বাংলাদেশের অন্যতম প্রগতিশীল নাট্যসংগঠন লোক নাট্যদল (বনানী) গৌরবময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে ৪৪ বছরের যাত্রা সম্পন্ন করে ৪৫ বছরে পদার্পণ করল। ১৯৮১ সালের ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলটি জীবনঘনিষ্ঠ, মানবিক ও নিরীক্ষাধর্মী নাটক মঞ্চস্থ করে একদিকে যেমন নাট্যচর্চাকে গণমানুষের ভাষায় রূপ দিয়েছে, অন্যদিকে সব গণতান্ত্রিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের বলিষ্ঠ অংশীদার হয়েছে।
দলের ৪৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে লোক নাট্যদল আয়োজন করেছে ৫ থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী নাট্যোৎসব ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। যার মূল অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় আজ ৬ জুলাই, শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে। এতে আলোচনা সভা, নাট্য সম্মাননা প্রদান, সাংস্কৃতিক পরিবেশনার সাথে মঞ্চস্থ হয় দলের সাম্প্রতিক প্রযোজনা ‘সুন্দর’ নাটক।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। এছাড়া দলের দীর্ঘদিনের উপদেষ্টা নাট্যব্যক্তিত্ব মোহিনী মোহন চক্রবর্তীকে প্রদান করা হয় নাট্য সম্মাননা। সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি অভিজিৎ চৌধূরী এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল হারুন।
এর আগে ৫ জুলাই (শুক্রবার) সন্ধ্যায় রাজধানীর নাটক সরর (বেইলি রোড) নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে দলটির প্রযোজনা ও বাংলাদেশের সর্বাধিক মঞ্চায়িত নাটক ‘কঞ্জুস’ মঞ্চস্থ হয়। এটি ছিল নাটকটির ৭৯২তম মঞ্চায়ন। ফরাসি নাট্যকার মলিয়েরের ‘দ্য মাইজার’ অবলম্বনে নাটকটির রূপান্তর করেছিলেন খ্যাতনামা নাট্য নির্দেশক ও অভিনেতা তারিক আনাম খান। নির্দেশনায় ছিলেন কামরুন নূর চৌধুরী। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন মনিকা বিশ্বাস, আনোয়ার কায়সার, মিনহাজুল হুদা দীপ, আবদুল্লাহ আল হারুন, সোহেল মাসুদ, সুধাংশু নাথ, সাদেক ইসলাম, তানজিনা রহমান, সায়মা হাসিবা অপূর্ব, আবুতাহের লিটন আকাশ, সেলিম চৌধুরী। সংগীতে ছিলেন অভিজিৎ চৌধূরী, নূর তাজমিন নীরু, পিনাকী রঞ্জন সরকার পিন্টু, তানভীর তমাল। আগামীকাল ৭ জুলাই সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল মিলনায়তনে নাটকটির ৭৯৩তম মঞ্চায়ন হবে।
৪৪ বছরে লোক দলটি মঞ্চস্থ করেছে ৩২টি নাট্য প্রযোজনা। দেশজ ও আন্তর্জাতিক মঞ্চ মিলিয়ে দুই হাজারেরও বেশি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে দলটি। বিখ্যাত ও দর্শকপ্রিয় নাটকগুলো হলো : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বৈকুণ্ঠের খাতা’, ‘রথযাত্রা’, ‘বশীকরণ’; কাজী নজরুল ইসলামের ‘মধুমালা’, ‘শিল্পী’; উইলিয়াম শেক্সপিয়রের ‘এ মিড সামার নাইটস ড্রিম’; বের্টোল্ট ব্রেখটের ‘বিধি ও ব্যতিক্রম’; মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের ‘সুন্দর’, ‘সিদ্ধিদাতা’, ‘তুষাগ্নি’; বুদ্ধদেব বসুর ‘তপস্বী ও তরঙ্গিনী’; উৎপল দত্তের ‘ঠিকানা’; গাও সিংজিয়ানের ‘মাঝরাতের মানুষেরা’। মোনাকো, ইংল্যান্ড, জার্মানি, তুরস্ক, হংকং, নেপাল ও ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে লোক নাট্যদলের নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে।
মন্তব্য করুন