অন্য আট-দশ দিনের মতোই চলছিল সবকিছু। শিশু সন্তানদের জন্য স্কুল প্রাঙ্গণে অপেক্ষা করছিলেন অভিভাবকরা। এর মধ্যেই আচমকা বিপর্যয় নেমে আসে তাদের জীবনে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চোখের নিমিষে পুড়ে যায় অনেকের স্বপ্ন। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গতকাল সোমবার দুপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাজধানীর দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি দোতলা ভবনে আছড়ে পড়ে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। এতে বৈমানিকসহ নিহত হয় ২০ জন। আহত দেড় শতাধিক।
দুর্ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও, যার অনেক আবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি। এসব ছবি ভিডিও দেখে আঁতকে ওঠেন অনেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ছবি-ভিডিও ভুক্তভোগী পরিবারসহ অন্যদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে থাকা অনেকের ফোনে ধারণ করা ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, দগ্ধ ও ঝলসানো শরীর নিয়ে শিক্ষার্থীরা ভবন থেকে বের হয়ে আসছে। অনেক শিক্ষার্থীকে উপস্থিত অভিভাবক ও ব্যক্তিরা উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাচ্ছে, যাদের অনেকের শরীর আগুনে ঝলসে গেছে। দুর্ঘটনায় আহত অনেক শিক্ষার্থীর ইউনিফর্ম পুড়ে তাদের ঝলসানো চামড়া বেরিয়ে আসার দৃশ্যও দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে।
এসব ছবি ও ভিডিও দেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই এগুলো শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা বলছেন, বাচ্চাদের এমন ভয়াবহ অবস্থা দেখার মতো নয়। অনেকে বলছেন, এসব দৃশ্য দেখে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তারা। আবার অনেকে এসব ছবি ভুক্তভোগী অভিভাবক ও আত্মীয়দের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আয়েশা মাহমুদা কালবেলাকে বলেন, এরকম বড় ধরনের দুর্ঘটনা এবারই প্রথম। এই ঘটনায় নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের যেসব বিকৃত ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে, তা দীর্ঘমেয়াদি মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে। বিশেষ করে যারা বেঁচে ফিরবে তারাসহ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের জন্য এসব ছবি মানসিক চাপ তৈরি করবে। ফলে এসব ঘটনা ছবি ভিডিও এড়িয়ে যতটা লিখিত আকারে বর্ণনা করা যায়, ততই ভালো। আর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাদের বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের মানসিক সাহায্য দেওয়া এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
অন্যদিকে বিমান বিধ্বস্তের পর শোক ও সমবেদনা জানাতে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী এআই দিয়ে তৈরি ছবি শেয়ার করছেন, যা দুর্ঘটনার ভয়াবহতা ও মাত্রা নিয়ে অনেককেই বিভ্রান্তিতে ফেলছে।
ফ্যাক্ট চেকার কদরুদ্দিন শিশির কালবেলাকে বলেন, এই দুর্যোগের মুহূর্তে এআই দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ছবি মানুষকে সঠিক তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তিতে ফেলে, যা দুর্যোগকালীন সহায়তা পেতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। অনেকে এই ধরনের ছবি পোস্ট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টাকা আয় করতে চায়। এগুলো খুবই ক্ষতিকর।
মন্তব্য করুন