

বিমা খাতে একচ্যুয়ারি সংকট নিরসন ও দক্ষ জনবল তৈরিতে উদ্যোগ নিয়েছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এ লক্ষ্যে গঠন করা হবে একচ্যুরিয়াল ইনস্টিটিউট, একচ্যুরিয়াল বোর্ড অব স্ট্যান্ডার্ড সেটিং ও একচ্যুরিয়াল কাউন্সিল। আইডিআরএর সূত্রে জানা গেছে, এ-সংক্রান্ত ‘একচ্যুরিয়াল অর্ডিন্যান্স ২০২৫’-এর খসড়া ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া হয়েছে। এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) অনুমোদন দিলে নতুন কাঠামোর আওতায় ৩টি প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম শুরু করবে।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ভবনে আয়োজিত ‘বিমা শিল্পে তরুণদের কর্মসংস্থান : একচ্যুয়ারি পেশার বিকাশ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য জানান আইডিআরএর চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলম।
তিনি বলেন, বিমা খাতে টেকসই উন্নয়নের জন্য একচ্যুয়ারিয়াল পেশাজীবীদের কোনো বিকল্প নেই। এই পেশা শুধু বিমা নয়, পুরো আর্থিক খাতের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে শক্ত ভিত্তি দেয়। একচ্যুয়ারি পেশা এমন একটি বিশেষায়িত ক্ষেত্র, যেখানে গণিত, পরিসংখ্যান ও অর্থনীতির মডেল ব্যবহার করে ভবিষ্যতের আর্থিক ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা নিরূপণ করা হয়। এটি মূলত বিমা শিল্প, পেনশন তহবিল ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্ভাব্যতার বিশ্লেষণের মাধ্যমে একচ্যুয়ারিরা ভবিষ্যতের ঝুঁকি গাণিতিকভাবে নির্ধারণ করেন, যা নতুন বিমা পণ্য ডিজাইন, প্রিমিয়াম নির্ধারণ ও দাবি নিষ্পত্তিতে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি দেয়। উন্নত দেশে এই পেশা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ও উচ্চ আয়ের হিসেবে বিবেচিত।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিআরএর সদস্য (প্রশাসন) মো. ফজলুল হক। মুখ্য আলোচক ছিলেন একচ্যুয়ারি ড. মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন। আলোচনায় অংশ নেন একচ্যুয়ারি আফরিন হক, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সাঈদ আহমেদ, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের মো. ইমাম শাহীন এবং পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সিইও বি এম ইউসুফ আলী।
বর্তমানে দেশের বিমা খাতে কার্যরত একচ্যুয়ারি পেশাজীবীর সংখ্যা মাত্র চার থেকে পাঁচজন, যার মধ্যে কেবল দুজন দেশে অবস্থান করছেন, বাকিরা বিদেশে থেকে কাজ করছেন।
ড. মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন বলেন, একচ্যুয়ারি ছাড়া বিমা শিল্প কার্যকরভাবে চলতে পারে না। অথচ এখনো অনেক কোম্পানি অনুমাননির্ভর পণ্য তৈরি করছে। অতীতে একচ্যুয়ারি তৈরির কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় অনেকেই বিদেশে চলে গেছেন।
আইডিআরএর সাম্প্রতিক পদক্ষেপের প্রশংসা করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, সব কোম্পানি যদি আইডিআরএকে সহযোগিতা করে, তাহলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশেই দক্ষ একচ্যুয়ারি তৈরি সম্ভব হবে।
দেশে কর্মরত তরুণ একমাত্র একচ্যুয়ারি আফরিন হক বলেন, স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে একচ্যুয়ারি পেশা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। আমাদের দেশে বাবা-মায়েরা ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার পেশাকেই বেশি গুরুত্ব দেন, ফলে একচ্যুয়ারি পেশা সম্পর্কে আগ্রহ গড়ে ওঠেনি।
বর্তমান বিমা আইন ২০১০ অনুযায়ী, জীবনবিমা খাতে একচ্যুয়ারির নিয়োগ বাধ্যতামূলক হলেও সাধারণ বিমা (নন-লাইফ) খাতে তা নয়। এ প্রসঙ্গে ড. সোহরাব উদ্দীন বলেন, নন-লাইফ খাতেও একচ্যুয়ারি বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন, কারণ এটি বিজ্ঞানভিত্তিক পণ্য ও প্রিমিয়াম নির্ধারণে অপরিহার্য।
আইডিআরএর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব উদ্যোগে তিনজন অ্যাকচুয়ারি ট্রেইনি অফিসার তৈরির কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, যা পরবর্তীতে তাদের পূর্ণাঙ্গ একচ্যুয়ারি হতে সহায়তা করবে। এই উদ্যোগ সফল হলে বিমা খাতের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও পণ্য উদ্ভাবনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য করুন