২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি পর্যায়ে নতুন একটি আয়কর ক্যাটাগরি চালুর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে এই ক্যাটাগরিতে ২০২৬-২৭ ও ২০২৭-২৮ অর্থবছরের জন্য করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
গেজেটভুক্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এ আহতরা ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে এই সুবিধা পাবেন। একইসঙ্গে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের করমুক্ত আয়সীমাও ৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০২৬-২৭ অর্থবছর থেকে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। এই দুই অর্থবছরে স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা হবে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর বদলে যাওয়া রাজনৈতিক বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট। চলমান অন্তর্বর্তীকালীন শাসনব্যবস্থায় সংসদ না থাকায় বাজেট নিয়ে কোনো আলোচনা বা বিতর্কের সুযোগ নেই। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছেন। প্রক্রিয়াগতভাবে আগামী ৩০ জুন রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে এই বাজেট কার্যকর করা হবে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এই বাজেটে জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসন ও সহায়তার জন্য ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ৫৪তম বাজেট এটি।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ, গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার পুনর্বাসনসহ গণঅভ্যুত্থানের আদর্শ ও চেতনাকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশে ইতোমধ্যে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
শিগগিরই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের পরিবার ও আহতদের জন্য ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহতদের জন্য ৪০৫ কোটি ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি।
এর আগে সবশেষ জাতীয় সংসদের বাইরে বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছিল ২০০৮ সালে, যখন ক্ষমতায় ছিল সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই বছরের ৯ জুন তৎকালীন অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন।
জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের দায়িত্ব নেয় মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের অধীনে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ উপস্থাপন করলেন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম বাজেট।
দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় ১১ মাস পর প্রথমবারের মতো বাজেট উপস্থাপন করতে গিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ব্যয় কমিয়েছেন ৭ হাজার কোটি টাকা। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো অর্থবছরে বাজেটের আকার আগের বছরের তুলনায় ছোট হলো।
প্রায় দেড় দশক আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সালেহউদ্দিন আহমেদের জন্য এটাই প্রথম বাজেট উপস্থাপন করলেন। তিনি বলেন, বাস্তবতা বিবেচনায় রেখেই বাজেটের আকার সংকুচিত করা হয়েছে। ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
উল্লেখ্য, সংসদ না থাকায় আগামী ৩০ জুন রাষ্ট্রপতি বাজেট অধ্যাদেশে সই করবেন, ১ জুলাই কার্যকর হবে নতুন বাজেট। তবে বাজেটের অনেক অংশ, বিশেষ করে ট্যাক্স ও কাস্টমসসংক্রান্ত বিষয়গুলো ২ জুন উপস্থাপনের দিন থেকেই কার্যকর হবে।
মন্তব্য করুন