কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মার্কশিট ও সনদ তৈরির ফাঁকা পেপার মিলেছে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের একটি বাসায়। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) বাসায় তল্লাশি চালিয়ে তোষকের নিচ থেকে এই ফাঁকা সনদ ও মার্কশিট জব্দ করে। ওই ঘটনায় কামরুল হাসান আবেদ (২৮) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার ডিবির লালবাগ বিভাগ এই অভিযান চালালেও বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ওই ঘটনায় মামলা হয়।
ডিবি বলছে, গ্রেপ্তার কামরুল রাজধানীর পল্টনে কম্পিউটার কম্পোজের একটি দোকানে কম্পিউটার অপারেটর। তিনি বাসায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগশাজশে অনেকটা নিখুঁতভাবে এই পেপার তৈরি করেন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের জাল সনদ বিক্রি চক্রের সদস্যরা তার কাছ থেকে এই পেপার নিয়ে তাতে নাম-ঠিকানাসহ পরীক্ষার নম্বর বসিয়ে সনদ বিক্রি করে আসছিল। সেই সনদ বোর্ডের সার্ভারেও আপলোড করা হয়।
এর আগে জাল সনদ তৈরি ও বিক্রির অভিযোগে ডিবি পুলিশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ টি এম শামসুজ্জামান ও তার সহযোগী ফয়সাল হোসেন, গড়াই সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার কলি, হিলফুল ফুজুল কারিগরি প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল সরদার গোলাম মোস্তফা ও যাত্রাবাড়ীর ঢাকা পলিটেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক মাকসুদুর রহমান ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী শেহেলা পারভীনকে গ্রেপ্তার করে। ওই ঘটনায় ওএসডি হন বোর্ডের চেয়ারম্যান আলী আকবর খান। ওএসডি চেয়ারম্যানসহ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কেফায়েতুল্লাহ ডিবির জিজ্ঞাসাবাদের মুখেও পড়েন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের ডিসি (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মশিউর রহমান কালবেলাকে বলেন, জাল সনদ বিক্রি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে তারা কামরুলের বিষয়ে তথ্য পান। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কামরুল জানিয়েছেন, কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের ৫০০ পিস সার্টিফিকেটের ব্যাকগ্রাউন্ড ও ৫০০ পিস মার্কশিটের ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরির অনুমতিপত্র রয়েছে তার। বোর্ডের নির্দেশে তিনি এসব ছেপেছেন। তিনি বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের স্বাক্ষরযুক্ত একটি অনুমতিপত্রও দেখান।
ডিবি জানায়, ওই অনুমতিপত্রের বিষয়ে যাচাই করলে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কেফায়েতুল্লাহ জানিয়েছেন তারা বিজি প্রেস ছাড়া অন্য কোথাও তাদের বোর্ডের সার্টিফিকেট, মার্কশিট এমনকি কোনো প্রকার দাপ্তরিক কাগজপত্র প্রিন্ট করেন না। কামরুল হাসান আবেদ নামে কাউকে তিনি চেনেন না এবং কোনো অনুমতিপত্র দেননি বলেও জানান তিনি।
অবশ্য ডিবির লালবাগ বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, মূলত এই কামরুলের কাছ থেকেই সনদ ও মার্কশিট ছেপে চক্রের সদস্যরা জাল সনদ বিক্রি করে আসছিল। এই চক্রের সঙ্গে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আরও বেশ কয়েকজন জড়িত। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য করুন