বাঙালির খাবারের টেবিলে যতই বৈচিত্র্য আসুক—বিরিয়ানি, কাচ্চি, পাস্তা, নুডলস কিংবা পিজ্জা—দিনের শেষে ভাত ছাড়া যেন পেটও ভরে না, মনও তৃপ্ত হয় না। এই চিরন্তন খাদ্যসংস্কৃতির আবেগ, মজার দ্বন্দ্ব আর সামাজিক বাস্তবতা নিয়েই নির্মিত হয়েছে কমেডি নাটক ‘সবার উপরে ভাত’। নিলয় আলমগীর ও জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি অভিনীত নাটকটি ইউটিউবে মুক্তির ১০ দিনের মাথায় দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে—ভিউ সংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ ছাড়িয়েছে। এসএমসির সেনসেশন নিবেদিত নাটকটি প্রকাশিত হয়েছে কালবেলা ড্রামা ইউটিউব চ্যানেলে।
নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ওবায়দুল—একজন অকৃত্রিম ভাতপ্রেমী। বিরিয়ানি, কাচ্চি বা পাস্তা—সব খাওয়ার পরও তার ভাত না হলে যেন খাবার শেষ হয় না। তবে এই অতিরিক্ত ভাতপ্রেম তার প্রেমিকার কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বরং তিনি চেষ্টা করেন প্রেমিককে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে ‘ভাতের নেশা’ থেকে মুক্ত করতে। এখান থেকেই শুরু হয় প্রেমিক-প্রেমিকার মজার খুনসুটি, পরিবারের হস্তক্ষেপ আর সামাজিক অবস্থান নিয়ে হাস্যকর সব পরিস্থিতি।
নাটকের গল্প লিখেছেন ও পরিচালনা করেছেন মাইদুল রাকিব। তার ভাষায়, ‘ভাত বাঙালির কাছে শুধু খাবার নয়, এটি একটি আবেগ, একটি পরিচয়। খাবারের বৈচিত্র্য যতই আসুক—ভাতের জায়গা এখনো অটুট।’
নায়িকা হিমি বলেন, ‘আমার বাবার চরিত্রের সঙ্গে নিলয় ভাইয়ের চরিত্রের মিল আছে। আমরা যতই বাইরে খাই না কেন, দিনশেষে বাবার জন্য ভাত চাই-ই চাই!’
নিলয় আলমগীর বলেন, ‘নাটকটির গল্পে ভাত কেন্দ্র করে যে হাস্যরস তৈরি হয়েছে, তা প্রতিটি বাঙালি পরিবারেরই অংশ। এমনিতে আমি ফুডি না হলেও এ নাটকের জন্য প্রচুর খেতে হয়েছে এবং বেশ আনন্দ নিয়েই খেয়েছি।’
নিলয় ও হিমির পাশাপাশি নাটকে অভিনয় করেছেন শহীদ উন নবী, রত্না খান, আল-আমিন দুর্রানী, আশরাফুল আলম সোহাগ ও তুহিন। শুটিং হয়েছে ঢাকার উত্তরার বিভিন্ন লোকেশনে।
বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন থেকে শুরু করে শহুরে টেবিল পর্যন্ত ভাতের উপস্থিতি অটুট। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি, চাল উৎপাদন ও বাঙালির সাংস্কৃতিক ইতিহাসে ভাতের স্থান গভীরভাবে প্রোথিত। তাই ভাত শুধু খাবার নয়—এটি সামাজিক মর্যাদা, পারিবারিক অভ্যাস এবং আত্মপরিচয়ের অংশ।
নাটকটি ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দর্শকের প্রতিক্রিয়া এসেছে ঝরঝরে মন্তব্যে। একজন লিখেছেন, ‘বাংলার মানুষের ভাত পছন্দ।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘যাই হোক, ভাত ছাড়া জীবন চলে না।’ হাস্যরসের মাঝেই এসেছে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা—‘ভাত খেতে খেতেই নাটকটা দেখলাম।’ আরেক ভক্তের মন্তব্য, ‘জানি না ভাত এখানে কার কার পছন্দ, কিন্তু আমার তো সবসময় ভাত পছন্দ। অন্য কিছু খেলে পেট ভরে না। যদি জামাইয়ের সাথে হোটেলে খেতে যাই, সেখানেও আমি ভাত খাই। জামাই অন্য কিছু খায়, সে বলে ভাত ছাড়া কিছু খাও, কিন্তু আমার যে অন্য কিছু খেলে পেট ভরে না।’
কেউ কেউ নাটক দেখে খাওয়ার ইচ্ছে বেড়ে যাওয়ার কথা বলেছেন—‘নাটকটি দেখে পেঁয়াজ, শুকনো মরিচ, ভর্তা আর ডিমভাজি দিয়ে পান্তা ভাত খেতে ইচ্ছে করছে।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘এই নাটক দেখে খাওয়ার ইচ্ছে দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।’
আবেগঘন প্রতিক্রিয়াও এসেছে। এক নেটিজেন লিখেছেন, ‘আমার আম্মুও ভাত-মাছ ভালোবাসতেন। এখন আর তিনি নেই। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।’
‘সবার উপরে ভাত’ কালবেলা ড্রামার তৃতীয় প্রযোজনা। ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি নাটকই ইউটিউবে বিপুল দর্শকপ্রিয়তা পাচ্ছে। নাটকপ্রেমীরা শুধু গল্প নয়, এর সংলাপ, পরিস্থিতি এবং চরিত্র নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব আলোচনা করছেন।
যুগের পরিবর্তন, ফাস্টফুড সংস্কৃতি আর নানান নতুন রেসিপি কি ভাতের আধিপত্য কমাতে পারবে? নাটকটি যেন রসিকতার ছলেই তার উত্তর দিয়েছে—বাঙালির পাতে ভাতের স্থান চিরকালই ‘সবার উপরে’।
মন্তব্য করুন