কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৪, ০৪:৩৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘দেশে টাকাও নেই ডলারও নেই’

ইআরএফ আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে দুরবস্থার কারণ’ শীর্ষক সেমিনারে অতিথিরা। ছবি : কালবেলা
ইআরএফ আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে দুরবস্থার কারণ’ শীর্ষক সেমিনারে অতিথিরা। ছবি : কালবেলা

দেশে আর্থিক দুরবস্থার কারণে দিন দিন বাংলাদেশ ঋণনির্ভর হয়ে পড়ছে। এমনকি ধীরে ধীরে ঋণ পাওয়ার সক্ষমতাও কমছে। অন্যদিকে বাজেট বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় করতে পারছে না সরকার। এখন বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজানীয় টাকাও নেই, ডলারও নেই। কীভাবে বাস্তবায়ন হবে। তাই দেশের আর্থিক খাতের সংকট মোকাবিলায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার কোনো বিকল্প নেই বলেন মন্তব্য করেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

শনিবার (১৩ জুন) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে দুরবস্থার কারণ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, পর্যাপ্ত ডলার না থাকার কারণে জ্বালানি খাতসহ বিভিন্ন খাতের বিল পরিশোধ করতে পারছে না সরকার। যদি স্বাস্থ্য ভালো না থাকে তাহলে ভার বহন করা যায় না। ব্যাংক খাতের দুর্বলতার কারণে এখন ব্যাংক ব্যক্তি খাতকেও ঋণ দিতে পারছে না, আবার সরকারকেও ঋণ দিতে পারছে না। এখন ব্যাংক আমানতের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৮ থেকে ৯ শতাংশ। এ বছর যদি বাড়ে তাহলে সেটা সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ হতে পারে। সে হিসাবে এ বছর আমানত আসবে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো। নতুন অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা কীভাবে দেবে ব্যাংক? সরকার এক লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিলে ব্যক্তি খাত টাকা কোথায় পাবে? কিন্তু বাজেটে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ২৭ শতাংশ। কিন্তু এ পর্যন্ত ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ২২ থেকে ২৩ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। যদি ব্যাংক খাতের আমানতের প্রবৃদ্ধি না বাড়ে আবার সরকারকে ঋণ দিতে হয় তাহলে ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কীভাবে অর্জন হবে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আগে বলা হয়েছিল, আর্থিক খাতে ব্যাপক সংস্কার আনা হবে। কিন্তু ছয় মাস পার হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত কিছুই হয়নি। এটা খুবই হতাশাজনক। দেশের স্বার্থেই এখন ব্যাংক খাতের সংস্কার খুবই জরুরি। আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ দিয়েছে সেটা ভালো। কিন্তু নিজেদের স্বার্থেই আমাদের সংস্কার দরকার। আমরা তো আমানত খেয়ে ফেলেছি। এভাবে ব্যাংক কতদিন চলবে? ব্যাংক খাত নিয়ে স্বেতপত্র প্রকাশ করা দরকার। সেটা করতে হবে সরকারকেই। বাংলাদেশ ব্যাংককে দিয়ে নয়। ব্যাংক খাতে আজকে যে এ অবস্থা হলো, তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে।

পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক বলেন, ঋণ আদায় না করে ঋণের সুদকে আয় দে‌খি‌য়ে মুনাফা দেখা‌চ্ছে ব্যাংক। সে মুনাফার অর্থ থে‌কে লভ্যাংশ দিচ্ছে। সরকারকে ট্যাক্সও দি‌চ্ছে। আসলে কোনো আয়ই হয়‌নি। আমান‌তের অর্থ লুটে খা‌চ্ছে কয়েকটি গোষ্ঠী। সরকারের সহযোগিতায় তারা পুষ্ট হয়ে উঠেছে। তাদের কারণেই এখন আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে করপোরেটের নিচে ময়লা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। একটা সময় তাতো দুর্গন্ধ ছড়াবেই।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, লক্ষ্য করা যাচ্ছে এতো সমস্যার মধ্যেও লভ্যাংশ দিচ্ছে অনেক ব্যাংক। আসলে ঘ‌রের থালাবাসন বেচে কোরমা-পোলাও খা‌চ্ছি আমরা। এভাবে আর কত‌দিন ব্যাংক চল‌তে পারবে? অমানত শেষ হয়ে যাবে। গ্রাহকের অর্থ আর ফেরত দি‌তে পারবে না ব্যাংক। এখন আর্থিক খা‌তের ‘ক্লিনিং‌’ কার্যক্রম প্রয়োজন। আমা‌দের ব্যাংক খা‌তের সমস্যাগুলো সমাধান না ক‌রে জিইয়ে রাখছে সরকার।

আর্থিক খা‌তে সবচেয়ে বে‌শি তথ্য লুকানো হচ্ছে অ‌ভিযোগ করে এ অর্থনী‌তি‌বিদ বলেন, দেশের সবচেয়ে বে‌শি তথ্য লুকানো হয় আর্থিক খাতে। যেখা‌নে স‌ঠিক ত‌থ্য সব‌চে‌য়ে বে‌শি জরু‌রি। বাংলা‌দেশ ব্যাংক এখন ১১ শতাংশ খেলা‌পি ঋণ দেখা‌চ্ছে। আস‌লে বাস্ত‌বে খেলা‌পি বা মন্দ ঋণ ২৫ শতাংশ। এভা‌বে আর বে‌শিদিন চল‌তে পার‌বে না।

ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মৃধার সভাপ‌তিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ক‌রেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কা‌শেম।

প্রবন্ধ উপস্থান করেন ইআরএফের জ্যেষ্ঠ সদস্য ওবাইদুল্লাহ রনি ও সানাউল্লাহ সাকিব। প্রবন্ধে তারা জানান, বর্তমান সরকারের সময়ে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো অনেক বড় বড় প্রকল্প হয়েছে। এসব প্রকল্পের সুফল হিসেবে যেখানে কর্মসংস্থান বেড়ে মূল্যস্ফীতি নাগালের মধ্যে থাকার কথা। তবে ডলার সংকট, ব্যাংক খাতে দুরবস্থার কারণে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি মানুষকে চরম অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। সরকারের সব অর্জন যেন এ উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং ব্যাংক খাতের দুরবস্থা ম্লান করে দিচ্ছে।

আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ধরে রাখতে কঠোর নীতির পরিবর্তে একের পর এক নীতি সহায়তার নামে ঋণখেলাপি, অর্থপাচারকারীদের সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে মেয়াদি ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় এবং ৯-৬ এর মতো নীতি গ্রহণ করে অর্থনীতিকে বিপর্যয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। দেশের মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রাবাজার পরস্থিতি এবং ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলার বিষয়টি সবার জানা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার কাজে ব্যর্থ হয়েছে বলে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বলেছেন। আবার যথাসময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়ায় মূল্যস্ফীতি নিয়ে সবাই এখন অস্বস্তিতে আছে। সর্বশেষ সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি ঠেকেছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। গত ১৩ বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কাটা মাথা দেখে গরুর খোঁজ পেলেন মালিক

কর্মবিরতিতে প্রাথমিকের পৌনে ৪ লাখ শিক্ষক

অধ্যাপক রোমানের বহিষ্কারের দাবিতে উত্তাল চবি

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সীমান্ত ঘিরে ভারতের নতুন পরিকল্পনা

রাজশাহীতে ট্রেন লাইনচ্যুত

ইসরায়েলের ‘পুরো আকাশ অবরোধের’ হুঁশিয়ারি, ক্ষুব্ধ নেতানিয়াহু

সাতসকালে ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’

ইরানের ‘কাসেম বাসির’ : মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও ফেল!

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন হামলায় আহত ১৪, উত্তপ্ত ইয়েমেন

আজ যেমন থাকবে ঢাকার আবহাওয়া

১০

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বিপাকে ছাত্রদল নেতা

১১

৫ মে : আজকের নামাজের সময়সূচি

১২

৫ মে : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৩

সোমবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৪

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে সাংবাদিক গ্রেপ্তার

১৫

হাসনাতের গাড়িতে হামলার প্রতিবাদে গাজীপুরে বিক্ষোভ

১৬

বগুড়ায় বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজের ৮ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা

১৭

হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর হামলার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মশাল মিছিল

১৮

পিকনিককে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীর দুপক্ষে সংঘর্ষ, নিহত ১

১৯

স্বাস্থ্য পরামর্শ / নবজাতকের জন্ডিস হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে

২০
X