কক্সবাজারের এক সময়ের নৌবন্দর ও বাণিজ্যকেন্দ্র বাঁকখালী নদী দখল ও দূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এবার নদী উদ্ধারে শুরু হয়েছে উচ্ছেদ অভিযান।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সদর উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার শারমিন সুলতানার নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও বিআইডব্লিউটিএর যৌথ দল এ অভিযান শুরু করে।
এর আগে ৩১ আগস্ট প্রশাসন মাইকিং করে দখলদারদের সরতে বললে রাতারাতি অনেকে জিনিসপত্র সরিয়ে নেয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) দায়ের করা মামলার রায়ে হাইকোর্ট উচ্ছেদ নির্দেশ দিলে এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
কক্সবাজার শহরের পশ্চিম পাশে কস্তুরাঘাট একসময় প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল। এখানে ৩০০ একরের বেশি প্যারাবন ধ্বংস করে ও নদী ভরাট করে তৈরি হয়েছে শত শত স্থাপনা। শুধু কস্তুরাঘাট নয়, নুনিয়ারছড়া থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকায় গড়ে উঠেছে সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা। আজ থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ যৌথভাবে এগুলো উচ্ছেদে নেমেছে।
বিআইডব্লিউটিএর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. খায়রুজ্জামান বলেন, সব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে। তালিকাভুক্ত দখলদারদের মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগের নেতা মুজিবুর রহমান, রাশেদুল ইসলাম, পৌর বিএনপি সভাপতি রফিকুল হুদা চৌধুরী ও এবি পার্টির নেতা জাহাঙ্গীর কাশেম। তবে রফিকুল দাবি করেছেন এগুলো তার পৈতৃক সম্পত্তি।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে উৎপন্ন হয়ে ৮১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাঁকখালী নদী বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। নুনিয়ারছড়া থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত অংশে সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে। ২০২৩ সালে এক অভিযানে চার শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও ফের সেখানে নতুন দখল শুরু হয়।
স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা বলছেন, প্রতিদিন কক্সবাজার শহরে ৯৭ টন বর্জ্যের মধ্যে প্রায় ৭০ টনই ফেলা হয় নদীতে, ফলে নদীর বুক ভরে উঠেছে ময়লায়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে দ্রুততম সময়ে নদী দখলমুক্ত করা হবে এবং পরে সীমানা নির্ধারণ করা হবে। গত ২৪ আগস্ট আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, চার মাসের মধ্যে সব স্থাপনা উচ্ছেদ ও ছয় মাসের মধ্যে নদীটিকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করতে হবে।
সদর এসিল্যান্ড শারমিন সুলতানা কালবেলাকে জানান, আগামী পাঁচ দিনের মধ্যেই দখলদারদের সরানো হবে এবং নদীকে আগের অবস্থায় ফেরাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।
মন্তব্য করুন