

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) ২০২৫‑২৬ ও ২০২৬‑২৭ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল আদালতে বিষয়টি শুনানি হয়। আগামী শনিবার ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা থাকলেও আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে ভোট আপাতত অনির্ধারিত সময় পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।
চেম্বারের ভোট প্রক্রিয়া অনুযায়ী সাধারণ সদস্যদের মধ্যে ১২ জন, সহযোগী শ্রেণিতে ছয়জন এবং টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপে প্রতিটি শ্রেণিতে তিনজন করে পরিচালক নির্বাচিত হন। নির্বাচিত পরিচালকরা পরবর্তী সময়ে সভাপতি ও দুই সহসভাপতি নির্বাচন করেন। এবারের নির্বাচনে টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপে মোট ছয়জন পরিচালক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল।
চেম্বারের পক্ষ থেকে করা সংক্ষিপ্ত তদন্তে ৮টি ট্রেড ও টাউন গ্রুপকে অকার্যকর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ৪টি টাউন অ্যাসোসিয়েশন হলো- পটিয়া, বোয়ালখালী, হাটহাজারী ও রাঙ্গুনিয়া। চারটি ট্রেড গ্রুপ হলো- চট্টগ্রাম ক্ষুদ্র পাদুকা শিল্পমালিক গ্রুপ, চট্টগ্রাম টায়ার টিউব ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস, চিটাগাং ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার, এবং চিটাগাং মিল্ক ফুড ইমপোর্টার্স।
গত ২২ সেপ্টেম্বর এক ব্যবসায়ী রিট দায়ের করেন, যার ভিত্তিতে উচ্চ আদালত দুই শ্রেণিকে বাদ রেখে নির্বাচন পরিচালনার নির্দেশ দেন। এরপর ২২ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আপিল করেন। শুনানি শেষে আদালত দুই সপ্তাহের জন্য নির্বাচনে স্থগিতাদেশ দেন। হাইকোর্টে রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভোট প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে।
নির্বাচনের প্রতিযোগিতা এবারে তীব্র ছিল। সাধারণ সদস্য পদে ৪৮ জন প্রার্থী ১২টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অ্যাসোসিয়েট বিভাগে ১৭ জন লড়ছেন। অন্যদিকে, টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ব্যাবসায়িক গোষ্ঠী বিভাগে এক‑একজন মনোনয়ন পেয়েছেন, তাই কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়াই নির্বাচিত হবেন। মনোনয়নপত্র যাচাই প্রক্রিয়ায় ৭১টি আবেদনপত্রের মধ্যে ৩৫টি বাতিল হয়েছে।
রিটকারীর পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী জানিয়েছেন, সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল আদালত হাইকোর্টে দায়ের হওয়া রিট দুই সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, হাইকোর্টে রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভোট স্থগিত থাকবে।
চেম্বারের পক্ষ থেকে ১ নভেম্বর তারিখে ভোটগ্রহণের তফশিল ঘোষণা করা হয়েছিল। নির্বাচনের জন্য স্থান হিসেবে চট্টগ্রাম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার নির্ধারণ করা হয়েছিল। মোট ২৪টি পরিচালক পদ রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি সাধারণ, ৬টি অ্যাসোসিয়েট, ৩টি ব্যাবসায়িক গোষ্ঠী ও ৩টি টাউন অ্যাসোসিয়েশন। চেম্বারের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, নির্বাচিত পরিচালকরা সভাপতি ও সহসভাপতি পদে পরবর্তী দুই বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন।
সিসিসিআই নির্বাচন ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ব্যাবসায়িক সম্প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত নির্বাচন ও সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে চেম্বার ব্যাবসায়িক নীতি, শিল্প উন্নয়ন এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে এই কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
সিসিসিআই নির্বাচনের স্থগিতাদেশ চেম্বারের সদস্য ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, আদালত দ্রুত রিট নিষ্পত্তি করে ভোট প্রক্রিয়া পুনরায় কার্যকর করবেন। নির্বাচনের মাধ্যমে চেম্বারের সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচিত হলে তারা ব্যাবসায়িক সম্প্রদায়ের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
এস এম নুরুল হক (প্যানেল লিডার) বলেন, আমরা তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছি বৈষম্যগুলো সমাধান ও বাতিল করার জন্য। যা আমরা চেয়েছিলাম, তা আদালত বিচার-বিশ্লেষণ করে বাতিল করেছেন এবং লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
শাহাজাহান মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, গত তিনদিন ধরে হাইকোর্টে কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে। সাবেক এমপি লতিফ সাহেবের স্বজনরা এবং তার কাছের কিছু গ্রুপ ভুলভাবে জায়গা দখল করছে। এই কার্যক্রম তদন্ত করলে পরিষ্কারভাবে বুঝা যাবে।
মন্তব্য করুন