কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:২৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাক্ষাৎকার

অলিগার্কমুক্ত, ব্যবসাসহায়ক অর্থনীতি প্রত্যাশা করি

মো. ফজলুল হক
অলিগার্কমুক্ত, ব্যবসাসহায়ক অর্থনীতি প্রত্যাশা করি

প্লামি ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল হক ২০০৪-১০ পর্যন্ত ছিলেন নিট পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি। কাজ করেছেন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশনের (আইএএফ) পর্ষদ সদস্য হিসেবে। এ ছাড়া এফবিসিসিআই, সার্কের সিসিআই, আইসিসি বাংলাদেশসহ অন্য ব্যবসায়িক সংগঠনেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বাংলাদেশ সরকার ও নিট পোশাক শিল্পের প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন সম্মেলন, সেমিনার ও ফোরামে অংশ নিয়েছেন। দেশের রপ্তানি খাতের বর্তমান অবস্থা, সংকট, সম্ভাবনা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনীয় সংস্কার নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেছেন মো. ফজলুল হক

বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের ওপর অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে। বিদ্যমান রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কি আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখায় নাকি এখন কাঠামোগত পরিবর্তনের সময় এসেছে?

মো. ফজলুল হক: আমাদের রপ্তানির পরিসংখ্যান খুব একটা ভালো নয়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে আমাদের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক। তবে আমরা যারা এ খাতের সঙ্গে সরাসরি জড়িত, মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, প্রকৃত অবস্থা সরকারি পরিসংখ্যানের চেয়ে কিছুটা বেশি খারাপ। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। মোটা দাগে বলা যায়, পরিস্থিতি খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। এর পেছনে একটি বড় কারণ হলো আন্তর্জাতিক বাজারে অর্থনৈতিক মন্দা। ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা ও চাহিদা দুটোই কমে

গেছে। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে পিৎজা হাটের ৬২টি শাখা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ, মানুষের হাতে এখন অতিরিক্ত খরচ করার মতো অর্থ কমে গেছে। তারা এখন বাইরের খাবারের চেয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। পোশাকের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে। বাসস্থান ও চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণের পর মানুষ পোশাক বা অন্য বিলাসজাত পণ্যে খরচ করে। বর্তমানে বিশ্বজুড়েই ক্রেতারা এ অতিরিক্ত খরচ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পোশাকের বিক্রি কমেছে। তবে এটি একটি বৈশ্বয়িক চক্র। প্রতি আট-দশ বছর পরপর অর্থনীতিতে এমন পরিস্থিতি আমরা দেখতে পাই। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ বা স্থানীয় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

বড় কোনো কাঠামোগত পরিবর্তনের চেয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এখন বেশি জরুরি। এর সঙ্গে কাঠামোগত সংস্কারের কিছু সংযোগ থাকতে পারে। যেমন, আমাদের প্রচলিত বাজারের বাইরে নতুন বাজার খোঁজার ব্যাপারে আরও আন্তরিক হতে হবে। আমাদের রপ্তানিকারকদের মধ্যে অনেকেই সহজ বাজারে সহজে পণ্য রপ্তানি করতে চান, যা একদিক থেকে স্বাভাবিক। ইউরোপ বা আমেরিকায় ক্রেতা খুঁজে পাওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ এবং আমাদের যোগাযোগও বেশ ভালো। কিন্তু এই গণ্ডি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের পাশাপাশি পণ্যের বৈচিত্র্য আনা জরুরি।

কালবেলা: আপনি নতুন বাজার বলতে ঠিক কোন অঞ্চলগুলোর কথা বলছেন এবং সেখানে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জগুলো কী?

মো. ফজলুল হক: নতুন বাজার বলতে আমরা মূলত এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার দেশগুলোর কথা ভাবতে পারি। এসব দেশে একটি ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি হচ্ছে, যাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। কিন্তু এ বাজারগুলোতে প্রবেশে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, ভাষা ও সংস্কৃতির ভিন্নতা। দ্বিতীয়ত, সেখানকার ব্যবসায়িক রীতিনীতি এবং আইনকানুন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের অভাব। তৃতীয়ত, লজিস্টিকস এবং কানেকটিভিটি এখনো ইউরোপ বা আমেরিকার মতো উন্নত নয়। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায় থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে। দূতাবাসগুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে এবং রপ্তানিকারকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

কালবেলা: বর্তমান সরকার অর্থনৈতিক সংস্কারে অনেক কমিশন গঠন করেছে এবং নানা পদক্ষেপের কথা বলছে। কিন্তু বাণিজ্য বা ব্যবসার ক্ষেত্রে কি কোনো সংস্কারের প্রয়োজন নেই?

মো. ফজলুল হক: আমরা প্রায় ১৫ মাস ধরেই সংস্কারের কথা শুনছি। কিন্তু যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে বা যেগুলো নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে, সেগুলোর ফল খুব একটা সুখকর নয়। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি প্রাত্যহিক জীবনে এমন কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখছি না, যা আমাদের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সরকারি কর্মকর্তাদের জিজ্ঞেস করলে হয়তো তারা সংস্কারের দীর্ঘ একটি তালিকা দেবেন, কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে তার কোনো গুরুত্ব নেই। কারণ ফল নেই।

অনেকের অভিযোগ হলো, বর্তমান সরকার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি বেশ উদাসীন। একজন মুমূর্ষু রোগী হাসপাতালে বেঁচে আছে, তাতেই আমরা খুশি—আমাদের অবস্থাটা অনেকটা এরকম। দেশের অর্থনীতি কোনোভাবে চলছে, এতেই হয়তো নীতিনির্ধারকরা সন্তুষ্ট। কিন্তু অর্থনীতিকে কীভাবে আরও গতিশীল করা যায়, কীভাবে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেই বিষয়ে গভীর কোনো গবেষণা বা উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। আমরা একটি অলিগার্কমুক্ত, ব্যবসার জন্য সহায়ক এবং কার্যকর অর্থনীতি প্রত্যাশা করেছিলাম, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আমরা দেখিনি।

তবে একটি দৃশ্যমান উদ্যোগের কথা বলতেই হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বড় ধরনের আর্থিক লুটপাট ও অর্থ পাচার রোধে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। এটি অর্থনীতির অনেক উপাদানের মধ্যে একটি, যা অর্থনীতিকে বেগবান করতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। কিন্তু এটিই শেষ কথা নয়। এর বাইরে ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত যে কেউ—হোক সে রপ্তানিকারক বা স্থানীয় উৎপাদক—জিজ্ঞেস করলে আপনি একটি সাধারণ উত্তরই পাবেন যে, পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। এ ক্ষেত্রে বোধহয় দলমত নির্বিশেষে সবাই একমত।

কালবেলা: যে অলিগার্কমুক্ত ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশের আশা করা হয়েছিল, যেখানে প্রভাবশালী একটি শ্রেণির কারণে ভালো ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেতেন না, সেই পরিস্থিতির কি কোনো পরিবর্তন হয়েছে?

মো. ফজলুল হক: আমার তা মনে হয় না। ভালো সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার চেয়েও বড় বিষয় হলো ব্যবসার পরিবেশকে আরও মসৃণ ও ব্যবসাবান্ধব করা। আমরা আশা করেছিলাম, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ আরও নিরবচ্ছিন্ন হবে, তা হয়নি। সরকারের উদাসীনতার একটি উদাহরণ দিই। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের চার্জ ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর পেছনে যুক্তি দেখানো হচ্ছে, গত তিন দশকে এ চার্জ বাড়েনি। এটি কি আদৌ কোনো যৌক্তিক সিদ্ধান্ত? তিনবেলা না খেয়ে চতুর্থবার একসঙ্গে সব খাবার খেলে যে অবস্থা হয়, আমাদের অবস্থা তাই হয়েছে।

যখন আমরা সবদিক থেকে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, ঠিক তখনই এক লাফে এমন চার্জ বৃদ্ধি কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। এ বৃদ্ধি পর্যায়ক্রমে করা যেত। প্রতি তিন বা পাঁচ বছর পরপর একটি যৌক্তিক হারে বাড়ালে তা কারও জন্যই কষ্টকর হতো না। কিন্তু হঠাৎ করে ৪০০ শতাংশ চার্জ বৃদ্ধি সরকারের অভিভাবকসুলভ আচরণের পরিচয় নয়। একইভাবে, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুতির তেমন কোনো উদ্যোগ নেই, শুধু আমাদের রপ্তানি উৎসাহিত করার জন্য যে ইনসেনটিভ দেওয়া হতো, তা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, যে পদক্ষেপগুলো ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, সেগুলো নিতে সরকার দ্বিধা করছে না। যে কোনো কারণেই হোক, সরকার ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি গতিশীল করার ক্ষেত্রে এ খাতটিকে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে না। এর পেছনের কারণ আমার জানা নেই। তবে মাঠপর্যায়ের একজন কর্মী হিসেবে এবং আমার পরিচিত মহলের আলোচনার ভিত্তিতে আমার ধারণা, এ খাতটি কোনো না কোনোভাবে সরকারের কাছে অবহেলিত।

কালবেলা: ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে, বহু শ্রমিক বেকার হয়েছেন। কিন্তু আমরা নতুন কর্মসংস্থান কিংবা নতুন বিনিয়োগের কোনো উদ্যোগ দেখছি না। এ পরিস্থিতি কি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই মনে করছেন? নাকি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে?

মো. ফজলুল হক: পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারখানা বন্ধ হওয়া এবং নতুন কারখানা চালু হওয়া একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তবে ৫ আগস্টের পর বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হওয়ার পেছনে কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ ছিল। একটি বড় কারণ হলো, যেসব ব্যবসায়ী পলাতক বা কারাবন্দি, তারা তাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দিতে পারেননি। এর ফলে বেশ কিছু বড় কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

এর বাইরে স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কারণেও কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। অনুকূল পরিবেশেও সবাই সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে না; এটা ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনার ওপরও নির্ভর করে। তাই সবকিছুর জন্য সরকারকে দোষ দেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য যে মৌলিক বিষয়গুলো প্রয়োজন—যেমন, অর্থায়নের সুযোগ ও সুশাসন; সেগুলোর কোনো ক্ষেত্রেই গত ১৫ মাসে উন্নতি হয়নি।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট। বিশেষ করে বেশ কিছুদিন ধরে বিদ্যুতের অবস্থা খারাপ। গ্যাসের পরিস্থিতি আগের চেয়ে কিছুটা উন্নত হলেও নতুন গ্যাস সংযোগ পাওয়া প্রায় অসম্ভব। আবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়টিও সবসময় আলোচনার মধ্যে থাকে। সব মিলিয়ে এ পরিবেশ নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য মোটেও ইতিবাচক নয়।

বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে কিছু নতুন কারখানা চালু হয়েছে। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে, এগুলো নতুন বিনিয়োগ নয়। একটি কারখানা চালু হতে দুই-তিন বছর সময় লাগে। সুতরাং, গত এক বছরে যে কারখানাগুলো চালু হয়েছে, সেগুলোর পরিকল্পনা ও নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল আরও দুই-তিন বছর আগে। নতুন বিনিয়োগের প্রকৃত চিত্র বোঝা যায় কয়েকটি সূচক থেকে। সেগুলোর অবস্থাও ইতিবাচক নয়। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ এখন নিম্নগামী, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির পরিমাণও নিম্নগামী। এসব সূচকই বলছে যে, দেশে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না।

কালবেলা: আপনি সুনির্দিষ্ট কিছু সূচকের কথা বললেন, যেমন বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে যাওয়া। এ সূচকগুলো অর্থনীতির জন্য কতটা আশঙ্কাজনক সংকেত বহন করে এবং এর থেকে উত্তরণের উপায় কী?

মো. ফজলুল হক: এ সূচকগুলো অর্থনীতির জন্য একটি অশনিসংকেত। যখন মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যায় এবং বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ সংকুচিত হয়, তখন শিল্প সম্প্রসারণ থমকে যায় এবং নতুন উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহ হারান। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য একটি স্থিতিশীল এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। আপনি দেখেছেন, সম্প্রতি একটি ব্যবসায়ী গ্রুপ চাঁদাবাজির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে। এর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ এবং ব্যাংক থেকে ঋণের প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা মানসিকভাবে স্বস্তি বোধ না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। অনেকেই মনে করছেন, একটি নির্বাচিত সরকার আসার পরই পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। আমিও তাদের সঙ্গে একমত। কারণ, একটি নির্বাচিত সরকারের জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকে। বর্তমান সরকারের মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে, তাই এ অল্প সময়ে বড় কোনো পরিবর্তনের আশা আমি করছি না। নতুন বিনিয়োগ-সংক্রান্ত প্রত্যাশাটি আমি নতুন সরকারের কাছেই রাখতে চাই।

কালবেলা: সরকার সম্প্রতি কয়েকটি সংস্থাকে একীভূত করার উদ্যোগের কথা বলছে। এ পদক্ষেপকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

মো. ফজলুল হক: পরিস্থিতির উন্নতি না করে কয়েকটি সংস্থাকে একীভূত করলে জটিলতা বাড়বে ছাড়া কমবে না। প্রথমত, এতে কাজের পরিধি অনেক বড় হয়ে যাবে, যা সামলানো কঠিন হবে। আমাদের দেশের সরকারি অফিসের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, একীভূতকরণ মানেই দক্ষতা বৃদ্ধি নয়। বিডা গঠনের মূল প্রতিশ্রুতি ছিল ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ দেওয়া, যা তারা আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি। যে সংস্থা তার নিজের প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করতে পারছে না, তাকে আরও বড় করে দিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। এর চেয়ে উচিত ছিল কীভাবে প্রকৃত ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ নিশ্চিত করা যায়, সেদিকে মনোযোগ দেওয়া।

কালবেলা: সম্প্রতি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রপ্তানিকারকদেরও পণ্য ছিল সেখানে। এ ঘটনাটি আমদানি-রপ্তানিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন?

মো. ফজলুল হক: এ ঘটনার প্রভাব সুদূরপ্রসারী এবং বহুমাত্রিক। রপ্তানির জন্য আমাদের কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। ক্ষতিগ্রস্ত কার্গো ভিলেজে মূলত আমদানি করা পণ্যই বেশি ছিল। বাণিজ্য উপদেষ্টা যদিও বলেছেন রপ্তানি কার্গো অক্ষত আছে কিন্তু আমার কাছে খবর আছে যে, রপ্তানি পণ্যেরও ক্ষতি হয়েছে।

ক্ষতির পরিমাণটা শুধু অর্থমূল্যে বিচার করলে হবে না। ধরা যাক, ১০ হাজার ডলারের আমদানি করা পণ্য পুড়ে গেছে। কিন্তু ওই পণ্যের অভাবে হয়তো এক মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আদেশ আটকে যেতে পারে। করোনার সময় আমার নিজেরই এমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল। ৩ হাজার ডলারের লেবেল এইচএস কোড জটিলতায় আটকে থাকায় আমার দেড় মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সুতরাং, ৩০০ কোটি টাকার মালপত্র সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর পরোক্ষ অর্থনৈতিক প্রভাব কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

প্রথমত, এ পণ্যগুলো আবার আমদানি করতে হবে, যাতে খরচ এবং সময় দুটোই বেশি লাগবে। এ বাড়তি সময় ক্রেতারা আমাদের দেবেন কি না, তা একটি বড় প্রশ্ন। যদি সময় দেনও, তাহলে হয়তো আকাশপথে পণ্য পাঠানোর শর্ত জুড়ে দেবেন, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সবচেয়ে আতঙ্কজনক বিষয় হলো, এ ক্ষতিপূরণ নিয়ে সরকারের উদাসীনতা। ক্ষতিগ্রস্তদের শুধু পণ্যের অর্থমূল্য দিলেই হবে না, কারণ এর বহুমাত্রিক প্রভাব রয়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টার বক্তব্য শুনে আমি খুব একটা আশাবাদী হতে পারছি না যে, ক্ষতিপূরণের বিষয়টি দ্রুত সুরাহা হবে।

এ ঘটনাটি আমাদের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এটি দেশের প্রধানতম বিমানবন্দর, কোনো গুরুত্বহীন জায়গা নয়। ভাবুন তো, এই আগুন যদি আজ কোনো গার্মেন্টস কারখানায় লাগত, তাহলে পরদিনই মালিককে গ্রেপ্তার করা হতো, তার পাসপোর্ট জব্দ করা হতো। কিন্তু এখানে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? এখানেই দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য। এটি অব্যবস্থাপনার একটি চরম উদাহরণ।

কালবেলা: ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতারা এখন ‘সাসটেইনেবল সোর্সিং’ ও ‘কার্বন নিউট্রাল সাপ্লাই চেইন’-এর দিকে ঝুঁকছেন। বাংলাদেশের পোশাক খাত এ পরিবর্তনের জন্য কতটা প্রস্তুত?

মো. ফজলুল হক: এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। আমাদের দেশে প্রায় ২৬০টি ইউএসজিবিসি সার্টিফায়েড ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি’ রয়েছে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। এ কারখানাগুলোতে কার্বন নিঃসরণ কমানো, পানির অপচয় রোধ করার মতো বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেমন, আমার নিজের কারখানাতেই অন্যদের তুলনায় ৪০ শতাংশ কম পানি ব্যবহার করা হয়। তবে এ সাফল্য নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। কারণ, এ ‘গ্রিনিং’ মূলত কারখানাগুলোর অবকাঠামো বা বিল্ডিংকেন্দ্রিক হয়েছে। আমাদের পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়াকে এখনো পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব করা যায়নি। দেশে সচল কারখানার সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। এর মধ্যে মাত্র ২৬০টি কারখানা গ্রিন সার্টিফায়েড। অনেক ছোট ও মাঝারি কারখানা রয়েছে, যারা সচেতনতার অভাবে বা আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে এ পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছে না।

এ ক্ষেত্রে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে একটি বড় সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে হবে। এরপর ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলোকে এ পরিবর্তনে যুক্ত করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নীতিসহায়তা বা আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে। উন্নত বিশ্বের ক্রেতাদের এ চাহিদা দিন দিন বাড়বে। এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই।

কালবেলা: আমাদের আলোচনায় একটি বিষয় উঠে এসেছিল যে, আমাদের রপ্তানির মনোযোগ মূলত ইউরোপ এবং আমেরিকার বাজারে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য, লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা, এমনকি এশিয়ার দেশগুলোতেও সম্ভাবনাময় বাজার রয়েছে। আমরা সেদিকে কেন যাচ্ছি না? সেখানে কি আদৌ কোনো সম্ভাবনা আছে?

মো. ফজলুল হক: সম্ভাবনা অবশ্যই আছে এবং তা বিশাল। পোশাকের চাহিদা পৃথিবীর সবখানেই। এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষের বাস। শুধু এশিয়ার চারটি বড় বাজার চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত—বিবেচনা করলেই এর বিশালত্ব বোঝা যায়। এ দেশগুলোর অর্থনীতি উন্নত বা দ্রুত বর্ধনশীল এবং জনসংখ্যাও বিপুল। তবে এ বাজারগুলোতে প্রবেশ করতে না পারার পেছনে আমাদের কিছু ঘাটতি রয়েছে। প্রথমত, একটি নতুন বাজার তৈরির জন্য যে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা, নিয়মিত যোগাযোগ এবং ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার মতো উদ্যোগ দরকার, সেগুলোর অভাব রয়েছে। দ্বিতীয়ত, একটি মানসিকতার বিষয়ও আছে। ইউরোপ বা আমেরিকার ক্রেতারা বাংলাদেশের ওপর যতটা সহজে আস্থা রাখেন, এশিয়ার দেশগুলোর ক্রেতাদের মধ্যে সেই আস্থার জায়গাটি এখনো কিছুটা দুর্বল। এ আস্থা আমাদেরই তৈরি করতে হবে।

সবচেয়ে বড় কারণ হলো, আমরা রপ্তানিকারকরা একটি ‘কমফোর্ট জোন’ বা সহজ বাজারে কাজ করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। ইউরোপ ও আমেরিকার বাজার এরই মধ্যে উন্নত, সেখানকার ক্রেতারা আমাদের চেনে এবং সেখানে নতুন করে আস্থা তৈরির প্রয়োজন পড়ে না। ওইসব দেশে আমাদের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক যোগাযোগও বেশ ভালো। কিন্তু লাতিন আমেরিকার মতো দূরের বাজারে যোগাযোগ ব্যবস্থা ততটা সহজ নয়।

এ অচলায়তন ভাঙতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। শুধু একটি মেলায় অংশগ্রহণ করা বা একবার একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর মতো বিচ্ছিন্ন উদ্যোগে কাজ হবে না। আমার নিজের একটি অভিজ্ঞতা বলি। ২০১০ সালে আমি যখন বিকেএমইএর সভাপতি ছিলাম, আমরা জাপানকে লক্ষ্য করে বছরমেয়াদি একটি পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। আমরা জাপানে গিয়েছি, সেখানকার ক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি, তাদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এর ফলস্বরূপ, জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ক্রেতা প্রতিনিধিদলটি (৬২টি প্রতিষ্ঠান) সে বছর আমাদের দেশে এসেছিল এবং পরবর্তীকালে আমরা জাপানের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধাও পেয়েছিলাম।

এ অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমরা যদি চীন, জাপান, ভারত ও কোরিয়ার মতো দেশগুলোকে লক্ষ্য করে তিন থেকে পাঁচ বছরমেয়াদি একটি ধারাবাহিক পরিকল্পনা নিতে পারি, তাহলে সাফল্য আসবেই। কারণ, ইউরোপ-আমেরিকার মতো কঠিন ও সংবেদনশীল বাজারে যদি আমরা আধিপত্য বিস্তার করতে পারি, তাহলে এ বাজারগুলোতে না পারার কোনো কারণ নেই।

কালবেলা: দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা আপনি বলছেন, এ ক্ষেত্রে সরকার, ইপিবি এবং বিজিএমইএ-বিকেএমইএর মতো বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের ভূমিকাটি ঠিক কেমন হওয়া উচিত?

মো. ফজলুল হক: এখানে একটি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সরকারের দায়িত্ব হলো কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা শুরু করা এবং বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএর মতো বিষয়গুলোতে নেতৃত্ব দেওয়া। দূতাবাসগুলোর কমার্শিয়াল উইংগুলোকে আরও সক্রিয় হতে হবে এবং সম্ভাব্য ক্রেতাদের সঙ্গে রপ্তানিকারকদের সংযোগ ঘটিয়ে দিতে হবে। ইপিবি (রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো) বাজার গবেষণা, মেলার আয়োজন এবং ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আর বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর মতো সংগঠনগুলোকে নেতৃত্ব দিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করতে হবে—যেমনটা আমরা জাপানের ক্ষেত্রে করেছিলাম। অর্থাৎ, প্রতিনিধিদল পাঠানো, ক্রেতাদের আমন্ত্রণ জানানো এবং দুপক্ষের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক তৈরি করা। এ তিনটি পক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া নতুন বাজারে প্রবেশ করা অত্যন্ত কঠিন।

কালবেলা: যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বাণিজ্যনীতি বাংলাদেশের জন্য কতটা ঝুঁকি তৈরি করছে?

মো. ফজলুল হক: ‘ঝুঁকি’ শব্দের চেয়ে আমি ‘অনিশ্চয়তা’ শব্দটি ব্যবহার করতে চাই। মার্কিন বাণিজ্যনীতি, বিশেষ করে এর শুল্ক কাঠামো, খুবই অস্থিতিশীল। সম্প্রতি বিভিন্ন পণ্যের ওপর যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তার চূড়ান্ত ভার কিন্তু মার্কিন ক্রেতাদের ওপরই পড়ছে। এর ফলে তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। আমার পরিচিতদের কাছ থেকে শুনছি, মায়ামির মতো শহরে নামকরা দোকান ও রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কারণ, মানুষ খরচ কমিয়ে দিয়েছে।

যখন মানুষের হাতে অর্থ কমে যায়, তখন তারা পোশাকের মতো পণ্যের পেছনে খরচ কমায়। ফলে আমাদের রপ্তানির ওপর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে বিষয়টি আরও জটিল। এ শুল্ক নীতির কারণে চীন বা ভারতের মতো দেশগুলো যদি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তার কিছু সুবিধা বাংলাদেশ পেতে পারে। আবার উল্টোটাও হতে পারে। চীন বা ভারত সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ইউরোপের বাজারে আরও আগ্রাসীভাবে প্রতিযোগিতা করতে পারে, যা আমাদের প্রতিষ্ঠিত বাজারেও প্রভাব ফেলবে। তাই পুরো পরিস্থিতিটিই এখন এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে।

কালবেলা: এ বাণিজ্য অনিশ্চয়তার মুখে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য আপনার পরামর্শ কী? ঝুঁকি কমাতে বা সম্ভাব্য সুযোগ কাজে লাগাতে তাদের কোন কৌশলগুলো গ্রহণ করা উচিত?

মো. ফজলুল হক: প্রথম এবং প্রধান কৌশল হলো বাজারের বৈচিত্র্যকরণ, যা নিয়ে আমরা আগেই কথা বলেছি। একটি বাজারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, পণ্যের মানে এবং কমপ্লায়েন্সে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না, কারণ সংকটময় সময়ে ক্রেতারা সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারীকেই বেছে নেন। তৃতীয়ত, সাপ্লাই চেইনকে আরও দক্ষ করতে হবে, যাতে লিড টাইম (পণ্য সরবরাহের সময়) কমানো যায়। এবং চতুর্থত, চীন বা ভারতের ওপর আরোপিত শুল্কের কারণে কোনো সুযোগ তৈরি হচ্ছে কি না, সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে এবং দ্রুত সেই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

কালবেলা: বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা, অর্থাৎ চীন, ভারত, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে টানাপোড়েন চলছে, তার মধ্যে ভারসাম্য রেখে বাণিজ্য পরিচালনা করা কতটা চ্যালেঞ্জিং?

মো. ফজলুল হক: এ ভারসাম্য রক্ষার চ্যালেঞ্জটি মূলত সরকারের। আমরা যারা বেসরকারি খাতে ব্যবসা করি, তাদের জন্য বিষয়টি ততটা জটিল নয়। আমি চীনে রপ্তানি করছি, নাকি আমেরিকায় বা ব্রাজিলে, তা নিয়ে আমাদের কেউ প্রশ্ন করে না। বেসরকারি খাত সবসময় দেখে গুণগত মান এবং দাম। এ দুটির সমন্বয়ে যেখানে সেরা সুযোগ পাওয়া যায়, উদ্যোক্তারা সেখানেই যান, যতক্ষণ না কোনো দেশের ওপর সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

মাঝেমধ্যে সরকারি অনুরোধে বা পরিস্থিতি সামাল দিতে বেসরকারি খাতকে কিছু পদক্ষেপ নিতে হয়। যেমন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামেও সেখান থেকে পণ্য আমদানি করেছেন। কিন্তু এটি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়। দিন শেষে, ব্যবসা তার নিজস্ব বাণিজ্যিক যুক্তিতেই চলে। ভূরাজনৈতিক বিবেচনার চেয়ে বাণিজ্যিক লাভের বিষয়টিই বেসরকারি খাতের কাছে প্রাধান্য পায়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চলচ্চিত্রে অবদানের স্বীকৃতি পেলেন পরিচালক এইচ আর হাবিব

গণঅভ্যুত্থানের গণআকাঙ্ক্ষাই হলো সুষ্ঠু নির্বাচন : মাসুদ সাঈদী

হাসপাতালে মালাইকা অরোরা

সুন্দরবনে দস্যু বাহিনীর অস্ত্র সরবরাহকারী রহিম আটক

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত জানালেন শিক্ষা উপদেষ্টা

তানজিদের ব্যাটে নতুন ইতিহাস

শত বছরের ‘হাইত’ উৎসবে মাছ শিকারিদের ঢল

বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্লাস বেহিলস হোটেলের সফট ওপেনিং ১৫ নভেম্বর

ঘরের সাধারণ এই ৬ খাবারই দূর করবে আপনার অনিদ্রা

মেডিকেল ট্যুরিজমে চমক এনেছে সুহা ট্র্যাভেলস থাইল্যান্ড

১০

সুদান / এল ফাশেরে ১৪ হাজারের বেশি বেসামরিক নিহত

১১

কারোর চাহিদা বিবেচনায় শাপলা কলি যুক্ত করা হয়নি : ইসি সচিব

১২

বসুন্ধরার আই ব্লকে উদ্বোধন করা হলো ‘হেরিটেজ সুইটস’র ২য় শাখা

১৩

সরকারি অফিসে শেখ মুজিবের ছবি টাঙানোর বিধান ইস্যুতে বিএনপির ক্ষোভ

১৪

চকরিয়ার ৮০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই

১৫

এসএসসির ফরম পূরণের তারিখ ঘোষণা

১৬

জকসুতে নতুন ১০ পদ সংযোজনের দাবি ছাত্রদলের

১৭

চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচন স্থগিত করলেন আদালত

১৮

বিইউএফটিতে ‘ভয়েসেস ফর প্যালেস্টাইন : এ সলিডারিটি ইভেন্ট’ অনুষ্ঠিত 

১৯

বিশ্ববাজারে আবার বাড়ল স্বর্ণের দাম

২০
X