

‘হেমন্তিকা এসো, এসো হিমেল শীতল বন-তলে/শুভ্র পূজারিণী বেশে কুন্দ-কবরী-মালা গলে’― হ্যাঁ, নজরুলের গানের লাইনগুলো যেন সত্যি হয়ে উঠেছে হেমন্তের এই শুভ্র দুপুরে। শহুরে জীবনের এই অলস দুপুরে ব্যস্ততার যান্ত্রিকতায়, ইট-কংক্রিটের জীবনে ক্লান্তির মাঝে স্বস্তি হয়ে হেমন্ত চলে এসেছে। হিমশীতল এই রোমাঞ্চকর মুহূর্তগুলোকে সুর-ছন্দ আর কবিতায় রাঙিয়ে দিতে ছায়ানটে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন- নন্দন আয়োজন করেছিল আবৃত্তি ও গানের অনবদ্য যুগল সন্ধ্যা— ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। গেল শনিবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর ছায়ানট অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ আয়োজন মুগ্ধ করে উপস্থিত শ্রোতাদের। আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশন করেন নন্দিত আবৃত্তিশিল্পী ও সংগঠক সুকান্ত গুপ্ত এবং সংগীতশিল্পী সামিয়া আহসান। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন আবৃত্তিশিল্পী বর্ষা চৌধুরী। শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন নন্দনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত রায়। উদ্বোধনী পরিবেশনায় অংশ নেয় নাজমুল আহসানের পরিচালনায় ‘শব্দকল্পদ্রুম’ এবং মেহেদী হাসান আকাশের পরিচালনায় ‘বাংলা আমার’ দল। প্রকৃতি ও স্বদেশ বন্দনার মাধ্যমে এই সন্ধ্যার প্রথম পর্ব উন্মোচিত হয় শান্ত সৌন্দর্যে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ থেকে শুরু করে বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ এবং আরও বহু গুণী কবির কবিতা আবৃত্তিতে প্রাণ পায় নবীন-প্রবীণ শিল্পীদের কণ্ঠে। পাশাপাশি সামিয়া আহসান পরিবেশন করেন পঞ্চ-পাণ্ডবের নির্বাচিত গান। পুরো হলজুড়ে পিনপতন নীরবতায় দর্শকরা উপভোগ করেন সুকান্ত ও সামিয়ার সুসমন্বিত শিল্পরূপ। গান-আবৃত্তির ষড়ৈশ্বর্য। সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, আবৃত্তিশিল্পী শিমুল মুস্তাফা, দেওয়ান সাইদুল হাসান, রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী বুলবুল ইসলাম, নজরুলসংগীতশিল্পী সালাউদ্দিন আহমেদ, রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী লাইসা আহমেদ লিসাসহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন নন্দনের পরিচালক ফেরদৌসী কাকলী— কৃতজ্ঞতা আর শিল্পের প্রতি অঙ্গীকারের সুরে। আর এরই মধ্য দিয়ে, হেমন্তের এই স্নিগ্ধ সন্ধ্যায় শব্দ ও সুরের মিলবন্ধনের সম্মিলন যেন তৈরি করলো স্মরণীয় একটি সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা।
মন্তব্য করুন