রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকায় মরিয়ম বেগম ও সুফিয়া বেগম নামের দুই বোনকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঘাতক কিশোর গোলাম রব্বানী ওরফে তাজ (১৪)-কে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মিরপুর বিভাগ। তিনি নিহতদের অপর এক বোনের সন্তান।
পুলিশ জানায়, সাইকেল কেনার টাকা সংগ্রহের জন্য খালার বাসায় এসে টাকা চুরি করে গ্রেপ্তার কিশোর। কিন্তু চুরির বিষয়টি দেখে ফেলা এবং বাবা-মাকে জানানোর কথা বলায় চাকু ও শিলপাটা দিয়ে নির্মমভাবে দুই খালাকে হত্যা করেন রব্বানী। এরপর বাসায় তালা মেরে চাবি নিয়ে চলে যান।
সোমবার (১২ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত শুক্রবার (৯ মে) দুপুরে ১২টার দিকে ঘাতক তাজ যাত্রাবাড়ির শনির আখড়ার বাসা থেকে প্রাইভেট পড়াতে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। কিন্তু সে বাসা থেকে বের হয়ে সোজা বড় খালা মরিয়ম বেগমের শেওড়াপাড়ার বাসায় যায়। এ সময় মাথায় লাল রংয়ের ক্যাপ ও মুখে মাক্স ছিল। বাসায় প্রবেশের পর বড় খালা বাসায় জানিয়ে এসেছে কি না জানতে চাইলে তাজ উত্তরে জানায়, মা আসতেছে, আমি আগে চলে আসছি।
এরপর বড় খালা তার জন্য শরবত বানাতে যায়। আর সেজো খালা (সুফিয়া বেগম) প্লেট বাটি ধোয়া মোচা করে বারান্দার দিকে যায়। এই সুযোগে সে বড় খালার রুমে টিভির পাশে রাখা মানিব্যাগ থেকে সাইকেল কেনার জন্য তিন হাজার টাকা চুরি করে।
বিষয়টি তার বড় খালা দেখে ফেললে তাকে গালাগাল ও বকাবকি করে। বিষয়টি কিশোর তাজের মাকে জানানোর জন্য মোবাইল খুঁজতে থাকা অবস্থায় ডাইনিং টেবিলে থাকা লেবু কাটা ছুরি দিয়ে প্রথমে বড় খালার পেটে আঘাত করে। তখন বড় খালা আঘাত প্রাপ্ত হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে মারতে উদ্যত হলে সে পুনরায় আঘাত করে। তার বড় খালার বাঁচাও-বাঁচাও বলে চিৎকারের শব্দ শুনে সেজো খালা (সুফিয়া) পিছনের অন্য একটি রুম থেকে এসে তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তারপর সে ঐ একই চাকু দিয়ে সেজো খালার পেটে একবার আঘাত করলে তিনি মেঝেতে পড়ে যায় এবং বড় খালা তখনো চিল্লা চিল্লি করছিল।
তারপর সে রান্না ঘরের চুলার পাশ থেকে শীল পাটা এনে বড় খালার মাথায় একাধিক বার আঘাত করে। পরে সেজো খালাকেও আঘাত করে। তারপর সে বাথরুমে গিয়ে তার হাতে ও মুখে লেগে থাকা রক্ত পানি দিয়ে পরিষ্কার করে। পাশের রুমে গিয়ে তার টি-শার্ট ও জিন্স প্যান্টে রক্ত লেগে থাকায় পরিবর্তন করে খালাতো বোন মিষ্টির ব্যবহৃত একটি জিন্স প্যান্ট ও তার ব্যাগে থাকা আরেকটি রঙিন টি-শার্ট ও ক্যাপ পরে বাহির থেকে তালা মেরে চাবি নিয়ে বের হয়ে যায়। এরপর সিএনজিতে করে শনির আখড়া চলে যায়। কিছুদুর যাওয়ার পর বাসার চাবিগুলো ও তার পরিহিত লাল ক্যাপ রাস্তায় ফেলে দেয়।
শনির আখড়া পৌঁছার পর চুরির টাকা থেকে ৪৫০ টাকা সিএনজি ভাড়া দেয় এবং বাকি টাকায় রক্ত লেগে থাকার কারণে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। তারপর শনির আখড়া সিএনজি থেকে নেমে একটি মার্কেটের মসজিদের টয়লেটে ঢুকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে তার ব্যাগে থাকা সকালে পরিহিত গোলাপি রংয়ের পাঞ্জাবি পুনরায় পরিধান করে। তার সঙ্গে থাকা ব্যাগের ভেতর থেকে রক্ত মাখা কাপড়গুলো টয়লেটের ভ্যান্টিলেটর দিয়ে ফেলে দেয়। তারপর বাসার সামনে এসে জুতায় রক্ত থাকায় সেটিও ফেলে দেন।
পরদিন ১০ মে বিকালে তার সেজো খালাকে দাফন করার জন্য তার নানুর বাড়ি ঝালকাঠির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তার নানুর বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়।
পরে তার দেখানো মতে স্টার্ন শপিং সেন্টারের পাশের সুয়ারেজ লাইনের ওপর থেকে নীল রংয়ের রক্ত মাখা টি-শার্ট ও ব্লু কালারের রক্ত মাখা দুটি জিন্স প্যান্ট উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে একটি তার ও একটি তার খালাতো বোন মিস্টির জিন্স প্যান্ট ছিল। তার বাসার সামনে নির্জন বিল্ডিংয়ের ওপর তার ফেলে দেওয়া জুতা জোড়া উদ্ধার করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে যুগ্ম কমিশনার বলেন, গ্রেপ্তারকৃত কিশোর স্কুল থেকে বহিষ্কৃত। হত্যার ঘটনায় শুধু সাইকেল কেনার উদ্দেশ্য ছিল নাকি অন্য কিছু সেই বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। এ দিকে টাকা চুরির ঘটনায় দুই খালাকে হত্যা করা ঘটনায় দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তী মূলক জবানবন্দী দিয়েছে।
মন্তব্য করুন