“বিএনপি নেতা বনে গিয়ে পল্লবীতে চাঁদাবাজি শুরু করেছে যুবলীগ নেতা জাকির” শিরোনামে দেশ টিভিতে সংবাদ প্রকাশের পর আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে অভিযুক্ত জাকিরের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি পল্লবী থানা এলাকায় কোনো কোনো ব্যক্তি চাঁদাবাজির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জন-জীবন বাধাগ্রস্ত করে সুনির্দিষ্টভাবে তাদের বিস্তারিত নাম-ঠিকানা প্রতিবেদনে উল্লেখ করতেও বলা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হকের আদালত এ আদেশ দেন। ঘটনাটি তদন্ত করে আগামী ১০ আগস্টের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালতের আদেশে বলা হয়, গত ২৫ জুলাই "বিএনপি নেতা বনে গিয়ে পল্লবীতে চাঁদাবাজি শুরু করেছে যুবলীগ নেতা জাকির" শিরোনামে দেশটিভিতে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন অদালতের নজরে এসেছে। প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করা হয়।
পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, জাকির হোসেন ওরফে সুটার জাকির নামক একজন ব্যক্তি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর কথিত নেতা পরিচয়ে তার দলবল নিয়ে পল্লবী থানাধীন টেকেরবাড়ি ও সাগুফতা এলাকার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদার দাবিতে ভাংচুর ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে মারধর করার মত আমলযোগ্য অপরাধে লিপ্ত হয়েছে। দেশ টিভিতে প্রচারিত উক্ত প্রতিবেদনে তাসকিন নামক এক ব্যক্তি প্রতিবেদকের নিকট তার দেয়া সাক্ষাৎকারে সুটার জাকিরের বিরুদ্ধে ধারালো অস্ত্র দ্বারা তার পা কেটে ফেলার চেষ্টা করার অভিযোগ করেন। প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদনে আরো দেখা যায় যে, ভিকটিম তাসকিনের একটি পা ব্যাণ্ডেজ করা অবস্থায় ভিকটিম বিছানায় শায়িত।
ভিকটিম তাসকিন তার প্রদত্ত বিবৃতিতে বলেন যে, ‘আমি ঘরে বিছানায় পরে আছি প্রায় ১৮-২০ দিনের মত। চান্দা চাচ্ছে আমাদের কাছে। যদি আমরা চান্দার একটা এমাউন্ট দেই তাহলে হয়ত একটা নেগোশিয়েশনে আসতে পারে।’ সুটার জাকির ও তার গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রচারিত প্রতিবেদনে টেকেরবাড়ি এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
প্রচারিত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় অত্র আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে যে, পল্লবী থানাধীন টেকেরবাড়ি ও সাগুফতা এলাকার সাধারণ ব্যবসায়ীগণ চাঁদাবাজের সন্ত্রাসী কার্যকলাপে তাদের স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন, যা একই সাথে মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং একটি আমলযোগ্য অপরাধ। এ অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে অপরাধের শিকার ভিকটিমগণ তাদের প্রাণভয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় গিয়ে অভিযোগ দাখিল করতে বা মামলা করার মত সাহস পাননি, যা প্রতিবেদনে প্রচারিত অপরাধের ঘটনার শিকার হওয়া ভিকটিমদের বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারকে বিঘ্নিত করেছে।
আদেশে আরও বলা হয়, সুটার জাকির ও তার দলের উক্তরূপ কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর অধীন ১৪৩/৩৪/৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩৮৫/৩৮৬/৩৮৭ ধারার অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে। বর্ণিত প্রতিবেদন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০ (১) সি ধারায় আমলে নেয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে অত্র আদালতের নজরে এসেছে। পল্লবী থানা এলাকায় এরূপ কোনো কোনো ব্যক্তি চাঁদাবাজির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জন-জীবন বাধাগ্রস্ত করে সুনির্দিষ্টভাবে তাদের বিস্তারিত নাম-ঠিকানা, প্রতিবেদনে প্রচারিত ভিকটিমদের বিবৃতি ১৬১ ধারামতে লিপিবদ্ধ করে বিস্তারিত প্রতিবেদন ৭ কার্যদিবসের মধ্যে অত্র আদালতে প্রেরণের জন্য পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করা হল।
মন্তব্য করুন