রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২
সুরঞ্জিত নাগ, ফেনী
প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩৬ এএম
আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বিএনপি ক্যাডার থেকে আ.লীগের বড় পদে

বিএনপি ক্যাডার থেকে আ.লীগের বড় পদে

কাশেদুল হক বাবর ছিলেন এক সময়ের বিএনপির দুর্ধর্ষ ক্যাডার। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর হন রাজাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। দলীয় মনোনয়নে রাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন। গত ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করায় ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভের মুখে পড়েছেন বাবর। বিএনপির আমলে নানা সময়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতন চালানোর বিষয়টিও সামনে এসেছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাশেদুল হক বাবর ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করলেও ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তিনি দলটিতে যোগ দেন। বাবর বিএনপিতে যোগদানের পরই তার নির্দেশে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাজাপুর ও সিন্দুরপুরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর চালানো হয় নির্যাতনের স্টিমরোলার। ঘরবাড়ি ছাড়তে হয় অনেক নেতাকর্মীকে।

বাবরের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তৎকালীন রাজাপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের ক্রীড়া ও সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক, বর্তমান উপজেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক মো. কামাল হোসেন। কালবেলাকে তিনি বলেন, ‘আমি রাজাপুর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদে বসে ছিলাম। তখন বাবরের নেতৃত্বে বিএনপির কিছু নেতাকর্মী আমার ওপর হামলা চালায় এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ ভাঙচুর করে। আমি কোনোমতে বেঁচে ফিরি। পরে বাবর আমার বাড়িতে এসে আমাকে বাড়িঘর ছাড়ার হুমকি দিয়ে যায়। তারপর আমার পরিবার রাতের আঁধারে আমাকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়। দুঃখের বিষয় হলো যার হাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের রক্ত লেগে আছে, সেই বাবর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলের পদ ভাগিয়ে নিল এবং নৌকা নিয়ে চেয়ারম্যানও হলো।’

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাবরের হাতে আরও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন মুন্সী নুরের জামান, লোকমান, শেখ আহমেদ, কুতুব উদ্দিন, বেলাল, শাহ জালাল, নুর উদ্দিন, নুর আলম, জাহাঙ্গীর, মিয়া, হুমায়ুন, মান্নান, জাহের, মহিউদ্দিন ও প্রয়াত আহছান উল্যাহ। তারা সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

বাবরের হাতে নির্যাতিত হন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মন্নান (বর্তমানে কুয়েত প্রবাসী)। তিনি বলেন, ‘বিএনপি আমলে একদিন আমি দোকানে চা খাচ্ছিলাম। তখন বাবরের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে এসে আমাকে মারধর করে এবং গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বলে।’

আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর (বর্তমান সৌদি প্রবাসী) বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে সমর্থন করার কারণে বিএনপি আমলে বাবরের নেতৃত্ব বিএনপির কিছু নেতাকর্মী আমার চায়ের দোকানে এসে মাঘ মাসের শীতে শত শত মানুষের সামনে আমাকে তিন ঘণ্টা গলা সমান পানিতে দাঁড় করে রেখেছিল। পরে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।’

আওয়ামী লীগ সমর্থক বেলাল হোসেন (বর্তমানে সৌদি প্রবাসী) বলেন, ‘বাবর আমাকে এমন নির্মমভাবে মেরেছে তা কখনো ভুলতে পারব না। আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে আমার বাবাকেও মারধর করে বাবর। সেই মাইরের যন্ত্রণা নিয়ে বাবা কবরে চলে গেছেন। আমাকে এখনো মাসে মাসে হাজার হাজার টাকার ওষুধ সেবন করতে হয়।’

নুর উদ্দীন (বর্তমানে সৌদি প্রবাসী) বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ সমর্থন করি, শুধু এ অপরাধে আমাকে বাবর ধরে এনে প্রচণ্ড মারধর শুরু করে। আমার চিৎকারে একজন বয়স্ক নারী ঝাঁপিয়ে পড়ে আমার প্রাণ রক্ষা করেন।’

এতদিন বাবরের অতীতের অত্যাচার-নির্যাতন নিয়ে ভুক্তভোগীরা ভয়ে মুখ খোলেননি। কিন্তু ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে কটূক্তি করার পর আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্যরা তার অতীতের লোমহর্ষক কাহিনি সামনে এনেছেন। তারা মনে করেন বাবর কখনোই মুজিবের আদর্শ লালন করে আওয়ামী লীগ করেনি। সে ক্ষমতা ভোগদখলের জন্যই আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে। এখন দল তাকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন না দেওয়ায় সে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করেছে। যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করতে পারে সে কখনোই আওয়ামী লীগের সমর্থক হতে পারে না। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তিকারী বাবরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা।

জানতে চাইলে কাশেদুল হক বাবর বলেন, ‘আমরা পারিবারিকভাবেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে আসছি। আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকেই আজ এ পর্যায়ে এসেছি। কখনোই বিএনপিতে যোগদান করিনি। এটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর আমি দেশের বাইরে চলে যাই। বিএনপিতে যোগ দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সব মিথ্যা ও বানোয়াট।’

তবে রাজাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘বাবর ২০০১ সালে বিএনপিতে যোগ দেন এটা শতভাগ সত্য। তিনি বিএনপিতে যোগদানের পর অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের শহীদ পরিবারকে সহযোগিতা করবে সরকার’

অসুস্থ বিএনপি নেতা ডা. রফিকের খোঁজ নিতে বাসায় জোনায়েদ সাকি

আফগানদের কাছে নাস্তানাবুদ হয়ে বাংলাদেশের সিরিজ হার

যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবল ম্যাচ শেষে এলোপাতাড়ি গুলি, নিহত ৪

চট্টগ্রামে কনসার্টে গোলাগুলি, গুলিবিদ্ধ ১

চিহ্নিত ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠানের ওপর দেওয়া উচিত নয় : বিএনপি

জবি তরুণ কলাম লেখক ফোরামের নেতৃত্বে ইমন-সোহান

এনসিপির ‘পলিসি ও রিসার্চ উইং’ গঠন, দায়িত্ব পেলেন যারা

নড়াইলে সাংবাদিকদের মিলনমেলা

‘তিন মাসের মধ্যে ৬ লেনের কাজ দৃশ্যমান হবে’

১০

শাবিপ্রবির ২৫ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ বাতিলের সিদ্ধান্ত

১১

ওমরজাইয়ের বোলিং তোপে বিপদে বাংলাদেশ

১২

প্রবীণদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে : টুকু

১৩

শুধু বক্তব্যে নয়, বাস্তব কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে বিএনপি মানুষের পাশে রয়েছে : আনোয়ারুজ্জামান

১৪

গুম-খুনে জড়িতদের সঙ্গে আপস নেই : আখতার হোসেন

১৫

বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান দুলুর

১৬

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার

১৭

গুম-দুর্নীতি বন্ধে ধানের শীষে ভোট দিন : আশিক

১৮

গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণ, ভাইয়ের পর চলে গেল বোনও

১৯

ইতিহাস গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাল নামিবিয়া

২০
X