বাংলাদেশ আইএমএফের সদস্য রাষ্ট্র। সেজন্য বাংলাদেশকে আইএমএফ ঋণ দিতে বাধ্য বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘বাজেট ২০২৩-২৪ : শিক্ষা ও কর্মসংস্থা’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
এম এ মান্নান বলেন, আইএমএফ আমাদের গুরু নয়। আইএমএফ আমাদের বাজেট পরিচালনা করে না। আইএমএফ ঋণ দেয়। বিশ্বব্যাংক যেমন ঋণ দেয়, ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক যেমন ঋণ দেয়, কুয়েত ডেভেলপমেন্ট ফান্ড যেমন ঋণ দেয় তেমনি আইএমএফও ঋণ দেয়। তবে আইএমএফ ঋণের সঙ্গে কিছু পরামর্শ দেয়। আমরা আইএমএফের সদস্য রাষ্ট্র। তারা আমাদের ঋণ দিতে বাধ্য।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আইএমএফের বোর্ড অব অনারে আমরা আছি। তারা যে সকল পরামর্শ দেয় সেগুলো আমাদের থেকে অনুমোদন করা হয়। এর বাইরে তারা আলাদা কন্ডিশন দিতে পারবে না। তাই কেউ যদি মনে করে আইএমএফের দ্বারা আমরা আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা, আইএমএফ বাজেট তৈরি করেছে ; এটি নট কারেক্ট। এটি আমাদের জন্য অপমানজনক, স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক। দয়া করে এ বিষয়টি মাথা থেকে বের করে ফেলা উচিত।
তিনি বলেন, বাজেটের মধ্যে ভালো-মন্দ দুটো দিকই আছে। যেটা দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। আমি বলি শিক্ষাতে আরও আরও বেশি বিনিয়োগ দরকার। কারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ কখনোই নষ্ট হবে না, কাজে লাগবে। চাকরিই শিক্ষার উদ্দেশ্য নয়। শিক্ষা তো অন্য ব্যাপার। আমাকে সচেতন করার, আমাকে একজন মানুষ হিসেবে বুঝার ক্ষমতা দান করাই হলো শিক্ষা। তাই এ খাতে আরও বেশি বরাদ্দ দিতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সেটার চেষ্টা করছে।
সেন্টার অ্যান্ড বাজেট পলিসি রিচার্স সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, শিক্ষা খাতে বরাদ্ধের পাশাপাশি বাজেটে ‘গবেষণা ও উন্নয়ন’ নামে আলাদা একটি খাত তৈরিতে জোর দিতে হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। জিডিপির তুলনায় প্রস্তাবিত বরাদ্দ নেমে এসেছে ১ দশমিক ৭৬ শতাংশে, যেখানে বিগত অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ ছিল জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
তিনি বলেন, কলম উৎপাদনের উপরে প্রস্তাবিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিদেশি সফটওয়্যারে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। আবার বিদেশি সফটওয়্যারের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাটও বসবে। শিক্ষা ও ডিজিটাল খাতে এ প্রস্তাবনা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এ প্রস্তাবনা পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, প্রত্যাশা ছিল বাজেটে শিখন ঘাটতি নিয়ে পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনা থাকবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এর শিক্ষা ঘাটতি গবেষণা ২০২২ অনুযায়ী, মহামারিকালে সময়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে ও স্কুল বন্ধের কারণে শিক্ষা ঘাটতি সব চাইতে বেশি হয়েছে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। এ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা ঘাটতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পঞ্চম শ্রেণির ১৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলাদেশ এবং গ্লোবাল স্টাডিজে এবং ১২ দশমিক ৪৯ শতাংশ ইংরেজিতে শিক্ষা ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে।
সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান, মূল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর এবং এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. দেওয়ান এম হুমায়ুন কবির।
মন্তব্য করুন