

ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের আয়কর রিটার্ন জমার সময় এক মাস বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রোববার (২৩ নভেম্বর) এক বিশেষ আদেশের মাধ্যমে এই সময় বৃদ্ধি করে আগামী ৩১ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। আগামী ৩০ নভেম্বর এই সময় শেষ হওয়ার কথা ছিল।
একই সঙ্গে ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন সংক্রান্ত সমস্যার কারণে কোনো করদাতা অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে না পারলে আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপ-কর কমিশনারের কাছে সুনির্দিষ্ট যৌক্তিকতাসহ আবেদন করা যাবে, এমন আরেকটি আদেশ দিয়েছে এনবিআর।
এনবিআর বলছে, এ বছর ৬৫ (পঁয়ষট্টি) বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের প্রবীণ করদাতা, শারীরিকভাবে অসমর্থ বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন করদাতা, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতা, মৃত করদাতার পক্ষে আইনগত প্রতিনিধি কর্তৃক রিটার্ন দাখিল ও বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিক ছাড়া সব ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ কর বছরে বেশ কয়েক শ্রেণির করদাতার অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও তারা ইচ্ছা করলে অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন।
করদাতার পক্ষে তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধিও এ বছর অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। এ ছাড়া, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতার ক্ষেত্রে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও তার পাসপোর্ট নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ই-মেইল অ্যাড্রেস ইত্যাদি তথ্য ereturn@etaxnbr. gov. bd ই-মেইলে পাঠিয়ে আবেদন করলে আবেদনকারীর ই-মেইলে ওটিপি ও নিবন্ধন লিংক পাঠানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতারাও ই-রিটার্ন সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করে সহজেই অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন।
কোনো কাগজপত্র বা দলিলাদি আপলোড না করে করদাতারা তাদের আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের প্রকৃত তথ্য ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন করে সহজে ঝামেলাহীনভাবে ঘরে বসেই অনলাইনে আয়কর পরিশোধ করতে পারবেন। ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং অথবা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (বিকাশ, নগদ ইত্যাদি) মাধ্যমে আয়কর পরিশোধ করা যাবে। ই-রিটার্ন দাখিল করে তাৎক্ষণিকভাবে নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-রিটার্ন দাখিলের স্লিপ ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয়কর সনদ প্রিন্ট করা যাবে। এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ১৮ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করেছেন।
চলুন ধাপে ধাপে জেনে নিই কীভাবে আপনি নিজেই আয়কর রিটার্ন অনলাইনে জমা দিতে পারেন।
ধাপ ১: টিআইএন (TIN) নম্বর থাকলে তবেই শুরু
রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য প্রথমেই আপনার ই-টিআইএন (e-TIN) থাকতে হবে। যদি না থেকে থাকে, তাহলে [https://etaxnbr.gov.bd](https://etaxnbr.gov.bd) ওয়েবসাইটে গিয়ে কয়েক মিনিটেই রেজিস্ট্রেশন করে নিতে পারেন।
ধাপ ২: অনলাইনে রিটার্ন জমার ওয়েবসাইটে যান
অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে গেলে যেতে হবে এই ঠিকানায়: [https://etaxnbr.gov.bd](https://etaxnbr.gov.bd)
এই ওয়েবসাইটেই আপনি রিটার্ন ফরম পূরণ, জমা দেওয়া, এবং রিসিপ্ট ডাউনলোড – সব কিছু করতে পারবেন।
ধাপ ৩: অ্যাকাউন্ট খুলুন
প্রথমবার হলে আপনাকে সাইটে একটা অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এখানে আপনার কিছু তথ্য লাগবে:
- টিআইএন নম্বর
- জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর
- মোবাইল নম্বর
- ইমেইল
এসব দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে অ্যাকাউন্ট খুলে নিন। এরপর লগইন করুন।
ধাপ ৪: আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ করুন
লগইন করার পর রিটার্ন ফরম আসবে। এখানে আপনাকে কিছু সহজ তথ্য দিতে হবে:
- আপনার মোট আয় (যেমন বেতন, ব্যবসা, ফ্রিল্যান্সিং ইত্যাদি)
- কর কাটা হয়েছে কি না
- কোনো কর ছাড় (যেমন চিকিৎসা খরচ, দান, বীমা ইত্যাদি)
- আপনার সম্পদের বিবরণ
চাকরিজীবীদের জন্য তথ্য দেওয়া অনেক সহজ—শুধু বেতন স্লিপ হাতে রাখলেই হবে।
ধাপ ৫: দরকার হলে কাগজপত্র যুক্ত করুন
সব সময় নয়, তবে কারও কারও ক্ষেত্রে কিছু স্ক্যান করা কাগজপত্র যুক্ত করতে হতে পারে। যেমন:
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- বেতন স্লিপ
- পুরোনো রিটার্ন কপি ইত্যাদি
এসব পিডিএফ আকারে আপলোড করতে হবে।
ধাপ ৬: ফরম ভালো করে দেখে সাবমিট করুন
সব তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করার পর একবার ভালো করে দেখে নিন— কোনো ভুল আছে কি না। সব ঠিক থাকলে Submit বাটনে ক্লিক করে দিন।
ধাপ ৭: রিসিপ্ট ডাউনলোড করে রেখে দিন
রিটার্ন জমা দেওয়ার পর একটা Acknowledgement রিসিপ্ট পাবেন। এটাকে PDF আকারে ডাউনলোড করে কম্পিউটারে বা মোবাইলে রেখে দিন। ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।
মন্তব্য করুন