আর্থিক অনিয়মসহ দুর্নীতির নানা অভিযোগে শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুজন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী। একজনকে চাকরিচ্যুত এবং অন্যজনের পাঁচ বছরের জন্য পদোন্নতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। বিষয়টি জানিয়ে দুই কর্মকর্তাকেই চিঠি দিয়েছে বুয়েট প্রশাসন। চাকরিচ্যুতর নোটিশের পরও একজন কর্মকর্তা নিয়মিত অফিস করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বুয়েটের দুটি হলের ইলেকট্রিক মেইনটেন্যান্স কাজে অনিয়ম ও অস্বচ্ছতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থবিরোধী অবস্থান গ্রহণ, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ত্রুটি আড়াল করার চেষ্টা, শিক্ষার্থীদের জীবন হুমকির মুখে ফেলে দেওয়াসহ একাধিক অভিযোগ উঠে প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মুহাম্মদ আল-আমিনের বিরুদ্ধে। তদন্তে এসব অভিযোগের সত্যতা মেলায় তাকে বুয়েটের আর্থিক ক্ষতির ৭০ শতাংশ জরিমানা ও চাকরিচ্যুতের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৫৪০তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানিয়ে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি আল-আমিনকে একটি চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই দিন স্বাক্ষরিত আরও একটি নোটিশে প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ের আরেক উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কাম এস্টিমেটর মো. হামিদুল ইসলামকে বুয়েটের আর্থিক ক্ষতির ২০ শতাংশ জরিমানাসহ পাঁচ বছরের জন্য পদোন্নতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ওই চিঠিতে চাকরিচ্যুত আল-আমিনকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাবসহ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ে চিঠির জবাব না দিলে এবং জবাব সন্তোষজনক না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার চাকরিচ্যুতর সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে বলে জানানো হয়। গত ৩০ জানুয়ারি সাত দিন সময় শেষ হয়েছে। যদিও এই সময়ের মধ্যে একটি লিখিত জবাব দিয়েছেন আল-আমিন, তবে সেই জবাব সন্তোষজনক হয়েছে কি না, তা এখনো জানায়নি বুয়েট প্রশাসন।
জানতে চাইলে মোহাম্মদ আল-আমিন কালবেলাকে বলেন, ‘আমি নিয়মিত অফিস করছি। আমি এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা। আমার জবাব লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তো আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেই, তাহলে আপনারা এটা নিয়ে পড়ে আছেন কেন? দেশে তো আরও অনেক কিছু আছে, ওগুলো নিয়ে রিপোর্ট করেন। এটা নিয়ে রিপোর্ট করার কী হলো। একজন শাস্তি পাওয়ার পরও তাকে নিয়ে রিপোর্ট করে তাকে সামাজিকভাবে হেয় করা কি সাংবাদিকতার ইথিকস?’
তদন্তে আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন—এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া আমি কোনো কথা বলতে পারব না।’
আল-আমিনের চাকরিচ্যুতর বিষয়ে জানতে চাইলে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ফোরকান উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘কিছু বলা যাবে না। বলা ঠিক হবে না।’ গত ২৩ জানুয়ারির নোটিশে বলা হয়েছিল, সাত দিন পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে আল-আমিনের চাকরি চলে যাবে। তিনি চাকরিচ্যুত হয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘বিষয়টি প্রসেসিংয়ে আছে। আমাদের সিন্ডিকেট সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেবেন।’ আল-আমিন যে জবাব দিয়েছেন সেটি সন্তোষজনক কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটি বলা যাবে না।’