সুচেতনা সমীপেষু
সুচেতনা! এই দীর্ঘ বিরতির কি আছে মানে? ব্যস্ততার কালো পর্দায় অলিন্দের যে পাশটা অবহেলায় রেখেছ ঢেকে- খুব নীরবে একদিন দেখে এলাম! অভিমানের দ্রিম দ্রিম শব্দে কষ্টের দেয়ালে ঘাম, বাষ্প করে উড়াও তারে, যেন জল না গড়ায় চোখে। সুচেতনা! এখনও কার গায়ের গন্ধ খোঁজ ব্যস্ত শহরে? অস্বীকারে কি বিজয় লেখা থাকে? তবে জেনে রেখো- সব জয়ে সুখ নেই!
সুচেতনা! একটা শিউলিফোটা ভোর দাও আমায় সুইজারল্যান্ডের অনুপম ভ্যালি হয়তো নয়, হয়তো মালদ্বীপের নীলজল নিলাদ্রিতেও নয়, একটা বিকেল আমার সাথে চলো, মেঠোপথের শেষে বটগাছ, পাশে স্রোতস্বিনী- একটা হাত আমার হাতে রেখে দেখ, ভরসার কপিকলে আস্থার ভার দাও, দেখ তোমার ক্লান্তির পাথর টানতে আমি কতটা তৈরি!
সুচেতনা! রাত্রির আকাশ ছায়াপথ টেনে কতদূর গেছে চলে একটা রাত আমায় দাও রুপালি জ্যোৎস্নার হিম বর্ষায় চোখ বুঝে ভিজে দেখ একটিবার আমার সাথে অনন্তকালের ক্লিষ্ট মনে শ্রান্তির ধারা ফিরবেই! আমি জানি, বিষণ্ন বিকেলে মনের জানালায় বসে আজও তুমি আমায় খোঁজ গলিটির শেষ মাথায়!
সুচেতনা! দেখ বুড়িয়ে যাওয়া ক্লান্ত ডায়ালটাতে সময় ধুঁকছে! শেষ বাসটি এখনো তোমার অপেক্ষায় দীর্ঘ পথের পর শেষ স্টেশন প্রতিরাতের মতো কৌতূহলী একজোড়া চোখ এখনো একদৃষ্টে তাকিয়ে সুচেতনা, একবার কি ভুল করে উঠতে পার না সেই বাসে!
যোগ-বিয়োগ
মনের দৃষ্টি মেলিস, তবু চোখ খুলে তাকাস না, ঐ গভীরতায় ঠাঁই নেই, আমি কূল খুঁজে পাই না! মন ছুঁতে পারে না মন তাই- আলিঙ্গনের আকাঙ্ক্ষা আজন্ম লালিত স্বপ্ন, শপথ ঐ চোখের, সে দর্পণে বেঁধেছি আলিঙ্গনে তোকে, শরীর না পাক, তবু মন যে ছুঁয়েছি হায়! দূরেই থাক তুই, সবকিছু পেতে নেই।
কিছু বন্ধুত্ব থাকুক এমন- অধরা সম্পর্কে আবৃত, আমার ভয়ঙ্কর সময়ে একটি খুঁটি চেয়েছি, ঘর চাইনি, নীতির নিক্তিতে মেপেই বুঝেছি- তোকে ভাঙব না, কেবল একটু আশ্রয় চাই, প্রেম নয় বন্ধুত্বের মোহে, হোক বিষণ্নতায় কিংবা প্রবল উচ্ছ্বাসে, লেনদেন হোক ব্যাকুল ভাষা, শুধু এইটুকুই। সবকিছু চাইতে নেই।
একক ঐকান্তিক ইচ্ছায় কিছু হয় না জানি, তবু আশা করি মানসিকতা বুঝতে শিখেছিস এতদিনে, তাই ফিরিয়ে দিলেও কষ্ট পাব না, কিছু লতা থাকেই এমন, ডাল পায় না! বেড়ে ওঠার তাগিদে নুইয়ে চলে- থেমে থাকে না। জানি তোর বেগ বেশি আবেগ কম, এই আকুলতা সস্তায় কেনা হওয়াই মিঠাইয়ের মতো তবু কি জানি বলতে ইচ্ছে হলো, আমার মন বলে, এত কিছু ভাবতে নেই।
[কবি উৎকলিত রহমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী; বর্তমানে আন্তর্জাতিক সংস্থা কেয়ার বাংলাদেশ’এর সঙ্গে কাজ করছেন।]
মন্তব্য করুন