

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে অঙ্গার বাসচালক জুলহাস মিয়ার (৩০) গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তার মৃত্যুর খবরে আহাজারি করছেন স্বজেনরা।
নিহত জুলহাস কৈয়ারচালা গ্রামের আ. বারেকের ছেলে। তিনি মায়ের সঙ্গে ভালুকজান মাছের আড়ত সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করতেন।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে নিহতের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, মা সাজেদা আক্তার (৪৮) ঘরের মেঝেতে আহাজারি করছেন। তিনি বিলাপ করে বলেন, ‘আমার সংসার কেমনে চলবো গো, আমগরে কেডা দেখবো গো, কেডা খাবার দিবো গো। আমার পোলাডারে কেমনে আগুন দিইয়া পুড়লো গো, আল্লাহর কাছে বিচার চাই। আল্লাহ তারে আগুন দিইয়ায় পুড়াইয়োগো।’
ছোট বোন ময়না আক্তারও মায়ের সঙ্গে বিলাপ করছেন। বলেন, ‘আমার ভাইরে পুইড়া মারলো কে, আমার ভাইয়েরে জীবন ভিক্ষা দিতো। আমার ভাইডারে গাড়িত থেইক্যা ওরা বাহির হয়তে দেয় নাই।’ এ সময় তিনি ভাই হত্যার বিচার দাবি করেন।
স্বজনরা জানান, মা সাজেদা আক্তারের তালাক হওয়ায় জুলহাস তার মায়ের সঙ্গে নানার বাড়ি চলে আসে। তার মা মানুষের বাসায় কাজ করে জুলহাস ও তার ছোট বোন ময়না আক্তারকে লালনপালন করেন। পরিবারের অভাব অনটন ও দরিদ্রতায় মাত্র ১৪ বছর বয়সে চালকের সহযোগী হিসেবে গাড়িতে কাজ শুরু করেন জুলহাস। দীর্ঘদিন গাড়িতে থেকে বছর দুয়েক আগে গাড়ি চালানো শিখে এখন ড্রাইভিং করছেন। বছরখানেক আগে ৩ সমিতি থেকে ৩ লাখ ও বাহির থেকে ৩ লাখসহ ৬ লাখ টাকা ঋণ করে সাড়ে ৪ শতক জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ ও গাড়িচালকের লাইসেন্স করেন। পরে মায়ের সিদ্ধান্তে মামাতো বোন জাকিয়া আক্তারকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হতো তাই এক সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ পর পর বাড়িতে আসতেন জুলহাস। তবুও বেশ ভালোই চলতো তাদের সংসার।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাত সোয়া ৩টার দিকে পৌর এলাকার ভালুকজান ইসলাম ফিলিং স্টেশন পেট্রোল পাম্পের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আলম এশিয়া বাসে দুর্বৃত্তরা আগুন দিলে ঘটনাস্থলেই চালক জুলহাস পুড়ে আঙ্গার হয়ে যান। এ ঘটনায় ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিসিটিভি ফুটেজ দেখেন।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, দুর্বৃত্তরা পেট্রোল জাতীয় পদার্থ দিয়ে গাড়িতে আগুন দিয়েছে। এ ঘটনায় ঘুমন্ত চালক মৃত্যুবরণ ও দুজন আহত হয়েছেন। সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছি, ভিডিও এনালাইসিস করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন