আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মিছিল, অবরোধ, সমাবেশ-পাল্টা সমাবেশে বেশ কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত দেশের রাজনীতির মাঠ। এ পরিস্থিতিতেই জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তপশিল ঘোষণার পর বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি বিরোধী দল বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা করতে পারে বলে এমন শঙ্কা ছিল আগে থেকেই। তবে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী বড় কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। বিশেষ করে রাজধানী ছিল শান্তিপূর্ণ। তবে মানুষের মনে ছিল চাপা আতঙ্ক।
অবশ্য রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সাদা পোশাকে গোয়েন্দাদের ছিল সতর্ক চোখ। বাড়তি নিরাপত্তায় মাঠে ছিল র্যাব ও বিজিবি। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নাশকতা বা সহিংসতা প্রতিরোধে এরই মধ্যে পুলিশ বেশকিছু কৌশল নিয়েছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তপশিলের পর বড় নাশকতার শঙ্কা ছিল। আপাতত এমন কিছু না হলেও নির্বাচন পর্যন্ত সহিংসতা ঠেকাতে নানা কৌশল নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী দেশজুড়ে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এর মধ্যেও বগুড়া, জয়পুরহাট, ঝালকাঠিসহ সারা দেশে বিভিন্ন ধরনের
১৭টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ছাড়া কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। তবে এসবের সঙ্গে জড়িতদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দৈনিক কালবেলাকে বলেন, সারা দেশেই সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশ। যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ঠেকাতে নানা কৌশলও নেওয়া হয়েছে। জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। নির্বাচন পর্যন্ত দেশে নিরাপত্তা বলয় বাড়তেই থাকবে। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বন্ধ করতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। নাশকতার মতো ঘটনাগুলো সংঘটিত হওয়ার আগেও তা বন্ধ করে দিতে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, পুলিশের তৎপরতার কারণে বড় ধরনের কোনো নাশকতা হয়নি। গত ৪ মাস ধরে ঢাকায় রাজনৈতিক-সামাজিকসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে ডিএমপি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। জাতীয় সংসদ নির্বচনের তপশিল ঘোষণার পর ঢাকার বিভিন্ন এলাকাতে নাশকতার চেষ্টা বেড়েছে। কয়েকটি এলাকায় ককটেল ছুড়ে মেরেছে, তবে পুলিশি তৎপরতার কারণে বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। আগামী দিনগুলো এ ধরনের নাশকতার চেষ্টা করলে পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
পুলিশ সূত্র জানায়, বিএনপি আগামী রবি ও সোমবার সারা দেশে হরতাল ডেকেছে। হরতালের নামে দলটির নেতাকর্মীরা যাতে কোনো ধরনের নাশকতা করতে না পারে সেজন্য ইতোমধ্যে কৌশলী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ পেশাদারত্বদের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলেও নাশকতাকারীদের বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নানা বেশে দায়িত্ব পালন করছে। এরই মধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যানবাহনে আগুন দেওয়া এবং ককটেল তৈরির চেষ্টাকালে বিস্ফোরকসহ অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সূত্রগুলো বলছে, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও নাশকতা মামলার আসামিরা কে কোথায়, সে বিষয়েও খোঁজ খবর নেওয়া শুরু হয়েছে। তাদের অবস্থান শনাক্ত করে গতিবিধির ওপর নজরদারি করা হবে। পাশাপাশি বিস্ফোরকের উৎস এবং এর অবৈধ বহন ঠেকাতেও গোয়েন্দা তৎপরতা চলছে। এরই মধ্যে পেট্রোল বোমার মতো সন্ত্রাস ঠেকাতে ঢাকাসহ দেশের পেট্রোল পাম্পগুলোতে নানা নিরাপত্তামূলক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন ও নৌপথে এবং গণপরিবহনগুলোর ভেতর পুলিশ সদস্যরাও নানা বেশে দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি লোকজনকে সতর্ক করতেও মাইকিং করা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী দলগুলোর হরতাল-অবরোধের মধ্যেও খাদ্যপণ্য সরবরাহ ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে পুলিশ পাহারা দিয়ে খাদ্য ও জরুরি পণ্যের গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হবে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতেও নজরদারি শুরু হয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখা থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল সিলেট থেকে আসা ৪৭টি তেলবাহী লরি কনভয়কে এসকর্ট দিয়ে রংপুর ও দিনাজপুরের পার্বতীপুর পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। র্যাব-১৩, পুলিশ, বিজিবি, এবং জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে যৌথ টহল দল এসব গাড়িকে এসকর্ট করে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে।