অসুস্থ মায়ের সঙ্গে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ঝালকাঠি থেকে ঢাকায় এসেছিল ১০ বছরের ছোট্ট শিশু রাবেয়া। তবে এই রাজধানী শহরে আসাই যেন কাল হলো তার।
গত শনিবার রাতে চিকিৎসক দেখাতে যান রাবেয়া, মা মুন্নি বেগম এবং খালা শিল্পী আক্তার। চিকিৎসক দেখানো শেষে তারা হেঁটেই ফিরছিলেন অদূরের বাসায়। ছোট্ট রাবেয়ার হাতে ছিল তখন চিপসের প্যাকেট। চিপস খেতে খেতে অন্যমনস্ক হয়ে যখন খিলগাঁও রেললাইন পার হচ্ছিল সে, তখনই কমলাপুরগামী এক ট্রেনের নিচে কাটা পরে রাবেয়া। বাম পা হাঁটুর নিচ থেকে হয় বিচ্ছিন্ন, আর ডান পা থেঁতলে যায় তার।
ঘটনার পর আহত অবস্থায় রাবেয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে তার স্বজনরা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় কাটছে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা রাবেয়ার যন্ত্রণাদায়ক মুহূর্ত।
রোববার (২৩ জুন) হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের পাশে বসে মুখ গুমরে কেঁদে চলেছেন মা মুন্নি বেগম। কেন তিনি ঢাকায় এসেছিলেন, ঢাকায় না আসলে তো এই সর্বনাশ হতো না- এই নিয়ে বিলাপ করছিলেন তিনি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা মুন্নি বেগম জানান, শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন ডাক্তার দেখাতে। একা আসবেন তাই সঙ্গে করে ছোট মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন। গত শুক্রবার রাতে ঝালকাঠি থেকে লঞ্চে করে ঢাকার দক্ষিণ বনশ্রী বড়বোন শিল্পী আক্তারের বাসায় যান। শনিবার সন্ধ্যায় চিকিৎসক দেখাতে মেয়ে রাবেয়া ও বোন শিল্পীকে নিয়ে শান্তিবাগে যান। সেখানে চিকিৎসক দেখানো শেষ হলে হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন। খিলগাঁও পুলিশ ফাঁড়ির পাশে রেললাইন দিয়ে রাবেয়া চিপস খেতে খেতে যাচ্ছিল। এ সময় কমলাপুরগামী একটি ট্রেনের নিচে পড়ে সে। পরে দ্রুত তাকে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি বিলাপ করতে করতে বলেন, আমার মেয়ে তো পঙ্গু হয়ে গেছে। আমার মেয়েটা বাঁচবে কি না তা ই আর জানি না।
মুন্নি বেগম জানান, তাদের বাড়ি ঝালকাঠির রাজাপুর থানার চরহাইলা কাঠি গ্রামে। তারা ওই গ্রামেই থাকেন। রাবেয়া গ্রামের একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বাবা রফিক মোল্লা কৃষিকাজ করেন। তার ঘরে দুই ছেলে দুই মেয়ে আছে। রাবেয়া সবার ছোট।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ওই শিশুর বাম পা হাঁটুর নিচ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ ছাড়া ডান পায়ের গোড়ালি থেঁতলে গেছে। তার অবস্থা গুরুতর। এখন চিকিৎসার পর বাকিটা বলা যাবে।
মন্তব্য করুন