রাজকুমার নন্দী
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দুঃসময়েও নেতাকর্মীদের বেঁধেছেন এক সুতায়

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি : সংগৃহীত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি : সংগৃহীত

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দলের মূল নেতৃত্বে আসেন তারেক রহমান। এসেই লক্ষ্য নির্ধারণ করেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার। এরপর ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দল এবং দেশকে তিনি এখন গণতন্ত্রে উত্তরণের একেবারে দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকের অনেকে। বিএনপির এখন মূল লক্ষ্য আগামী জাতীয় নির্বাচন। এমন অবস্থায় নির্বাচন, নির্বাচন-পরবর্তী সরকার গঠন এবং গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে রাষ্ট্র পরিচালনায় বিএনপি যে গুণগত পরিবর্তন আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, তার সবকিছুই আবর্তিত হবে তারেক রহমানকে ঘিরে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন তারেক রহমানের দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন। তাদের প্রত্যাশা, দেশে ফিরে আগামী নির্বাচনে তিনিই মাঠের নেতৃত্ব দেবেন। নেতাকর্মীদের এমন প্রত্যাশার মধ্যে আজ সোমবার বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর লন্ডন থেকে দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তপশিল ঘোষিত হবে। এদিকে ওয়ান-ইলেভেন সরকার এবং পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রায় ৮২টির মতো মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মামলায় তিনি দণ্ডিত হন। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইনি প্রক্রিয়ায় একে একে সব মামলা থেকে মুক্ত হন তারেক রহমান।

ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ গ্রেপ্তার হন তারেক রহমান। পরের বছর ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য ১১ সেপ্টেম্বরে সপরিবারে যুক্তরাজ্যের লন্ডন যান তিনি। কিন্তু ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া একটি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাবন্দি হলে দলের প্রয়োজনে তারেক রহমান মূল নেতৃত্বে আসেন। বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে সেদিনই তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। এরপর লন্ডনে থেকেই স্থায়ী কমিটির সঙ্গে পরামর্শক্রমে দল পরিচালনা করছেন তারেক রহমান।

তারেক রহমান বিএনপির মূল নেতৃত্বে আসার পর এখন পর্যন্ত দেশে দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। দলটির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও দিনের ভোট রাতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রার্থীদের ওপর পরিকল্পিত হামলা-নির্যাতন এবং প্রশাসন পুরোপুরি সরকারি দলের পক্ষ নেয়। এসব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ওই নির্বাচনে বিএনপিকে মাঠে দাঁড়াতেই দেওয়া হয়নি।

বিএনপির নেতাকর্মীদের মতে, প্রহসনের ওই নির্বাচনের পরপরই দমে না গিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য নির্ধারণ করেন তারেক রহমান। সে অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেন। সংগঠনকে একেবারে তৃণমূল থেকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করেন। এরপর জনগণকে সংগঠিত করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নামেন। তবে আওয়ামী লীগের পতনের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় বিএনপির নেতাকর্মীদের জেল-জুলুম, হামলা-মামলা, গুম-খুন ও গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তবু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে তারেক রহমানের নেতৃত্বে অটল থেকেছে বিএনপি। যদিও দল ভাঙারও চেষ্টা হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে দলটির একটি অংশকে ভোটে আনার চেষ্টা করে আওয়ামী সরকার। কিন্তু তারেক রহমানের দূরদর্শিতা এবং সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণে সরকারের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। বিএনপি নেতাদের মতে, এমন প্রতিকূল অবস্থায়ও নেতাকর্মীদের এক সুতায় বেঁধে রেখে দলকে সুসংহত রেখেছেন তারেক রহমান।

জানা যায়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে দলের কৌশল কী হবে, সেটাও তারেক রহমান নিজেই সেট করেন। দলকে সামনের সারিতে না রেখে কৌশলে নেতাকর্মী বিশেষ করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সারা দেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাঠে রেখে অভ্যুত্থান সফলের কারিগর হিসেবে তিনি বিএনপির ভেতরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।

গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে ৫ আগস্টের পর দলে শৃঙ্খলা রক্ষা এবং ইমেজ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারেক রহমান। বাবা ও মায়ের হাতে গড়া দল বিএনপি যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে সদা সজাগ ও সতর্ক তিনি। তাই আওয়ামী শাসনামলে অত্যাচার-নির্যাতনে দলের ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পাশে বন্ধুর মতো থাকা সে তারেক রহমানই ৫ আগস্টের পরে অত্যন্ত কঠোর সাংগঠনিক অবস্থান গ্রহণ করেন। বিতর্কিত কর্মকাণ্ড তথা সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তারেক রহমানের নির্দেশে সারা দেশে দল ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের চার হাজারের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বহিষ্কারসহ নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পাশাপাশি অনেকের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়, যা ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।

তারেক রহমান মনে করেন, আগামী নির্বাচন অত্যন্ত কঠিন হবে। তাই মানুষের পাশে থেকে ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের মন জয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। একই সঙ্গে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আকারে বিএনপির ৩১ দফার প্রচারণা চালানোরও নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী, দেশব্যাপী বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা ৩১ দফার প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন।

বিএনপির এখন লক্ষ্য জাতীয় নির্বাচন। বিএনপি বিদ্যমান পদ্ধতিতেই নির্বাচন চাইলেও জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি দল পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি অব্যাহত রেখেছে। কেউ কেউ আবার বলছেন, পিআর না হলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। এমন অবস্থায় সরকারকে সহযোগিতা করতে কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনের পথে নেওয়া যায়, সেটাই এখন তারেক রহমানের মূল লক্ষ্য বলে দলের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে কীভাবে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত করা যায়, সেটা নিয়েও কাজ করছেন। পাশাপাশি আগামীতে জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে বিএনপি সরকার গঠন করলে ৩১ দফার ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ে কীভাবে সাধারণ মানুষের ভাগ্য ও জীবনমানের উন্নয়ন করা যায়, বেশ আগে থেকেই কাজ করছেন তা নিয়েও। এককথায় বিএনপির মাধ্যমে অতীতের মতো আগামীতেও যাতে দেশবাসী উপকৃত হয়—এ জন্য প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি দিন দলের পেছনে ব্যয় করছেন তারেক রহমান।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশে তিনবার গণতন্ত্র মহাসংকটে পড়েছে, প্রতিবারই গণতন্ত্র উত্তরণে জিয়া পরিবার অর্থাৎ কখনো বাবা, কখনো মা, কখনো ছেলে শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে। সর্বশেষ ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গণতন্ত্র সংকটে পড়ে। বাবা-মায়ের ধারাবাহিকতায় এই দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানেও তারেক রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বর্তমানে তারেক রহমানের হাত ধরে দেশের গণতন্ত্র উত্তরণের প্রচেষ্টা চলছে, সেই লড়াইটা একটা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে শেষ হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এনবিআরের সহকারী কমিশনার জান্নাতুল ফেরদৌস বরখাস্ত

সকাল ৯টার মধ্যে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে যেসব জেলায় 

‘কার্টা ব্লু’ ভিসা নিয়ে বাংলাদেশিদের সতর্ক করল ইতালি

যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা ড. মুজিবের ছেলের বিয়েতে সস্ত্রীক তারেক রহমান 

আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে ব্যাপক হতাহত, হেফাজতের শোক ও সহায়তার আহ্বান

দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন কর্মসূচি দিল ছাত্রদল

বনানীর সেলসিয়াস সিসা লাউঞ্জে পুলিশের অভিযান

অবশেষে মাদক সম্রাজ্ঞী আ.লীগ নেত্রী স্বপ্না আক্তার আটক

সর্বদলীয় বৈঠক শেষে ফেরার পথে জাগপা সভাপতিকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম

আদাবরে পুলিশের ওপর কিশোর গ্যাংয়ের হামলা

১০

নাটোরে ডা. আমিরুলকে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি ড্যাবের

১১

গাজীপুরের কমিশনারের দায়িত্ব থেকে সরানো হলো নাজমুল করিমকে

১২

একাত্তরে ভুল করেছেন, এখনো ভুলের রাজনীতিতে আছেন : টুকু

১৩

দুই কিংবদন্তি অলরাউন্ডার সাকিব ও সিকান্দারকে ‘এক’ করলেন জুলফিকার!

১৪

বিএনপিকে এনসিপির শুভেচ্ছা / ‘আমরা তর্কবিতর্ক করব কিন্তু পারস্পরিক সৌহার্দ্য থাকবে’

১৫

পুরো সেপ্টেম্বরের পূর্বাভাস জানাল আবহাওয়া অফিস

১৬

নদীতে জাল ফেলা নিয়ে দ্বন্দ্বে হামলা, জেলের মৃত্যু

১৭

ক্ষমা চাইলেন রিটকারীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া সেই শিক্ষার্থী

১৮

আহত চবি শিক্ষার্থীদের দেখতে চমেকে শাহজাহান চৌধুরী

১৯

জাঁকজমক আয়োজনে রুয়েটে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন

২০
X