দেশের ব্যাংক–বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুরবস্থা কাটছেই না। বরং দিন দিন খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়ছে। বহুল আলোচিত আর্থিক খাতের ব্যক্তিত্ব প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের রেখে যাওয়া অনিয়মের প্রভাব এখনো বহন করছে এই খাত। তার মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় থাকা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও খেলাপি ঋণ ক্রমেই বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭২ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে খেলাপি ঋণ ছিল ২৪ হাজার ৭১১ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে এই খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৯ দশমিক ২৭ শতাংশ।
খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ব্যাংকের অবস্থাও ভালো নয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ দ্রুত বাড়ছে। কারণ, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ব্যাংক খাতে কঠোর তদারকি শুরু হয়েছে, ফলে লুকানো খেলাপি ঋণ ধীরে ধীরে সামনে আসছে। অন্যদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কয়েক বছর ধরেই প্রকৃত খেলাপি ঋণ দেখিয়ে আসছে।
খাত–সংশ্লিষ্টরা জানান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্থিরতা এখনো কাটেনি। কয়েকটি ব্যাংকের তারল্য সংকটের কারণে তাদের অবস্থাও নড়বড়ে হয়েছে। যখন কিছু ব্যাংক গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়, তখন অনেক গ্রাহক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও টাকা তুলে নেন। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণ কমে যায়, ফলে আমানত ও ঋণ উভয়ই হ্রাস পাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, তহবিল সংকটের কারণে নতুন ঋণ বাড়ছে খুব ধীর গতিতে। ২০২৫ সালের জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭৭ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। এর আগে মার্চ শেষে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৬ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে ঋণ বেড়েছে মাত্র ১৮৬ কোটি টাকা। গত বছরের জুনে এই ঋণ ছিল ৭৪ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে মাত্র ২ হাজার ২২৪ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, আমানতের পরিমাণেও খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত ছিল ৪৮ হাজার ২৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা এবং জুনে আরও সামান্য বেড়ে হয় ৪৯ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা।
খাত বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, খেলাপি ঋণের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা ও আমানত বৃদ্ধির ধীর গতি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎকে আরও অনিশ্চিত করে তুলছে। এই অবস্থায় কার্যকর সংস্কার ও কঠোর নজরদারি ছাড়া খাতটি স্থিতিশীল হওয়া কঠিন হবে।
মন্তব্য করুন