

ময়মনসিংহের নান্দাইলে শত বছরের ঐতিহ্য হাইত উৎসব পালিত হয়েছে। হাইত উৎসবে বলদা বিলে ঢল নামে মাছ শিকারিদের।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ভোরে নান্দাইল সদর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বলদা বিলে আনন্দগণ পরিবেশে হাজারো মানুষের মাছ ধরার মিলন মেলা ‘হাইত উৎসব’ আয়োজনে পরিণত হয়েছে। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকা ও আশপাশের হাজারো মানুষজন জড়ো হতে থাকে বলদা বিলের পাশে। কারো হাতে পলো, কারো হাতে জাল- সবার অপেক্ষা মাছ শিকার।
হাইত উৎসবে মাছ শিকার করতে ভোর থেকে হাজার হাজার শৌখিন মাছ শিকারি তাদের জাল-পলোসহ মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে হই-হুল্লোড়ের এ আনন্দ আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন। হাইত উৎসবে স্থানীয়রাও তাদের দূর-দূরান্ত থেকে আসা আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের নিয়ে হই-হুল্লোড় করে ফজরের নামাজের পর থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত বলদা বিলে মাছ শিকার করেন।
গ্রামবাসীরা জানান, গত এক সপ্তাহ আগে থেকে হাইত উৎসবে মাছ ধরার জন্য বিভিন্ন এলাকার মাছ শিকারিদের জানানো হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়। এমন খবর পেয়ে বুধবার রাতেই বলদা বিলের আশপাশে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে রাত্রিযাপন করেন। বৃহস্পতিবার ফজরের পর থেকে মাছ শিকারিরা বলদা বিলে জড়ো হন।
প্রতি বছর আশ্বিন মাসের শেষে কার্তিক মাসের মধ্যে বলদা বিলের খাল-বিল, জলাশয়ে পানি কমে হাঁটু সমান, কোন কোন ক্ষেত্রে কোমর সমান হয়ে এলে ‘হাইত উৎসবে’র আয়োজন করেন এলাকার মানুষজন। দিনক্ষণ ঠিক করে এলাকায় প্রচারণার মাধ্যমে হাইত উৎসব করে।
হাইত উৎসবে মাছ শিকারিরা পলো, ঠেলা জাল, খড়াজাল, ডুবা ফাঁদ, চাঁইসহ বিভিন্ন রকম সরঞ্জাম নিয়ে মাছ শিকার করতে বিলে নেমে পড়েছে। বিলের দুপাশে বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী-পুরুষরা হাইত উৎসবের মাছ শিকার দেখছে। বিলের আশপাশে-এ যেন এক অন্যরকম আনন্দ বিরাজ করছে। তবে এ বছর নিষিদ্ধ কারেন্ট ও নেট জাল দিয়ে মাছ নিধন করায় মাছ শিকারিরা বেশি মাছ শিকার করতে পারেনি।
উত্তর চ্লীপাশা গ্রামের এরশাদ বলেন, এখন বিলগুলোতে আর আগের মতো মাছ নেই। তাই হাইত আগের মতো জমেও না। তবু হাইত আয়োজনের খবর পেলে দূর-দূরান্ত থেকে দলে দলে মাছ শিকারিরা আগের দিনই বিলপাড়ে জড়ো হয়। ছেলে-বুড়ো রাত জেগে বসে থাকে ভোর হওয়ার আশায়। আলো ফুটলেই একসঙ্গে সবাই বিলে নেমে পড়ে মাছ ধরতে। তারপর যত না মাছ ধরা হয়, তার চেয়ে বেশি হয় আনন্দ-উল্লাস।
হাইত উৎসবে মাছ শিকার করতে আসা উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের বাসিন্দা সুমন মিয়া বলেন, আগের মত হাইত উৎসবের আনন্দ নেই। বর্তমানে কিছু কিছু অঞ্চলে গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে গ্রামের মুরব্বিরা হাইত উৎসবের আয়োজন করে। তবে মাছ শিকারিরা তেমন মাছ শিকার করতে পারিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, প্রায় একশত বছর ধরে আমাদের বাপ-দাদারা বলদা বিলে অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে হাইত উৎসবের আয়োজন করে আসছে। আশপাশের ঈশ্বরগঞ্জ, তাড়াইল, হোসেনপুর, কেন্দুয়া উপজেলা থেকে মাছ শিকার করতে আসে। তবে আগের মতো আনন্দ নেই হাইত উৎসবে।
এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন কালবেলাকে বলেন, প্রতিবছরই বলদা বিলে উৎসবমুখর পরিবেশে বাওয়া উৎসব হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও সাতসকালেই পলো, জাল, জালি হাতে ছোট-বড় প্রায় হাজারখানেক মানুষ এই বিলে নেমে পড়েছে মাছ ধরতে। নতুন প্রজন্মের জন্য এসব ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে।
মন্তব্য করুন