জুনায়েদ শিশির
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:১৯ এএম
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৪৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাজার পরিস্থিতি

নির্ধারিত দামে মিলছে না আলু পেঁয়াজ ডিম

পুরোনো ছবি
পুরোনো ছবি

চার দিন হয়ে গেল ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার; কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও ১২ টাকায় ডিম, ৩৫ টাকায় আলু ও ৬৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ মিলছে না। ফলে প্রথমবারের মতো তিনটি কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণের ঘোষণাকে নাটক হিসেবে দেখছেন অনেকে। গতকাল রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা কেজি, কোথাও কোথাও ৫ টাকা কমে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৮৫ টাকায়। প্রতি পিস ডিম বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১২ থেকে ১৩ টাকায়। এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে কয়েক দফা চিনির দাম নির্ধারণ করা হলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি।

যদিও সম্প্রতি বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কমছে। আর দেশের বাজারে উল্টো বাড়ছে। গত ১২ বছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ ১২.৫৪ শতাংশে রয়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যস্ফীতির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় কঠোর নজরদারি জরুরি হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, যেসব পণ্য দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন হচ্ছে, সেখানে দাম বৃদ্ধি পাওয়া একেবারেই অযৌক্তিক। লোভস্ফীতির কারণে ব্যবসায়ী চক্র মানুষের পকেট লুট করছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) গবেষণা পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা কালবেলাকে বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম বেঁধে দিয়ে পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়; কিন্তু পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে সরকার করেছে। এর বাস্তবায়নে সরকারের উচিত কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা। সরবরাহের কোন কোন জায়গায় সমস্যা রয়েছে, কারা সমস্যা তৈরি করছে; তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, যাতে পরবর্তী সময়ে একই ঘটনা অন্যরা করতে সাহস না পায়।

এ ছাড়া খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে এ কার্যক্রমে পণ্যের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে সাধারণ মানুষ কমদামে বেশি পণ্য পেতে পারে। বাজার পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) তথ্যমতে, বাণিজ্যিকভাবে প্রতিদিন সাড়ে ৪ থেকে ৫ কোটি ডিম উৎপাদন হয়। এর মধ্যে চলতি বছর মে-জুন মাসে পরিমাণ ছিল ৪ কোটি। আগস্টে বৈরী আবহাওয়ায় ডিমের উৎপাদন কমে ৩ কোটি ৯০ লাখে এসেছে, যেজন্য বাজারে ডিমের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে দাম বেড়েছে।

ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে বলা হচ্ছে, দৈনিক ৪ কোটি ডিমের চাহিদা বিবেচনায় বর্তমান বাজারে প্রতি ডিমে ২ থেকে ৩ টাকা বেশি দামে বিক্রি করে প্রতিদিন ৮ থেকে ১২ কোটি টাকা বাড়তি মুনাফা করা হচ্ছে, যা খামারি, পাইকারি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত সবার পকেটে ঢুকেছে। অন্যদিকে সরকারি হিসাবে চলতি বছর আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টন। আলুর উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১১২ টন। ৩৬৫টি হিমাগারে ২৯ লাখ ৪৮ হাজার টন ধারণক্ষমতার মধ্যে ৮৩ শতাংশ অর্থাৎ ২৪ লাখ ৩২ টন সংরক্ষণ হয়েছে।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ২০২৩ সালে ২৩ লাখ ১২ হাজার টন আলু বিভিন্ন হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়। ২০২২ সালে ছিল ২৪ লাখ ১৯ হাজার ৭৬০ টন। অর্থাৎ ২০২৩ সালে ১ লাখ ৭ হাজার ২৩৪ টন আলু কম সংরক্ষণ হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারের ২০২২ সালের তথ্যের তুলনায় ২০২৩ সালে ২ লাখ ১৬ হাজার ৫১৩ টন আলু কম সংরক্ষণ হয়েছে। দেশে এখনো ১১ থেকে ১২ লাখ টন আলুর মজুত রয়েছে, যা দিয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সংকট হবে না।

জানা গেছে, প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে সাড়ে ১০ টাকা, কৃষক আলু বিক্রি করেছেন ১৪ থেকে ১৫ টাকায়। আর প্রতি কেজিতে ৫ টাকা সংরক্ষণ খরচসহ দাম দাঁড়ায় ১৮ থেকে ২০ টাকা। বছরের শুরুর দিকে ২৫ টাকায় আলু বিক্রি হলেও গত মে মাস থেকে বাড়তে থাকে। পর্যায়ক্রমে হিমাগারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা, পাইকারি বাজারে ৪৪ টাকায় এবং খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এই সময়ে বিভিন্ন পর্যায় হয়ে ভোক্তাকে প্রতি কেজি আলুর জন্য ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে। খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরামর্শ করে সব খরচ মিলে খুচরা পর্যায়ে আলুর কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা নির্ধারণ করে সরকার, যা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম কালবেলাকে বলেন, সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক করতে না পারলে সমাধান হবে না। ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান, দুই মাস পরেই আলুর নতুন মৌসুম শুরু হবে। তাই যাদের কাছে আলু রয়েছে, তারা যাতে বাজারে সঠিকভাবে সরবরাহ করে। আলুর তো কোনো ঘাটতি নেই, আমদানির প্রয়োজন নেই। এখানে ডলারের প্রভাব নেই। নিজের ঘরে আছে, কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। ডিমের বিষয়ে উৎপাদন সমস্যা থাকলেও দাম এত বেশি হওয়া যৌক্তিক নয়। এজন্য আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে সবসময় সহায়তা করেছি। তারা বাজার পর্যবেক্ষণ বা নজরদারি বাড়ালে আমরা সঙ্গে আছি।

দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৫ থেকে ২৬ লাখ টন। সরকারি হিসাবে উৎপাদন হয়েছে ৩৩ লাখ ৯৮ হাজার টন। সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হওয়ার অজুহাতে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকলে জুলাই মাসে আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত ২ লাখ ৮২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। উৎপাদন ও আমদানি পর্যাপ্ত হওয়ার পরও বাজারে পেঁয়াজের দাম কমছে না।

বাজার পরিস্থিতির বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি শামসুল আলম কালবেলাকে বলেন, আমাদের বাজার ব্যবস্থা প্রতিযোগিতামূলক নয়। নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে। সরকার চাইলেই তাদের লাইসেন্স বাতিল করতে পারবে না। কারণ বাজারে প্রতিযোগী নেই। এজন্য তদারকি গোড়ায় না করে খুচরা পর্যায়ে করা হচ্ছে। প্রতিযোগিতার বাজার থাকলে এমনটি হতো না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নিউটনের ‘ভয়ংকর’ যৌন নিপীড়নের তথ্য দিল র‍্যাব

যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত

ট্রাক্টর চাপায় প্রাণ গেল শিশুর

ঢাকায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের মিছিল শেষে শিক্ষার্থী খুন

ছাত্রলীগ কর্মীকে বেধড়ক কোপাল প্রতিপক্ষরা

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে আল্টিমেটাম

অবশেষে লালমনিরহাটে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি

মিষ্টি বিতরণের ধুম / চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত

উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত

টানা কয়েকদিন বৃষ্টির আভাস

১০

পৃথিবীর যে স্থানে কেউ যেতে পারে না

১১

সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় মামলা

১২

সংগঠনের অবস্থা জানতে জেলা সফর শুরু করছে যুবদল

১৩

সৌদিতে প্রথমবার সাঁতারের পোশাকে নারী ফ্যাশন শো

১৪

তিস্তা নদীতে গোসল করতে গিয়ে কিশোরের মৃত্যু

১৫

সমুদ্রপাড়ে সিডিএ প্রকৌশলীদের ‘বারবিকিউ পার্টি’

১৬

জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে চাচার হাতে ভাতিজি খুন

১৭

পশুর হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ

১৮

অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে সরকার : মান্না

১৯

অমরত্ব পেল লেভারকুসেন

২০
X