সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে এবার ১৫ দিনব্যাপী সমাবেশ ও রোডমার্চের টানা কর্মসূচি নিয়ে আসছে বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ধাপে নামতে যাচ্ছে দলটি। আগামীকাল থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে। সমাবেশ দিয়ে কর্মসূচি শুরু হবে এবং রোডমার্চ দিয়ে শেষ হবে। কর্মসূচির মধ্যে পাঁচটি রোডমার্চ এবং ১২টি সমাবেশ রয়েছে। সিলেট, বরিশাল, খুলনা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে রোডমার্চ এবং ঢাকা ও ঢাকার উপকণ্ঠে সমাবেশগুলো অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দিন ঢাকা ও গাজীপুর জেলায় দুটি সমাবেশ হবে। আর সর্বশেষ রোডমার্চ হবে চট্টগ্রামের পথে। এর মধ্যে এক দিন সমাবেশ ও রোডমার্চ উভয় কর্মসূচিই পালিত হবে। যুগপতের শরিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এরই মধ্যে এ কর্মসূচি চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। আজ সোমবার যুগপৎভাবে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বিএনপি মনে করছে, সরকার এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দাবি মেনে নেবে। অন্যথায় সামনে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি দেবেন তারা। জানা গেছে, এই কর্মসূচি শেষ হলে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই আবার টানা নতুন কর্মসূচি দেবে দলটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রোডমার্চ কর্মসূচির শুরুতে ও শেষে সমাবেশ এবং একাধিক জায়গায় পথসভা করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের। এর মধ্য দিয়ে কার্যত চূড়ান্ত আন্দোলনের পথে সারা দেশে শেষ জনসংযোগের কাজ সেরে নিতে চাইছেন তারা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল নওগাঁ ও বগুড়ায় তারুণ্যের রোডমার্চ কর্মসূচিতে বলেন, দেশের মানুষ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। গণদাবি মেনে অবিলম্বে পদত্যাগ না করলে জনগণের আন্দোলনের তরঙ্গে তারা ভেসে যাবেন। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরবে না বলে জানান তিনি।
১৫ দিনব্যাপী কর্মসূচিতে যা থাকছে
১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলার জিঞ্জিরা অথবা কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ড. আব্দুল মঈন খান কেরানীগঞ্জে এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী টঙ্গীর সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন। ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার হয়ে সিলেট পর্যন্ত রোডমার্চ হবে। এতে নেতৃত্ব দেবেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি থাকবেন। ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরের যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ হবে। যাত্রাবাড়ীতে আব্দুল মঈন খান ও আমীর খসরু এবং উত্তরায় মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রধান অতিথি থাকবেন। ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী পর্যন্ত রোডমার্চে নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান নেতৃত্ব দেবেন। ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরের নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। নজরুল ইসলাম নয়াবাজার এবং আমীর খসরু ও সেলিমা রহমান আমিনবাজারের সমাবেশের প্রধান অতিথি থাকবেন। ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগে হবে রোডমার্চ। এটি ঝিনাইদহ থেকে শুরু হয়ে যশোর, নওয়াপাড়া হয়ে খুলনা শহরে যাবে। এই রোডমার্চে মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নেতৃত্ব দেবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরের গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় সমাবেশ হবে। গাবতলীতে নজরুল ইসলাম এবং ফতুল্লায় আমীর খসরু ও সেলিমা রহমান প্রধান অতিথি থাকবেন। ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মহিলা সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন। ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন মির্জা ফখরুল। ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোনা-কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত রোডমার্চে মঈন খান ও নজরুল ইসলাম নেতৃত্ব দেবেন। সর্বশেষ ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে। এতে নেতৃত্ব দেবেন মির্জা ফখরুল।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এসব কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সর্বোচ্চ লোকসমাগম ঘটিয়ে প্রতিটি কর্মসূচি পালন করবে তারা। এজন্য প্রতিটি কর্মসূচিতে নিজ নিজ এলাকার নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বিএনপির এই রোডমার্চের কর্মসূচি ছিল মূলত দলটির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের। কিন্তু তারা কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে উত্তরাঞ্চলে দুটি তারুণ্যের রোডমার্চ করে গতকাল রোববার কর্মসূচি শেষ করেছে। তাদের বাকি রোডমার্চগুলো এখন বিএনপি ও যুগপতের শরিকদের রোডমার্চের কর্মসূচির সঙ্গে একীভূত করা হয়েছে।
জানা গেছে, এসব সমাবেশ ও রোডমার্চের কর্মসূচি শেষে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হবে বিএনপির চূড়ান্ত আন্দোলনের দ্বিতীয় তথা শেষ ধাপ, যেটি অক্টোবর মাসজুড়ে চলবে। সেই সময় সব কর্মসূচি হবে ঢাকাকেন্দ্রিক। তখন কর্মসূচি শুক্র ও শনিবারে সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে। দাবি আদায়ে ঢাকায় তখন নির্বাচন কমিশন, গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ঘেরাওসহ টানা অবস্থানের কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই এ আন্দোলনের মাধ্যমে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে চায় দলটি।
গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু কালবেলাকে বলেন, দাবি আদায়ে প্রায় এক বছর ধরে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করা হয়েছে। সরকার গণদাবির প্রতি কোনো কর্ণপাত করেনি। আগামীতে আরও কর্মসূচি দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলনের যত ফর্ম রয়েছে, সব বিবেচনায় আছে।
গত ১২ জুলাই থেকে সরকার হটানোর একদফার আন্দোলন শুরু করে বিএনপি ও এর শরিকরা। ঢাকায় মহাসমাবেশ, রাজধানীর চার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি এবং একাধিকবার পদযাত্রাসহ গণমিছিল করেছে তারা।
মন্তব্য করুন