই রাখা হয়েছে।

জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব এবং অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. শাহজাহান সাজু বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিচার বিভাগের সংস্কারে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় হলে এসব সংস্কার পূর্ণতা পাবে। আশা করি, পৃথক সচিবালয় গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগ পুরোপুরি নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপমুক্ত হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

লোহাগড়া পৌর বিএনপির ৭ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

পুকুরে মিলল রাজনের অর্ধগলিত মরদেহ

স্পিন-স্বর্গে রিশাদের ঝড়, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২১৩

অন্তরে আল্লাহ-রাসুল সম্পর্কে বাজে চিন্তা এলে যে ৫ কাজ করবেন

সরকারকে ধন্যবাদ জানালেন জামায়াত আমির

২ টন ইলিশসহ ৪৬ জেলে আটক

আ.লীগের ঝটিকা মিছিলের চেষ্টা, ককটেল বিস্ফোরণ

টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির মৃত্যুতে তারেক রহমানের শোক

উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে রেস্টুরেন্টে কিশোরীকে ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৩

সালমান শাহ হত্যা মামলা, নতুন আসামি হলেন যারা

১০

ভারতকে এশিয়া কাপের ট্রফি কবে দেওয়া হবে, জানাল এসিসি

১১

একনেকে ১৯৮৮ কোটি টাকার ১৩ প্রকল্প অনুমোদন

১২

মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা, আসামির মৃত্যুদণ্ড

১৩

দেয়ালের উপর পড়ে ছিল বস্তায় মোড়ানো নবজাতক

১৪

জোবায়েদ হত্যা : ৩ আসামির জবানবন্দির জন্য আবেদন

১৫

এবার দীঘির সঙ্গে জুটি বাঁধছেন বাপ্পারাজ

১৬

জোবায়েদের খুনিদের ফাঁসির দাবিতে আদালতপাড়ায় ছাত্রদলের বিক্ষোভ

১৭

শ্রেণিকক্ষে ফেরার ঘোষণা এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের

১৮

ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবার এমন কিছু করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ

১৯

তৃতীয়বার কন্যাসন্তান হওয়ায় মায়ের কাণ্ড

২০
X