ডেমরা ও রাজধানীর পূর্বাঞ্চল এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ক্ষোভে ফুঁসেছেন এলাকাবাসী। গ্যাস সংকটের জন্য তিতাস গ্যাস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চরম গাফিলতির অভিযোগ এনেছেন ভুক্তভোগীরা।
তারা বলছেন, মাসিক বিল নিয়মিত পরিশোধ করলেও গ্যাস মিলছে না। একদিকে মাসিক বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে অপরদিকে সব বাসাবাড়িতে রিজার্ভ গ্যাস সিলিন্ডার রাখতে হচ্ছে। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান চান এলাকাবাসী।
এদিকে শীত আসলেই গ্যাসের সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করে। এবার শীত আসার পূর্বেই শুরু হয়েছে গ্যাস সংকট। এতে একদিকে যেমন ব্যাহত হচ্ছে শিল্প উৎপাদন, অন্যদিকে রান্নাবান্নার ব্যাপারে গৃহিণীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আর সময়মতো রান্না না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের স্কুল ও কর্মজীবীদের অফিস-আদালতে যেতেও নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
জানা গেছে, এবার শীত আসার পূর্বেই ডেমরার বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে গ্যাসের প্রেসার কমে যাচ্ছে, এমনকি বেশিরভাগ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকছে সারাদিন, কখনোবা সারারাত। মাঝেমধ্যে ভোর ৫টার দিকে গ্যাস সরবরাহ হলেও ঘণ্টা খানেক পরেই উধাও হয়ে যায়। গ্যাস যেন সোনার হরিণ হয়ে গেছে ডেমরাবাসীর জন্য।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু ডেমরা এলাকাতেই এমন চিত্র নয়, রাজধানীর পূর্বাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকাতেই গ্যাসের এমন করুণ চিত্র। গ্যাস সংকটের কারণে সাধারণ মানুষের কঠিন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ডেমরার ১৪টি ওয়ার্ডের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই বিচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এদিকে ডিএসসিসির ৬২ থেকে ৭৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকাসহ ১ থেকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডেও সমস্যা প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ৬২নং ওয়ার্ডের গোবিন্দপুর, যাত্রাবাড়ী, কাজলা,বাঁশেরপুল, ডেমরা ও মাতুয়াইলের মাদ্রাসা বাজার, মোমেনবাগ, মদিনাবাগ, শাহজালাল রোড, কোনাপাড়া এলাকা, ডগাইর, বড়ভাঙ্গা, কোদালদোয়া এলাকা, পূর্ব-পশ্চিম বক্সনগর, বামৈল, আমুলিয়া মেন্দিপুর, সালামবাগ, পূর্ব ডগাইর নয়াপাড়া, কোনাপাড়া সিরাজউদ্দীন রোডসহ সমস্ত এলাকায় গ্যাসের সংকত তীব্র আকার ধারণ করছে। এসব এলাকায় গ্যাসের প্রেসার কম থাকায় চুলায় আগুন মিটমিট করে জ্বলে। এতে সকালের নাশতা তৈরি থেকে শুরু করে দুপুরের খাবার রান্নাও গ্যাসের চুলায় ওঠে না। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে অনেকে কেরোসিনের স্টোভ ব্যবহার করেও রান্নার কাজ সারছেন অনেকে।
এসব এলাকার প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন কারখানা মালিকরা জানান, গ্যাস সংকটের কারণে আমাদের চলমান শিল্প উৎপাদন ইতিমধ্যেই তিন ভাগের একভাগ কমে গেছে। তবে এ অবস্থা থেকে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এ বিষয়ে ডিএসসিসির ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মতিন সাউদ, ৬৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান, ৭০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতিকুর রহমানসহ কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর গ্যাস সমস্যা নিয়ে একই অভিযোগের কথা দৈনিক কালবেলাকে বলেছেন। গ্রাহকদের কষ্টের বিষয়ে তারা বলেন, মাসে মাসে গ্যাস বিল দিয়েও এলাকার ভাড়াটিয়াদের কষ্ট দূর হচ্ছে না। আর বারবার তিতাসের অভিযোগ কেন্দ্রে ফোন করেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। তবে এ বিষয়ে একটা পরিপূর্ণ সমাধান জরুরি হয়ে পড়েছে কারণ বাড়িওয়ালারাও রয়েছেন চরম বিপাকে।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাসের জনসংযোগ বিভাগের ম্যানেজার মির্জা মাহবুব মোবাইল ফোনে কালবেলাকে বলেন, বর্তমান চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ অনেকটাই কম। তা ছাড়া দেশের সর্বত্রই গত ২০ থেকে ৩০ বছর আগে এলাকাভিত্তিক গ্যাসের বিতরণ পাইপ বসানো হয়েছিল। কিন্তু আগের তুলনায় বর্তমানে গ্রাহকের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। একইসঙ্গে পর্যায়ক্রমে যোগ হয়েছে ছোট, বড় ও মাঝারি অনেক শিল্প কারখানার। সব মিলিয়ে প্রতিদিন তিতাস গ্যাসের গ্রাহক চাহিদার চেয়ে সরবরাহের পরিমাণ অন্তত ৬০০ মিলিয়ন ঘটনফুট কম সরবরাহ হচ্ছে। তিতাস গ্যাসের সার্বিক পরিস্থিতি-প্রেক্ষপাট, গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ স্বল্পতা এসব কিছু বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে আগের তুলনায় চাহিদা বেড়েছে অনেক গুণ। তবে সরকারিভাবে সাগরসহ গ্যাসের নতুন নতুন উৎস তৈরির চেষ্টা চলছে। নতুন উৎসের ব্যবস্থা হলে সমস্যা অনেকটা কমে আসতে পারে। এক্ষেত্রে খুব শিগগিরই বাসাবাড়িগুলোতে গ্যাস সংকট সমস্যা সমাধান করা সহজ নাও হতে পারে।
মন্তব্য করুন