ডিবি পুলিশের সাইবার ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই একটি ডাকাত চক্র রাজধানীতে সক্রিয়। পুরো রমজানে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির পরিকল্পনা ছিল চক্রটির।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৬ মার্চ সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে মতিঝিল ফাইন্যান্স টাওয়ারের ল ফার্ম ও মাল্টি অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন ৭১ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হলে ফকিরাপুল এলাকা থেকে ডিবি পুলিশের উঠিয়ে নিয়ে চলে যায় ডাকাত চক্র।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ডাকাতি বা অপহরণের অনেক আসামি আমরা এর আগেও গ্রেপ্তার করেছি।
মতিঝিল ফাইন্যান্স টাওয়ারের ল ফার্ম ও মাল্টি অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন। ক্লায়েন্টের ৭১ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য গত ৬ মার্চ সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে বাসা থেকে বের হন। রিকশাযোগে মতিঝিল ইসলামী ব্যাংকের লোকাল ব্রাঞ্চে যাওয়ার পথে ফকিরাপুলের ক্যাফে সুগন্ধা হোটেলের সামনে পৌঁছালে তাকে আটকানো হয়।
ডিবি পুলিশের জ্যাকেট পরা ওয়াকিটকি, স্প্রিং লাঠি ও হ্যান্ডকাপসহ ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে দুজন ভুক্তভোগীকে রিকশা থেকে নামিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে চলে যায়।
গাড়িতে তুলে গামছা দিয়ে চোখ-মুখ ও বেল্ট খুলে হাত বেঁধে ফেলে অপহরণকারীরা। এক পর্যায়ে জোরপূর্বক কাঁধে থাকা কালো ব্যাগ ভর্তি ৭১ লাখ টাকা ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে নেয়।
ঘটনার দুই দিন পর রাজধানীর মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী শাহাদাত হোসেন। ওই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সংঘবদ্ধ একটি ডাকাত দলের সন্ধান পায় ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
এরপর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে রাজধানীতে সংঘবদ্ধ ডাকাত ও ছিনতাইকারী চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তরা হলেন, দ্বীন ইসলাম, মো. সবুজ, সিফাত ইসলাম রাজী, মাজারুল ইসলাম, আব্দুস সালাম হাওলাদার।
এ সময় লুট করে নেওয়া ১২ লাখ টাকা, ৫টি মোবাইল, ডিবি জ্যাকেট ১টি, ১টি হ্যান্ডকাপ, একটি খেলনা পিস্তল, স্প্রিং স্টিক, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ১টি মাইক্রোবাস, ১টি মোটরসাইকেল ও পুলিশ লেখা নেভি ব্লু ব্যাগ উদ্ধার করা হয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবি-সাইবারের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই এই চক্রটি রাজধানীতে সক্রিয়। পুরো রমজানে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির পরিকল্পনা ছিল তাদের। এ জন্য তারা টিম সাজাচ্ছিল, পরিকল্পনা করে রাজধানীর একটি হোটেলও ভাড়া করেছিল।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার(ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ডাকাতি বা অপহরণের অনেক আসামি আমরা এর আগেও গ্রেপ্তার করেছি। চলতি মাসে একটি কোম্পানির ৭১ লাখ টাকা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে ডাকাতি করা হয়। ওই ডাকাতির ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছি।
রমজান মাস ঘিরে কোথায় কোথায় ডাকাতি করবে তার একটি পরিকল্পনা করেছিল তারা। সে জন্য তারা রাজধানীর মগবাজারে একটি হোটেল ভাড়া নিয়েছিলেন। তাদের পরিকল্পনা ছিল ঈদের চাঁদ রাত পর্যন্ত ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করবে। এরপর ঈদে বাড়ি ফিরে যাবে। আমরা সেই হোটেলের নাম, ডাকাত দলের অন্য সদস্যদের নাম পরিচয় জেনেছি। শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা করা হবে।
শুধু ব্যাংক কেন্দ্রিক টার্গেট করে ডাকাতিই নয়, হানি ট্র্যাপে সিদ্ধহস্ত তারা। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বা ধনাঢ্য ব্যক্তিদের অপহরণ করে নিয়ে তরুণীদের দিয়ে ছবি বা ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করত। কখনো কখনো তারা সিএনজি চালকদেরও ছাড় দিত না। ২০-৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছিনতাই করা সিএনজি ছেড়ে দিত। কখনো কখনো তারা স্বর্ণ ব্যবসায়ীদেরও টার্গেট করে মুক্তিপণ আদায় করত।
মন্তব্য করুন