

স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে বাংলাদেশ এখনো স্বাস্থ্য খাতে একের পর এক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ প্রচেষ্টায় ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস’ (বিইউএইচএস) একটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন করল। এটি শুধু দেশের প্রথম বেসরকারি স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়; বরং চিকিৎসা খাতে দক্ষ মানবসম্পদ গঠনের সম্ভাবনাময় এক জায়গা।
স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার—এ চেতনা থেকেই ২০১২ সালে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় বিইউএইচএস। সরকারি প্রচেষ্টার পর দেশের বৃহত্তম স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এই সংগঠনের উদ্যোগটি যেন ছিল জনস্বাস্থ্যের আকাশে এক উজ্জ্বল তারা। কারণ, প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল ছাড়া স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন কখনোই পূর্ণতা পেতে পারে না।
আজ সেই স্বপ্নের বৃক্ষ ফল দিচ্ছে। প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী এরই মধ্যে বিইউএইচএস থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে দেশ-বিদেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। ইউনেসকো, ইউনিসেফ, ডব্লিউএইচও, সেভ দ্য চিলড্রেন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ও আইসিডিডিআর,বি—এমন নানা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে তারা কর্মরত। কেউ কেউ নিজেরাই গড়ে তুলছেন নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র, কেউ আবার বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল ও পিএইচডি গবেষণায় নিয়োজিত। বিইউএইচএস তাই শুধু শিক্ষা নয়, কর্মমুখী জীবনের এক সোপান।
ঢাকার ব্যস্ত নগরের মাঝে সবুজে ঘেরা প্রশান্ত এক প্রাঙ্গণ—সেই স্থানেই দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস। এখানে জ্ঞানচর্চা ও মানবকল্যাণ এক সূত্রে গাঁথা। আধুনিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের সঙ্গে প্রযুক্তি ও গবেষণার সমন্বয় ঘটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের উচ্চশিক্ষা জগতে এক নবপ্রভাতের সূচনা করেছে।
চারটি অনুষদ—বেসিক সায়েন্সেস, পাবলিক হেলথ, অ্যালায়েড হেলথ সায়েন্সেস এবং হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি-এর আওতায় বর্তমানে ১২টি অনার্স ও ১৪টি মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। শিগগির যুক্ত হতে যাচ্ছে ফার্মেসি অনুষদ, যা এই প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক পরিসরকে আরও প্রসারিত করবে। ফলে বিইউএইচএস এখন চিকিৎসাবিদ্যার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, জনস্বাস্থ্য নীতি, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে।
এ অগ্রযাত্রার পেছনে মূল প্রেরণা এর শিক্ষকবৃন্দ—দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা অধ্যাপক ও গবেষকরা এখানে পাঠদান ও গবেষণায় যুক্ত আছেন। তাদের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন আন্তর্জাতিকমানের পাঠক্রম, গবেষণার সুযোগ এবং বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর গবেষণানির্ভর শিক্ষা। জনস্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য প্রযুক্তি ও বেসিক সায়েন্সের নানা গবেষণা এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যৌথ প্রচেষ্টায় প্রকাশিত হচ্ছে অসংখ্য গবেষণাপত্র, যা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য গবেষণাকে নতুন মর্যাদায় উন্নীত করছে। আধুনিক স্থাপত্য, ডিজিটাল লাইব্রেরি, উন্নত ল্যাবরেটরি ও গবেষণাগার—সব মিলিয়ে বিইউএইচএস হয়ে উঠেছে শিক্ষার আধুনিকতম আবাস।
বিইউএইচএস আজ গবেষণামুখী ও কর্মমুখী শিক্ষার প্রতীক। তিনি বলেন, ‘গুণগত শিক্ষা ও গবেষণার সমন্বয় ঘটিয়েই আমরা তৈরি করতে পারব আগামী দিনের দক্ষ মানবসম্পদ—যাদের অবদানেই উচ্চতর মর্যাদায় পৌঁছাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত।’
স্বাস্থ্যসেবার এ বৈপ্লবিক সময়ে বিইউএইচএস যেন এক দীপ্ত আলোকবর্তিকা—যেখান থেকে জন্ম নিচ্ছে নতুন প্রজন্মের গবেষক, উদ্ভাবক ও নেতৃত্ব। আগামী দিনে স্বাস্থ্য প্রকৌশল, জনস্বাস্থ্য নীতি ও ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণায় এ বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উৎকর্ষের কেন্দ্র হয়ে উঠবে—এমনই প্রত্যাশা সবার।
উপাচার্য, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস
মন্তব্য করুন