বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৫, ১১:০১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

দেড় যুগ পর নিজ গ্রামের বাড়িতে গেলেন ড. ইউনূস

নিজ গ্রামে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : কালবেলা
নিজ গ্রামে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : কালবেলা

দেড়যুগ আগে নিজ গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে গিয়েছিলেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর ফ্যাসিস্ট সরকার আওয়ামী লীগের অত্যাচার, হুমকিসহ নানা কারণে এলাকাবাসী ক্ষতি না করতেই আর গ্রামের বাড়িতে পা রাখেননি তিনি।

এরমধ্যেই বহু চেষ্টা, গ্রামের হাজি মোহাম্মদ দুলামিয়া সওদাগরের বাড়িকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার। যা সবারই জানা।

অবশেষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়ে প্রাণের স্বজন, এলাকাবাসী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের দেখতে সেই গ্রামে ছুটে গেছেন তিনি। করেছেন দাদা-দাদির কবর জিয়ারতও। তাকে (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন এলাকাবাসী। তিনি দীর্ঘদিন পর সবাইকে কাছে পেয়ে হয়েছেন উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেছেন, খুব ভালো লাগছে সবাইকে দেখে। আশাকরি, ভবিষ্যতে আরও আসা-যাওয়া হবে।

বুধাবার (১৪ মে) বিকেল ৫টার দিকে বাথুয়া গ্রামে পৌঁছে গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাদা-দাদির কবর জিয়ারত করেন প্রধান ‍উপদেষ্টা। পরে কবরস্থানের পাশে একটি মাঠে তৈরি করা মঞ্চে উপস্থিত হয়ে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসীর সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হন। গ্রামবাসী, আত্মীয়স্বজন তার সঙ্গে দেখা করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছেন।

এ সময় তিনি গ্রামবাসীর উদ্দেশে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ছড়া, শ্লোক, স্মৃতিচারণ করেন। এসব শুনে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন গ্রামবাসী। ড. ইউনূস চাটগাঁর আঞ্চলিক ভাষায় যা বলেছিলেন তার অর্থ, আমার ছোটবেলার সব স্মৃতি এ গ্রামের। ছেলেমেয়েরা এখন বড় হয়ে গেছে, আর চিনি না। অনেকে আছে অনেক দিন দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। ছোটবেলায় ছড়ার মতো বলতাম, ‘আবদুর রশীদ ঠেন্ডলের ঠাট/নজু মিয়া হাট, দুলা মিয়ার দাদার বাড়ি/শোলক মিয়ার মোটর গাড়ি।’

তখন আমাদের দাদারা মোটর গাড়ি নিয়ে আসতেন। এ কথা চিন্তা করতেও কেমন লাগছে। দেশে তখন মোটর গাড়ি কেউ চিনতও না। এসব কথা মনে পড়ছে। একের পর এক পরিবর্তন হচ্ছে। পরবর্তীতে শুনলাম ‘নজু মিয়া হাট বলে শ’র অই গেইয়ে। শ’র বলে বিলেত অই গেইয়ে।’ এখন তো নজুমিয়া হাট শহর হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। আপনাদের শহর মনে হচ্ছে? আরও হবে। -যোগ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, খুব ভালো লাগছে সবাইকে দেখে। আজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন সভায় এসেছিলাম। বাড়ির কাছে এসেছি, কোনো রকমে বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে পারো কিনা দেখো। নড়াচড়া করা মুশকিল, অনেক আয়োজন লাগে। সবার সঙ্গে দেখা করে গেলাম। আশাকরি, ভবিষ্যতে আরও আসা-যাওয়া হবে। আমার জন্য দোয়া রাখবেন।

ড. ইউনূসের পরিবার বিগত ৫০-৬০ বছর ধরে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন নিরিবিলি নামক একটি ভবনে বসবাস করছেন। ১৯৪০ সালের ২৮ জুন তিনি বাথুয়া গ্রামের এই হাজী নজুমিয়া সওদাগর বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেন। সাত ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়।

গ্রামবাসীরা জানান, গ্রামের সন্তান বাড়িতে আসবেন। সেই আমেজে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে বাথুয়া গ্রামে। আনন্দ বইছে হাজি নজু মিয়া সওদাগরের বাড়িতে। চারিদিকে উৎসব। বাড়ির একমাত্র জীবিত ও ড. ইউনূসের বাল্যবন্ধু মোহাম্মদ শফি (৮৫) বলেন, দীর্ঘদিন পর বাল্যবন্ধু আসবে। তার আগমনীতে আমাদের বাড়িতে শত শত পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী, এপিবিএন, এসএসএফ, ডিজিএফআই, এনএসআই ও সাংবাদিকদের পদচারণায় চাঁদ রাতের আনন্দ লেগেছে।

ড. ইউনূসের চাচাতো ভাই আকবর ও সাবেক চেয়ারম্যান মঈনুদ্দিন জানান, বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগদানের পর বিকেল ৫টার দিকে ড. ইউনূস বাথুয়ায় নিজ বাড়িতে আসেন। তিনি দাদা-দাদির কবর জিয়ারত শেষে বাড়ির পাশের মাঠে আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। তার আগমনে এলাকায় উৎসবের আমেজ বইছে। প্রায় ৯ বছর পর তিনি নিজ বাড়িতে এলেন।

গ্রামের প্রবীণ মুরুব্বি শামসু, কামাল উদ্দিন, শাহাব মিয়া, মোনাফ সওদাগরসহ অনেকেই জানান, ইউনূস আসবে বলে তাদেরসহ পুরো গ্রামবাসীর মধ্যে একটা অন্য রকম আনন্দ কাজ করছে। ঠিক ছোটবেলায় যেমন ঈদের আগেরদিন চাঁদরাতে আনন্দ অনুভূত হয় এখনো সেরকম আনন্দ বয়ে যাচ্ছে তাদের মধ্যে।

অপরদিকে প্রধান উপদেষ্টার পৈত্রিক বাড়ি নিজ জন্মস্থান বাথুয়া গ্রাম নিবাসী ফখরুল, কাশেমসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, ‘ইউনূস সাহেব আমার এলাকার মানুষ। তিনার কারণে আজ আমাদের গ্রাম এলাকা পৃথিবীর বুকে পরিচিত। তিনি উপদেষ্টা হবার পর এই প্রথম আমাদের এলাকায় আসবেন, এযে কীরকম আনন্দের তা ভাষায় বলে প্রকাশ করতে পারবো না। প্রধান উপদেষ্টার আগমনের দিনটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বলেও জানান তারা।’

হাটহাজারীর ইউএনও এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, ১৪ মে বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা গ্রামের বাড়ি সংলগ্ন দাদা-দাদির কবর জিয়ারত করেন এবং আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল।

স্থানীয় জামাল মিয়া বলেন, এক কাপড়ে দিন পার করে দিলেন স্যার। না কোনো ভিন্ন পোশাক, না আড়ম্বর— একটা শালীনতা, একটা সরলতা। কী অসাধারণ নিরহংকার একজন মানুষ! এই যুগে এমন মানুষ দেখলে শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে। সাদামাটা জীবনে আসল মহত্ত্বটা ঠিক এখানেই।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপদেষ্টা মাহফুজকে বোতল নিক্ষেপ হটকারী আচরণ : শিবির সভাপতি

উপদেষ্টা মাহফুজকে বোতল নিক্ষেপ ন্যাক্কারজনক : রাফে সালমান রিফাত

চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক

নানকসহ ১২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মাহফুজকে বোতল নিক্ষেপে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালেন হাসনাত

উপদেষ্টা মাহফুজের মাথায় বোতল নিক্ষেপ

পরীক্ষা দিতে গিয়ে সন্তান জন্ম দিলেন হাজেরা

শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে রাস্তায় নামলেন শিক্ষার্থীরা

দেড় যুগ পর নিজ গ্রামের বাড়িতে গেলেন ড. ইউনূস

ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে সুখবর পেল জ্যোতিরা

১০

মা-দাদির কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সাম্য

১১

সাংবাদিকদের হামলা করে মামলা দিলেন যুবক

১২

জবি শিক্ষার্থীদের লং মার্চে গুরুতর আহত সাংবাদিক হাসপাতালে

১৩

বার্ষিক সাধারণ সভার তারিখ জানাল বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদ

১৪

করিডোরের নামে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না, যা হুমকিস্বরূপ : আমিনুল হক 

১৫

আনচেলত্তির ব্রাজিল কোচিং স্টাফে ফিরছেন কাকা?

১৬

চাকরি পাচ্ছেন সেই অটোরিকশা চালকরা

১৭

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ১৫

১৮

কানাইঘাট সীমান্তে ১৬ জনকে বিএসএফের পুশইন

১৯

তালিকায় ‘ভুয়া আহত’ অন্তর্ভুক্তি / যশোরে আহত জুলাইযোদ্ধাদের অনুদানের চেক বিতরণে হট্টগোল

২০
X