বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। একই সময়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণও বাড়ছে সমানতালে। চলতি মাসের ২৪ দিনেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩১ জন। অন্যদিকে, একই সময়ে ৯৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুও হয়েছে। এই দুই ভাইরাল রোগ একসঙ্গে বেড়ে চলায় জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর নতুন চাপের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, করোনাভাইরাস এবং ডেঙ্গু- দুই রোগের উপসর্গের মিল থাকায় অনেক সময় রোগ নির্ণয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা এবং দুর্বলতা- উভয় রোগেই সাধারণ উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয়। তবে ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট কমে যায়, আর করোনা আক্রান্তদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, গলাব্যথা ও স্বাদ-ঘ্রাণ হারানোর লক্ষণ বেশি দেখা যায়।
সিভিল সার্জনের দপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত জেলায় মোট ৪০০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৭১ জন নগরবাসী এবং ২২৯ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
চলতি বছরের অন্যান্য মাসের মধ্যে মে মাসে ১১৬, এপ্রিলে ৩৩, মার্চে ২২, ফেব্রুয়ারিতে ২৮ ও জানুয়ারিতে ৭০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪০০ ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে ২১৭ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ৫১ জন বিআইটিআইডিতে, ৩৩ জন সরকারি জেনারেল হাসপাতালে, ৫৩ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং ৪৪ জন বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। বাকিরা বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রব বলেন, এই মৌসুমে আমরা করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার রোগী একসঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে। অনেক সময় উপসর্গ কাছাকাছি হওয়ায় শুরুতে নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুর জটিল রোগী কম। স্বাভাবিক জ্বরের মতোই দেখা যাচ্ছে, আর চিকিৎসায় রোগীরা সুস্থ হচ্ছেন।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, সাধারণত বর্ষায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে। এখন যেহেতু বর্ষা মৌসুম চলছে, তাই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও কিছুটা বাড়ছে। তবে এখনো পর্যন্ত পরিস্থিতি অনুকূলে আছে। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, চিকিৎসার পর তারা সুস্থ হচ্ছেন। আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতিও আছে।
তিনি বলেন, করোনার সংক্রমণটা কিছুটা বেশি। তবে মানুষজন সচেতন হলে এই সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব।
এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। প্রতিদিন সকাল-বিকেল দুবার প্রতিটি ওয়ার্ডে লার্ভিসাইড ছিটানো হচ্ছে৷ পাশাপাশি জনসচেতনতার দিকেও মনোযোগী হচ্ছে সংস্থাটি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মশক ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম মাহী কালবেলাকে বলেন, এলাকাভিত্তিক সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন সকাল-বিকেল লার্ভিসাইড ওষুধ ছিটানো হচ্ছে, ফগিংও চলছে। যেসব এলাকায় বেশি আক্রান্তের খবর পাচ্ছি, সেখানে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। জুলাইয়ের শুরুতে মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের কাজ শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যে ওষুধ ছিটাচ্ছি, সেটা বেশ কার্যকরী। আশা করছি, এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
মন্তব্য করুন