এবারের অমর একুশে বইমেলায় এ পর্যন্ত নতুন বই এসেছে ৩ হাজার ১৭৬টি। মেলা শুরুর আগে থেকে বই ছাপানোর কাজে নামেন প্রকাশকরা। শুরুর দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত নতুন বই আসে মেলায়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবারও মেলায় এসেছে ৯৫টি নতুন বই। নতুন বইয়ের গন্ধে ম ম করছে মেলা প্রাঙ্গণ। গতকাল ছিল মেলার ২৭তম দিন। ছিল পাঠক ও দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড়।
এদিকে প্রকাশকদের আবেদনে সাড়া দিয়ে অমর একুশে বইমেলা দুই দিন বাড়ানো হয়েছে। মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা এ তথ্য জানিয়েছেন।
বাংলা একাডেমির তথ্য বলছে, ২৭ ফেব্রুয়ারি নতুন বই এসেছে ৯৫টি, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২৪৬টি, ২৫ ফেব্রুয়ারি ৯৬টি, ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৩৮টি, ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৭টি, ২২ ফেব্রুয়ারি ৭৮টি, ২১ ফেব্রুয়ারি ৩০৩টি, ২০ ফেব্রুয়ারি ৯৯টি, ১৯ ফেব্রুয়ারি ৭৫টি, ১৮ ফেব্রুয়ারি ৭৩টি, ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৭১টি, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২৯৮টি, ১৫ ফেব্রুয়ারি ৯৭টি, ১৪ ফেব্রুয়ারি ৯১টি, ১৩ ফেব্রুয়ারি ১১০টি, ১২ ফেব্রুয়ারি ১১৫টি, ১১ ফেব্রুয়ারি ৯২টি, ১০ ফেব্রুয়ারি ১৫২টি, ৯ ফেব্রুয়ারি ১৭১টি, ৮ ফেব্রুয়ারি ৮০টি, ৭ ফেব্রুয়ারি ৬৯টি, ৬ ফেব্রুয়ারি ১০৮টি, ৫ ফেব্রুয়ারি ৭০টি, ৪ ফেব্রুয়ারি ৬৬টি, ৩ ফেব্রুয়ারি ৭৪টি এবং ২ ফেব্রুয়ারি নতুন বই এসেছিল ৩১টি।
নতুন বইয়ের মধ্যে গল্পগ্রন্থ ৩৮৯টি, উপন্যাস ৪৫৭টি, প্রবন্ধ ৪১৮টি, কবিতা ১০০৩টি, গবেষণাগ্রন্থ ৬৫টি, ছড়া ৯২টি, শিশুতোষ ৫৭টি, জীবনীগ্রন্থ ১১৫টি, রচনাবলি ২৮টি, মুক্তিযুদ্ধ ৬২টি, নাটক ২৭টি, বিজ্ঞান ৩৬টি, ভ্রমণ ৫১টি, ইতিহাস ৪৫টি,
রাজনীতি ২২টি, স্বাস্থ্য ২১টি, বঙ্গবন্ধুবিষয়ক ২৩টি, রম্য/ধাঁধা ২৪টি, ধর্মীয় ৫২টি, অনুবাদ ৫০টি, অভিধান ১৮টি, সায়েন্স ফিকশন ৩২টি এবং অন্যান্য ২০০টি।
ইতিহাস বলছে, ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির সামনে পাটের চটের ওপরে মাত্র ৩২টি বইয়ের পসরা সাজিয়ে স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ বইমেলার যাত্রা শুরু করে। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহার হাত ধরেই এই বইমেলার যাত্রা শুরু হয়। এরপর ১৯৭৩ সালের ১৫ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি বিশেষ ছাড়ে নিজেদের বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। পাশাপাশি একাডেমি প্রাঙ্গণে বেশ কিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানও ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বই বিক্রি শুরু করে। ১৯৭৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় সাহিত্য সম্মেলনের বই প্রদর্শনী ও ম্যুরাল প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন। ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমি কেবল প্রকাশনা সংস্থাগুলোকে জায়গা বরাদ্দ দিত। আয়োজক হিসেবে তাদের অফিসিয়াল কোনো পরিচিতি ছিল না। পরে ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি সরাসরি মেলায় সম্পৃক্ত হয়। ১৯৭৯ সালে একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। সেই থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে আয়োজন হচ্ছে অমর একুশে বইমেলার।
শুরুতে বইমেলা হতো ২১ দিন ধরে। ১৯৮১ সালে এটি কমিয়ে ১৪ দিনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও প্রকাশক ও পাঠকদের দাবির মুখে তা আবার ২১ দিনে ফিরিয়ে আনা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৪ সাল থেকে মাসজুড়ে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাঙালির প্রাণের এ মেলা।
গতকাল বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ: সেলিম আল দীন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লুৎফর রহমান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন রশীদ হারুন ও জাহিদ রিপন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাট্যজন নাসিরউদ্দীন ইউসুফ।
এদিন বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকীতে বিকেল ৫টায় হুমায়ুন আজাদ দিবস পালন উপলক্ষে লেখক-পাঠক ফোরামের উদ্যোগে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলার তথ্যকেন্দ্রের সামনে এক স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। বিশিষ্ট প্রকাশক ওসমান গনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রেজানুর রহমান, শিশুসাহিত্যিক মানজুর মুহাম্মদ, কবি রণক মুহম্মদ রফিক এবং গবেষক অমল গাইন। বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজন: এই মঞ্চে বিকেল ৫টায় বাংলা একাডেমি লেখক পর্ষদের উদ্যোগে সাহিত্য অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি রওশন ঝুনু, হাসনাইন সাজ্জাদী, মাহী ফ্লোরা এবং মোস্তাফিজুর রহমান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী পারভেজ চৌধুরী, কুমার লাভলু, নাজমুল আহসান এবং মুজাহিদুল ইসলাম। এছাড়া ছিল সালাউদ্দিন বাদলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী’, মোশাররফ হোসেনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘দৃষ্টি’, মোস্তাফিজুর রহমানের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ভাওয়াইয়া অঙ্গন’ এবং মৈত্রী সরকারের পরিচালনায় নৃত্যসংগঠন ‘স্বপ্নবিকাশ কলা কেন্দ্র’র পরিবেশনা।
সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী লিলি ইসলাম, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, চঞ্চল খান, অণিমা রায়, কামাল আহমেদ, আশরাফ মাহমুদ, সালমা চৌধুরী, মীরা মণ্ডল, ঝুমা খন্দকার, শেলী চন্দ, ইরাবতী মণ্ডল এবং সেলিনা আলম। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন গৌতম মজুমদার (তবলা), রবিন্স চৌধুরী (কি-বোর্ড), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি), নাজমুল আলম খান (মন্দিরা) এবং রিচার্ড (গিটার)।