শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫, ৭ ভাদ্র ১৪৩২
সাইদুল ইসলাম ও আসিফ পিনন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৪, ০২:১৬ এএম
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রামে রেলের টিকিটে ডিজিটাল জালিয়াতি

অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন
চট্টগ্রামে রেলের টিকিটে ডিজিটাল জালিয়াতি

আব্দুল আজিজ। পেশায় বেসরকারি চাকরিজীবী। তার ঘরবাড়ি চট্টগ্রাম নগরীতে। আত্মীয়স্বজন সবাই এই নগরীতেই থাকেন। ট্রেনে চড়ে কখনো শহরের বাইরে যাননি তিনি। ট্রেনে না চড়লেও গত এক বছরে তার মোবাইল নম্বরের বিপরীতে ট্রেনের টিকিট কাটা হয়েছে ১৮৪ বার। এমনকি সহজের অ্যাপস-এ তার নাম রেজিস্ট্রেশন করা আছে ইসরাব উদ্দিন জোবাঈর নামে। এক বছরে তার মোবাইল নম্বরের বিপরীতে অস্বাভাবিক ট্রেন যাত্রাকে কেন্দ্র করে হঠাৎ একদিন আজিজের ডাক পড়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানায়। পরে নানা জেরা-জিজ্ঞাসাবাদের পর আজিজ পুলিশকে বোঝাতে সক্ষম হন, ইসবার উদ্দিন জোবাঈর নামে কাউকে চেনেন না তিনি। কখনো ট্রেনে চড়েননি, এমনকি রেলওয়ের কোনো কাজেও তিনি জড়িত নন।

মূলত গত ফেব্রুয়ারিতে পুলিশের জালে মো. আরিয়ান হোসাইন নামে এক টিকিট কালোবাজারিকে গ্রেপ্তারের পর তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া টিকিটের সূত্র ধরেই বেরিয়ে আসে আব্দুল আজিজের নাম। আজিজ একা নন। চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশের দীর্ঘ তদন্তে এভাবে একে একে হদিস মেলে প্রায় ৫০টি নম্বরের। যেসব নম্বরের ব্যবহারকারীরা জানেন না, তাদের নামে করা হয়েছে রেজিস্ট্রেশন। এমনকি অনেকে কোনোদিন ট্রেনেও চড়েননি। কেউ কেউ চড়েছেন জীবনে কয়েকবার। কিন্তু তাদের একেক জনের নামে ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১৮৪ বার পর্যন্ত ট্রেনের টিকিট কাটা হয়েছে।

ভুক্তভোগী আব্দুল আজিজ কালবেলাকে বলেন, ‘আমি একজন সাধারণ মানুষ। আমার বাড়ি শহরের ফিরিঙ্গীবাজারে। নানুর বাড়ি ময়মনসিংহ। বাসে চড়ে সেখানে গিয়েছি কয়েকবার। জীবনে কোনোদিন ট্রেনে চড়িনি। কিন্তু কিছুদিন আগে থানা থেকে ফোন করে আমাকে ডাকা হয়েছিল। আমি স্যারকে (পুলিশ) বলেছি, এগুলো কী বলেন স্যার? আমার জীবনে কোনোদিন একটা বেড রেকর্ড নেই। এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।’

একইভাবে ভুক্তভোগী রমজান আলী রেলস্টেশন এলাকায় একটি পানের দোকান করেন। তার বাড়ি লাকসাম। প্রতি মাসে ট্রেনে চড়ে বছরে সর্বোচ্চ ২০ বার বাড়ি যান তিনি। কিন্তু রমজান আলীর নম্বরের বিপরীতে ১৪২টি বার টিকিট কাটা হয়েছে। রেজিস্ট্রেশনে তার নাম ছিল সুমিত্র ঘোষ চৌধুরী। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘পুলিশ আমাকে ডেকেছিল। কিন্তু ওসি স্যারকে আমি বলেছি, আমি এসবে জড়িত নই। পরে নিজের রেজিস্ট্রেশন ক্যানসেল (বাতিল) করেছি। ঈদে আমি বাড়ি গেলে টিকিটও কাটাতে কষ্ট হবে।’

তদন্তে নেমে আব্দুল আজিজ ও রমজান আলীর মতো এভাবে একে একে ৫০টি মোবাইল নম্বর পুলিশের নজরে আসে। এসব নম্বর ব্যবহারকারীরা কেউই জানেন না, তাদের নম্বর ব্যবহার করে কাটা হচ্ছিল ট্রেনের টিকিট। এমনকি রেজিস্ট্রেশনের নামেও ছিল অমিল। তবে দীর্ঘ তদন্তের পর রেলের টিকিট কালোবাজারিতে ডিজিটাল জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে পুলিশের জালে।

রেলওয়ে পুলিশ জানায়, গত ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে বেশ কয়েকটি টিকিটসহ আরিয়ান নামে এক কালোবাজারিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তার কাছ থেকে উদ্ধার টিকিটগুলো যেসব নম্বরের বিপরীতে কাটা হয়েছিল, তা দেখে পুলিশের সন্দেহ আরও প্রবল হয়। এক পর্যায়ে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে সর্বোচ্চ টিকিট কাটা হয়েছে যেসব নম্বর দিয়ে সেগুলো শনাক্তের কাজ শুরু করে পুলিশ। এ সময় ৫০টি টিকিট পর্যালোচনায় রেলের টিকিট কালোবাজারিতে ডিজিটাল জালিয়াতির বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে। এরপর জালিয়াতি রোধে রেলওয়েকে তিন দফা সুপারিশ দেয় রেলওয়ে পুলিশ। সেই সুপারিশ অনুসারেই এবারের ঈদযাত্রায় রেল টিকিট কাটার ক্ষেত্রে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) চালু করে রেলওয়ে।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসি এস এম শহীদুল ইসলাম বলেছেন, ৫০টি নম্বরে যাদেরই ফোন করা হয়েছে তারাই টিকিট কাটার ব্যাপারে কিছুই জানে না বলে জানিয়েছে। পুলিশের ফোন পেয়ে কিংবা জিজ্ঞাসাবাদে অনেকেই ঘাবড়ে গেছেন। তবে তদন্তের কালোবাজারিরা ডিজিটাল জালিয়াতি কীভাবে ঘটাচ্ছে তা শনাক্তে সফল হয়েছে পুলিশ।

কালোবাজারি রোধে পুলিশের সুপারিশ যে মোবাইল ব্যবহার করে টিকিট কাটা হবে, সেই নম্বরে ওটিপি ব্যবস্থা করা; টিকিট কেনার সঙ্গে সঙ্গে রেজিস্ট্রেশন করা নম্বরে এসএমএস করা; যে নম্বর দিয়ে সিম কেনা হয়েছে সেই নম্বরটি রেলওয়ের টিকিট কেনার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার সময় এনআইডি নম্বরও যুক্ত করা।

সুফল মিলতে শুরু করেছে গত ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশের দীর্ঘ তদন্তে ডিজিটাল জালিয়াতির ঘটনাটি উঠে আসার পর চলতি মার্চে ঈদযাত্রার ট্রেনের টিকিট কাটতে ওটিপি চালু করেছে রেলওয়ে। রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন এরপর থেকে কালোবাজারি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। পাশাপাশি রেলকে ব্যবহার করে অপরাধমূলক কাজ কেউ করতে চাইলে তাও রোধ করা সম্ভব হবে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার ওটিপির সাহায্যে ঢাকা থেকে পালিয়ে আসা স্কুল পড়ুয়া দুই কিশোর-কিশোরীকে আটকের পর, পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয় পুলিশ।

রেলওয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, টিকিট কালোবাজারিতে বিভিন্ন অসংগতির পর আমরা কালোবাজারি রোধে কিছু মতামত দিয়েছিলাম। যেমন ওটিপি চালু হলে কালোবাজারি রোধ করতে সহজ হবে। এবার ঈদ যাত্রায় কালোবাজারিসহ সার্বিক পরিস্থিতি সুশৃঙ্খল রাখতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হাসিনাকে ফেরত পাঠানো নিয়ে মোদিকে ওয়েইসির প্রশ্ন

জাকসুতে প্যানেল দ্বন্দ্ব, পদত্যাগ করে বাগছাস নেতার মিষ্টি বিতরণ

সৈয়দপুর বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা আন্তর্জাতিক মানের করতে চাই : বেবিচক চেয়ারম্যান

‘আ. লীগ বিদ্যুৎ খাতে চুরির লাইসেন্স দিয়েছিল’

আ.লীগ নেত্রী রুনু গ্রেপ্তার

ইসির ইউটিউব চ্যানেল চালু, মিলবে যেসব তথ্য

শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, গ্রেপ্তারের দাবি শিক্ষার্থী

চার বিভাগে ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি, পাহাড়ধসের আশঙ্কা

ভোলায় পাঁচ দিন ২০ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, ভোগান্তি চরমে

থানা ব্যারাকে নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণ, তিনজন ক্লোজড

১০

পিআর পদ্ধতিতে সব ভোটারের মূল্যায়ন হয় : চরমোনাই পীর

১১

তিস্তায় কার্টুন বক্সে ভাসছিল নবজাতকের মরদেহ

১২

দেশের উন্নয়নে মেধাবী শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে : চসিক মেয়র

১৩

কৃষক দল সম্পাদক বাবুলের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল

১৪

চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সতর্কবার্তা / ‘সাংবাদিকরা চুপ থাকলে সমাজ অন্ধকারে ডুবে যাবে’

১৫

যেসব অনিয়মে বাতিল হবে এজেন্সির নিবন্ধন

১৬

অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে সিলেট জেলা পুলিশ অঙ্গীকারবদ্ধ : পুলিশ সুপার

১৭

বগুড়ায় সাহিত্য উৎসব শুক্রবার, অংশ নিবে দুই শতাধিক কবি

১৮

বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি রোধে নতুন নির্দেশনা

১৯

জুলাই শহীদদের স্মরণে জবিতে গ্রিন ভয়েসের বৃক্ষরোপণ ও সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন

২০
X