

কক্সবাজারের টেকনাফের বাসিন্দা বিধবা রাজিয়া বেগমের দুটি কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে যাওয়ায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছেন। চিকিৎসকদের মতে, সপ্তাহে অন্তত তিনবার ডায়ালাইসিস করা তার বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়। কিন্তু কক্সবাজারে সরকারি ডায়ালাইসিসের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এবং বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিবার ৬ হাজার টাকা খরচ বহন করতে না পেরে চরম বিপাকে পড়ে পরিবারটি।
অর্থাভাবে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে না পারায় রাজিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। এমন সংকটময় মুহূর্তে নিরুপায় হয়ে তার ভাই, কলেজ শিক্ষার্থী ওমর ফারুক গত ৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে যান। তিনি সাক্ষাৎ করেন সারাদেশে ‘মানবিক ডিসি’ হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার সঙ্গে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও জেলা প্রশাসক ফারুকের কাছ থেকে পুরো বিষয়টি মনোযোগ দিয়ে শোনেন। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন এবং জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কাছে রাজিয়া বেগমকে সহায়তার জন্য লিখিত সুপারিশ করেন।
ডিসির সুপারিশপত্র নিয়ে ওমর ফারুক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিটে যোগাযোগ করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত রাজিয়ার ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়া শুরুর উদ্যোগ নেয়। ফারুক জানান, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও সরকারি বিধি অনুযায়ী এককালীন ২০ হাজার টাকা জমা দেওয়ার পর ডায়ালাইসিসের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। সেখানে প্রতি ডায়ালাইসিসে খরচ হবে মাত্র ৫০০ টাকা, যা দরিদ্র পরিবারের জন্য তুলনামূলকভাবে বহনযোগ্য।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) ওমর ফারুক পুনরায় জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আর্থিক সহায়তার আবেদন করলে ডিসি তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান করেন। অন্য জেলার বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও তিনবার জেলা প্রশাসকের সাক্ষাৎ ও সহযোগিতা পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ফারুক।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রুমা ভট্টাচার্য জানান, ডিসির রেফারেন্স দেওয়া রোগীর আবেদন অনুমোদন করা হয়েছে। আবেদনে দেওয়া ফোন নম্বরে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকে নির্ধারিত অর্থ জমা দিয়ে আগামী ছয় মাসের জন্য ডায়ালাইসিস ইউনিটে ভর্তি হওয়া যাবে। ছয় মাস পর এটি পুনরায় নবায়ন করতে হবে।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন জেলা প্রশাসকের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, একজন জেলা প্রশাসক হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে এটি তার অনন্য মানবিক গুণাবলির পরিচয়। তিনি রোগী কোন জেলার বাসিন্দা তা বিবেচনা না করে একজন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, প্রশাসনিক কাজের ফাঁকে যদি এমন মানবিক কাজ করার সুযোগ পাই, তাহলে অসহায় নাগরিকদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি।
মন্তব্য করুন