কথা ছিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালনের। কিন্তু অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ময়মনসিংহ-৭ আসনের নৌকার প্রার্থী রুহুল আমীন মাদানীকে নির্বাচনে পাস করানোর দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ত্রিশাল থানার ওসি কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে। সেই দায়িত্ব সফল করতে ওসি নিজেই মাঠে নেমেছেন বলে অভিযোগ সেখানকার জনপ্রতিনিধিদের। স্থানীয় দুই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, তাদের থানায় ডেকে নিয়ে কঠোর ভাষায় হুমকি দিয়েছেন ওসি। বলেছেন, ‘মাদানীর নৌকার পক্ষে কাজ করেন, নইলে মামলার জন্য প্রস্তুত থাকেন।’
এবারের নির্বাচনে ত্রিশাল-৭ আসনে ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন ত্রিশাল পৌরসভার সাবেক মেয়র এবং ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ বি এম আনিছুজ্জামান। এই আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বর্তমান এমপি মাদানী। এই দুই প্রার্থীর মধ্যেই এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ধারণা ভোটারদের। এ অবস্থায় এক পুলিশ কর্মকর্তার এমন ভূমিকা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এতে দলীয়ভাবেও চাপে পড়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
থানায় ডেকে নেওয়া দুই চেয়ারম্যান হলেন ত্রিশাল উপজেলার ১ নম্বর ধানীখোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ সোহেল আহাম্মদ এবং ২ নম্বর বৈলর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান শাহানশাহ। তারা জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন বলে ওসি তাদের মামলার আসামি করার হুমকি দিয়েছেন। আর ওসির পক্ষ হয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের ফোনে হুমকি দিচ্ছে ধানীখোলা ইউনিয়নের বিট অফিসার এসআই আমিনুল ইসলাম।
চেয়ারম্যান মামুন কালবেলাকে বলেন, গত ১৯ ডিসেম্বর ত্রিশাল থানায় যাওয়ার পর ওসি কামাল আমার কাছে জানতে চান নির্বাচনে কোন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি। আমি তাকে বলেছি জনগণ যে প্রার্থীর পক্ষে থাকবে আমিও তার পক্ষে নির্বাচন করবো। তখন ওসি আমাকে বলেন নৌকার প্রার্থী মাদানী সাহেবের পক্ষেই নির্বাচন করতে হবে। না হলে মামলার জন্য প্রস্তুত থাকেন। এ কথা বলে ওসি আমাকে দুদিন সময় দেন চিন্তা করার জন্য।
মামুন আরও বলেন, এ ঘটনার পরদিন ২০ ডিসেম্বর এলাকায় একটি বাউল গানের আসরের আয়োজন করা হয়। সেখানে রাজনৈতিক নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। মূলত নির্বাচন ঘিরেই এই আয়োজন হয়। সেখানে কয়েকজন বক্তা বলেন, মাদানী এলাকার জন্য কোনো কাজ করেননি । রাস্তাঘাটের কোনো উন্নয়ন হয়নি। এসব বক্তব্যের কিছুক্ষণ পরই পুলিশ এসে সেই আসর ভেঙে দেন। আমার সামনেই তারা এটি করল।
চেয়ারম্যান মশিউর কালবেলাকে বলেন, ওসি কামাল আমাকে বলেছেন যদি নৌকা প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করি তাহলে সমস্যা হবে এবং আমার নামে মামলা হবে। অন্য নেতাকর্মীদেরও মোবাইলে ফোন করে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনিছুজ্জামান বলেন, আমি ত্রিশাল পৌরসভার তিনবারের মেয়র ছিলাম এবং ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। এবার ওপেন ফিল্ডে নির্বাচন হচ্ছে। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছি। আমার পক্ষে যারা কাজ করছেন তাদের মামলার হুমকি দিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন ওসি কামাল। তিনি কয়েক মাস আগে বদলী হয়ে ত্রিশাল থানায় এসেছেন। তিনি নির্বাচনকে প্রভাবিত করছেন। এসআই আমিনুলও আমার লোকদের বারবার ফোন দিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে আমি রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দিয়েছি।
জানতে চাইলে ত্রিশাল থানার ওসি কামাল হোসেন দাবি করেন এ অভিযোগগুলো সত্য নয়। স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধির সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আমার কোনো কথা হয়নি।