সরকারবিরোধী আন্দোলনে অবসান হয় শেখ হাসিনার দীর্ঘ দেড় যুগের শাসনামল। ক্ষমতা থেকে বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ দেশের রাজনীতিতে হয়ে পড়েছে অপাঙক্তেয়। যদিও ক্ষমতা থেকে বিদায় ও রাজনীতিতে ধরাশায়ী হওয়ার পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকে দাবি করছে আওয়ামী লীগ।
চব্বিশের ঘটনাপঞ্জিতে আওয়ামী লীগের বিদায় আলোচিত ঘটনা তো বটেই, বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসেও নতুন অধ্যায়ের অবতারণা করেছে। এই সময়কে ‘কালো আঁধার’ আখ্যা দিয়ে আগামী বছরে রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর আশাবাদ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
স্বাধীনতার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিয়োগান্তক হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগ সবচেয়ে কোণঠাসা অবস্থায় পড়েছিল দাবি করা হয়। তবে এবারের বিষয়টিকে আলাদা ভাবেই মূল্যায়ন করছেন বিশ্লেষকরা। ১৯৭৫-এর পর রাজনৈতিক বিরূপ সময়েও দলের হয়ে কথা বলার মতো নেতারা দেশে থেকে প্রতিবাদ করেছেন, সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা প্রতিবাদী কর্মকাণ্ডে হয়েছেন হামলা ও গ্রেপ্তারের শিকার। কিন্তু ২০২৪ সালের ধরাশায়ী আওয়ামী লীগের হয়ে কথা বলার মতো কোনো কেন্দ্রীয় নেতা দেশে নেই, এমনকি সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও দেশ ছেড়েছেন। অল্পসংখ্যক কয়েকজন নেতা দেশে থাকলেও আছেন আত্মগোপনে। আবার অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধুমাস না পেরোতেই দানা বাঁধে কোটা আন্দোলন। আর তাতেই একদফা আন্দোলনের ফসল হিসেবে প্রধানমন্ত্রীত্ব পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে দলের দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তি দলের সাধারণ ওবায়দুল কাদের আত্মগোপনে থেকে পাড়ি জমান ভারতে। একইভাবে কেন্দ্রীয় নেতারাসহ সহযোগী সংগঠনের বর্তমান ও সাবেকরাও আশ্রয় নেন পার্শ্ববর্তী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে দলের হাল ধরেছিলেন বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা। নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে দীর্ঘ ২১ বছর পর। ২০০১ সালে নির্বাচনে পরাজয়ের মাধ্যমে বিরোধী দলে থেকে আবারও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয় লাভ করে। কিন্তু ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে ক্ষমতায় থেকে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করলেও রুখতে পারেননি দুর্নীতি। একটি চক্র অর্থ পাচারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়। এরই বহিঃপ্রকাশ গত ৫ আগস্ট। ধরাশায়ী হয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দলটি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জড়িতদের ওপর আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও ক্ষমতাসীনদের দমন-পীড়নে ফুঁসে ওঠে দেশবাসী। আহত-নিহতের ঘটনা ঘটে অনেক। চূড়ান্ত দিনে হেলিকপ্টারে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় লুট হয়ে যায়, দখলে নেয় ছাত্র-জনতা। ভষ্ম করে দেওয়া হয় স্বাধীনতার আঁতুড়ঘর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি, ছাই হয়ে যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের অনেকে শিকার হন ‘মব জাস্টিসের’।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের ভাষ্য, ‘পরিকল্পিত’ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে আওয়ামী লীগ। দেশবাসী উপলব্ধি করছে, আর এতে নিহিত রয়েছে জনগণের আগামীর রাজনৈতিক পরিকল্পনা।