সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের দাবি জানিয়ে বিএনপিপন্থি সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, এই আইন গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী। এসব কালাকানুনের কবলে পড়ে গণমাধ্যম এখন অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে।
সোমবার (৪ মার্চ) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দৈনিক দিনকাল, আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভিসহ বন্ধ মিডিয়া খুলে দেওয়া, সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন বন্ধ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সব কালাকানুন বাতিলের দাবিতে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ-সমাবেশে এসব কথা বলেন তারা।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে (একাংশ) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের (একাংশ) যৌথ উদ্যোগে এই সমাবেশ হয়।
বিএফইউজের (একাংশ) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, গণতন্ত্রের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অপরিহার্য। সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন, গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়ে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন কালাকানুন করে সংবাদকর্মী-মানবাধিকারকর্মী তথা নাগরিক সমাজের মতপ্রকাশের অধিকারের ক্ষেত্রে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে, যা গণতন্ত্রের অন্তরায়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা সাইবার নিরাপত্তা আইনের মতো বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়নের ফলে ‘সেল্ফ সেন্সরশিপ’-বেড়ে গেছে। এখন শুধু লেখা নয়, কথা বলতেও মানুষকে চিন্তা করতে হচ্ছে। কথায় কথায় সাংবাদিকেরা হুমকি ও হত্যার শিকার হচ্ছেন। শত বছরের পুরোনো ঔপনিবেশিক আইন ও তার ধারাবাহিকতায় নতুন আইন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে বাক ও চিন্তার স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়েছে।
বিএফইউজের একাংশের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্র চর্চা করার পরিবেশও নেই। দেশ এখন একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকে চলে যাচ্ছে। সাইবার সিকিউরিটি আইনের মাধ্যমে মানুষের বাক স্বাধীনতা, ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে সরকার যে কোনো কাজকেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে পারবে।
সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, একের পর এক কালাকানুন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। আদালত অবমাননা আইন, অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, আইসিটি আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, গণমাধ্যমকর্মী আইন, সাইবার সিকিউরিটি আইনসহ একের পর এক আইন করে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের হাত-পা বেঁধে ফেলা হচ্ছে। ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, জনগণ যদি সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে না পারেন, তাহলে সরকার রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজ করলে তা ঠেকানোর উপায় কী? সরকারের সমালোচনাকে এখন রাষ্ট্রবিরোধী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। আইন করে যদি কথা বলার অধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়, সরকারবিরোধী আন্দোলনে বাধা দেওয়া হয়, তখন আর গণতন্ত্র থাকে না। দেশ পেছনের দিকে ধাবিত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে ডিইউজের একাংশের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে গণমাধ্যম কর্মীদের শঙ্কা ও ভয়ের মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তাই তারা এখন সত্য তুলে ধরতে পারছেন না। তাদের এখন সেলফ সেন্সরশিপ করতে হচ্ছে।
ডিইউজের একাংশের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম বলেন, গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে হলে এ সরকারকে বিদায় দিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হবে, ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে।
ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খানের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন- বিএফইউজের নেতা খায়রুল বাশার, এ কে এম মহসিন, বাছির জামাল, রাশিদুল হক, শাহজান সাজু, আবু হানিফ, আল আমিন, সাখাওয়াত ইবনে মঈন চৌধুরী প্রমুখ নেতারা।
মন্তব্য করুন