চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলী আলহাজ মোস্তফা হাকিম ডিগ্রি কলেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর দুদফায় হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সকালে নগরের উত্তর কাট্টলী এলাকায় কলেজে প্রথম দফায় হামলার ঘটনা ঘটে। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে নগরের আকবরশাহ থানার সামনে ফের হামলার ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিচালনা কমিটির নবনির্বাচিত কয়েকজন এক নারী শিক্ষককে কলেজে আসতে নিষেধ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানালে কলেজ প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। পরে সন্ধ্যায় থানায় মামলা করতে এলে সেখানেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রদল হামলা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সন্ধ্যায় আকবরশাহ থানার সামনে আহত ছাত্রের নাম সাইফ। তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চট্টগ্রামের নেতা। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্টরা জানান, মোস্তফা হাকিম ডিগ্রি কলেজে সদ্য গঠিত পরিচালনা কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহসভাপতি নেতা সিরাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য করেন হিসাব বিজ্ঞান শাখার প্রভাষক জুলেখা বেগম। এতে গত কয়েকদিন ধরে জুলেখা বেগমকে কলেজে আসতে বাধা এবং চাকরি থেকে অপসারণের হুমকি দেন সিরাজ।
তারা আরও জানান, বৃহস্পতিবার পরিচালনা কমিটির সদস্যরা ক্যাম্পাসে গেলে শিক্ষিকাকে হুমকি নিয়ে প্রতিবাদ করে শিক্ষার্থীরা। এতে দিনভর ছাত্রদল ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা চলে। বিষয়টি সমাধানে দফায় দফায় উভয়পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর সন্ধ্যায় নগরের আকবরশাহ থানায় আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, থানার আসার পর তাদের কয়েকজনের ওপর হামলা চালায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগরের নেতা আরিফ বলেন, আমরা সকাল থেকেই দেখেছি মোস্তফা হাকিম কলেজে ছাত্রদের ওপর দফায় দফায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে। সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিকেলে কলেজে গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা কলেজের প্রিন্সিপাল ও অ্যাডহক কমিটির সঙ্গে বসেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ১৯ এপ্রিল আমাদের মধ্যে একটি ফরমাল বৈঠক হবে এবং আজকের ঘটনা নিয়ে মামলা হবে। এরপর সেখান থেকেই আমরা আকবরশাহ থানায় মামলা করতে আসি। এরপর ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা থানায় আবার মিছিল নিয়ে আসে এবং আমাদের কয়েকজনের ওপর হামলা চালায়। তারা এখনো (সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা) থানার সামনে দাঁড়িয়ে স্লোগানসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক আশিক বলেন, ‘আমরা সুন্দর সমাধানের জন্য থানায় আসি। কিন্তু থানার সামনে থেকেই আমাদের মাঝ থেকে একজনকে টেনে নিয়ে তারা মারধর করে, যা প্রত্যাশিত নয়। আমরা এখন এক ধরনের কোণঠাসা হয়ে আকবরশাহ থানায় অবস্থান নিয়েছি। আমরা চাই সব শ্রেণির মানুষ আগের মতো আমাদের পাশে দাঁড়ান।’
কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলমগীরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি। কলেজের পরিচালনা কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘এগুলো সব বানোয়াট কথা। আমার তো কাউকে বের করে দেওয়ার এখতিয়ার নেই। এখানে বৈষম্যবিরোধীর ব্যানারে কিছু মানুষ বিশৃঙ্খলা করছে। যারা একসময় ছাত্রলীগ-শিবির করত।’
আকবরশাহ থানার ওসিকে বেশ কয়েকবার কল দিলেও তা রিসিভ হয়নি। অন্যদিকে নগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মাহমুদা বেগম ওসির সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলেন।
মন্তব্য করুন