সন্ধ্যার পর বাজার থেকে ঘরে ফিরে এক মাস বয়সী শিশুকন্যা রুকাইয়াকে কোলে নিয়ে খেলা করছিলেন বাবা মাসুম চৌধুরী। রুকাইয়ার মা রান্নাঘরে রাতের খাবার তৈরি করছিলেন। হঠাৎ ঘরের পেছন দিয়ে ভয়ংকর শোঁ শোঁ শব্দ শুনতে পেয়ে চিৎকার শুরু করেন তাহমিনা।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহূর্তের মধ্যে কোমরসমান পানি ঢুকে যায় ঘরে। তাহমিনা ও তার শাশুড়ি পারুল আক্তার স্রোতে প্রায় ভেসে যাচ্ছিলেন। শক্ত হাতে তাদের ধরে ভেসে যাওয়া থেকে রক্ষা করেন বসতভিটা ও কৃষিজমি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া মাসুম।
এমন নির্মম গল্পটি ফেনীর পরশুরাম উপজেলার পশ্চিম অলকা গ্রামের মাসুম চৌধুরীর। গত ৮ জুলাই রাতে ভয়াবহ বন্যায় মুহুরী নদীর ভাঙনে ঘর-বসতভিটাসহ সবকিছু বিলীন হয়ে যায়।
মাসুম চৌধুরী ফেনী ফালাইয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল (মাস্টার্স) ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্টের অপেক্ষায় রয়েছেন। তার ছোট ভাই পরশুরাম সরকারি ডিগ্রি কলেজে স্নাতকে অধ্যয়নরত। মাসুম পড়ালেখার পাশাপাশি চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকার একটি মসজিদে ইমামতি করেন। সামান্য আয় দিয়েই চলে তার সংসার এবং নিজের ও ভাইয়ের পড়ালেখা।
থাকার ঘরটি জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ায় মায়ের লালন-পালন করা একটি গরু বিক্রি এবং স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়ে জুনের শেষের দিকে টিনশেডের একটি ঘর নির্মাণ করেছিলেন মাসুম। এক মাস যেতে না যেতেই নদীভাঙনে সেই ঘরটি চিরতরে হারিয়ে যায়।
মাসুম চৌধুরী বলেন, ‘বন্যা শেষ হয়েছে এক মাস হয়ে গেছে। এখনো স্ত্রী-সন্তান-মাকে নিয়ে পাশের বাড়ির বারান্দায় দিন কাটাচ্ছি। নতুন ঘর বাঁধার মতো সামর্থ্য নেই। আগের কিস্তির টাকাও পরিশোধ করতে পারিনি। ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে।’
মাসুম আরও বলেন, ‘শুধু বসতঘর নয়, আমাদের দুই ভাইয়ের আবাদি ৫০ শতাংশ কৃষিজমিও ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয়স্থলটুকু নিয়ে গেছে সর্বনাশা বন্যার পানি। মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া নতুন করে বেঁচে থাকার আর কোনো সুযোগ নেই।’
মন্তব্য করুন