১০ বছর কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) প্রধান মুফতি জসীমুদ্দীন রাহমানী। বেরিয়ে তিনি ফের নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। এজন্য খুঁজছিলেন সঙ্গীদের। কারামুক্ত হওয়ার পরপরই গোপনে কয়েকজনের সঙ্গে বৈঠকও করেন। এরপরই নড়েচড়ে বসে জঙ্গি ও উগ্রবাদ প্রতিরোধে যুক্ত পুলিশের ইউনিটগুলো। শেষ পর্যন্ত কারামুক্তির দুদিনের মাথায় ওই শীর্ষ জঙ্গি নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যরা। জসীমুদ্দীন রাহমানী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে বিচারাধীন পাঁচটি মামলায় জামিন পেয়ে ২১ জানুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুরে অবস্থিত হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে জামিনে বের হন রাহমানী। এরপর থেকে তার ‘হদিস’ মিলছিল না। জঙ্গি ও উগ্রবাদ প্রতিরোধে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা বলে আসছিলেন, এ ধরনের জঙ্গি কারাগারের বাইরে থাকাটা ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলাতে সাক্ষী হাজির করাও কঠিন হয়ে পড়বে। এতে মামলার বিচার কার্যক্রমে প্রভাব পড়তে পারে।
আদালতে জমা দেওয়া সিটিটিসির নথি যাচাই করে দেখা যায়, জসীমুদ্দীন রাহমানীকে রাজধানীর উত্তরা-পশ্চিম থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ২৪ জানুয়ারি আদালতে হাজির করা হয়। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাকে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন জানান। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেন। ২২ জানুয়ারি সিটিটিসির একজন উপপরিদর্শক বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
সিটিটিসি সূত্র জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের সূত্র ধরে তারা জানতে পারেন, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্যরা ২২ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর রাজধানীর আবদুল্লাহপুর এলাকায় গোপন বৈঠক করেন। এরপর ওই এলাকায় ঘেরাও করে পুলিশ। ওইদিন রাত ৮টার দিকে উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের ৭/এ নম্বর রোডে নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবনের পাশে ৫ থেকে ৬ জন একসঙ্গে মিলিত হয়। তাদের সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদ করার উদ্যোগ নিলে তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে নিয়ামুল ইসলাম তৌফিক নামে একজনকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে একটি শপিং ব্যাগের ভেতর রাখা জসীমুদ্দীন রাহমানীর লেখা ‘উন্মুক্ত তরবারি’সহ উগ্রবাদী দুটি বই ও অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়। পরে ওই ব্যক্তি আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করে।
সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, গ্রেপ্তার তৌফিককে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ওই বৈঠকটির আয়োজন করেছিলেন সদ্য কারামুক্ত জসীমুদ্দীন রাহমানী এবং তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তারা তার কারামুক্তিতে উচ্ছসিত হন এবং এটিকে ‘জিহাদি আন্দোলনের বিজয়’ মনে করেন। এরপরই রাহমানীর অবস্থান শনাক্ত করে তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়। অভিযানের এক পর্যায়ে উত্তরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রাহমানীকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসির পরিদর্শক এস এম মিজানুর রহমান বলেন, রাহমানী কারাগার থেকে বের হওয়ার পর নতুন উদ্যমে সাংগঠনিক কাজের পরিকল্পনা ও নাশকতার জন্য উত্তরা এলাকায় অনেকের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে।
২০১৩ সালের ১২ আগস্ট বরগুনা শহরের উপকণ্ঠে দক্ষিণ খাজুরতলা এলাকায় গোপন বৈঠক চলাকালে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসীমুদ্দীন রাহমানীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর পল্লবীতে বাসার সামনে ব্লগার রাজীব হায়দার শোভন হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাজীব হত্যায় উসকানিদাতা হিসেবে ওই মামলায় রাহমানীর পাঁচ বছরের সাজা হয়েছিল। এরই মধ্যে তার সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে। বরগুনার একটি মামলা, রাজধানীর গুলশান থানার মামলা, উত্তরা পশ্চিম থানার একটি মামলা ও মোহাম্মদপুর থানার দুটি মামলায় তার বিচার কার্যক্রম চলছে। এসব মামলায় জামিনে বের হন তিনি।
জঙ্গি ও উগ্রবাদ প্রতিরোধে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এবিটি জঙ্গিরা দেশে মুক্তমনা ও ব্লগারদের টার্গেট করে হামলা ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে আসছিল। ২০১৫ সালের মে মাসে এজন্য সরকার ওই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে। পরে এর সদস্যরা ‘আনসার আল ইসলাম’ নামে আরেকটি সংগঠন তৈরি করে অপতৎপরতা চালায়। সেটিও নিষিদ্ধ করে সরকার।