হাটহাজারীতে সিভিল সার্জনের নাম ভাঙিয়ে ও মোবাইল কোর্টের ভয় দেখিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স বিতরণের নামে হোটেল, রেস্তোরাঁ, মুদি দোকান ও বেকারি থেকে চাঁদাবাজি করছেন স্যানিটারি পরিদর্শক (নিজ বেতনে) ওমর ফারুক। আইনের মারপ্যাঁচ সাধারণ ব্যবসায়ীরা বুঝতে এবং জানতে না পারায় এ সুযোগে প্রতিনিয়ত কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ওই কর্মকর্তা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা থেকে হাটহাজারী উপজেলায় যোগ দেওয়ার পর থেকেই উপজেলা ও পৌরসভার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শনের নামে স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স ও স্বাস্থ্য সনদের বিষয়ে খবরাখবর নেন। একপর্যায়ে তাদের এসব বাধ্যতামূলক উল্লেখ করে দ্রুত লাইসেন্স করে নেওয়ার উপর তাগদা দেন। আপস না করলে মোবাইল কোর্টে জেল জরিমানার ভয় লাগিয়ে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। সিভিল সার্জন অফিসের নাম ভাঙিয়ে টাকার চুক্তিতে দিচ্ছেন সেসব সনদ তাও রসিদ ছাড়া।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য ও পানীয় প্রস্তুতকারী মিলকারখানা, হোটেল রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্য মজুদ, সংরক্ষণ,খুচরা ও পাইকারি খাদ্য ব্যবসা পরিচালনার্থে প্রতিষ্ঠান ব্যবহারের নিবন্ধন ইংরেজি ১৯৬৭ সালের বাংলাদেশ বিশুদ্ধ খাদ্য বিধিমালা ১১ (৩) অনুচ্ছেদে লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। বিধি অনুযায়ী লাইসেন্স দেওয়া হলেও সেই বিধির অধ্যাদেশ (১৯৫৯ এর সংশোধনী ২০০৫) ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রহিত করা হয়েছে। পরে বিশুদ্ধ খাদ্য আইনের সেই বিধি নিরাপদ খাদ্য আইনের বিধি হিসেবে চলমান। তবে নিরাপদ খাদ্য আইনে কোনো লাইসেন্স না থাকায় বিধির কোনো প্রয়োগ থাকার কথা নয়।
গত ৯ নভেম্বর হাটহাজারী পৌরসভা বাসস্টেশন আল-আমিন হাশেমী হোটেলে গিয়ে বললেন, এই হোটেল থেকে ১৫ জন কর্মচারী ট্রেনিং করতে হবে। না করলে তোমাদের লাইসেন্স দেওয়া হবে না। পৌরসভা থেকে যে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন সেটা হবে না আমাদের কাছ থেকে নিতে হবে। পরে ভাত খেয়ে টাকা না দিয়ে চলে যান।
এ ব্যাপারে ওমর ফারুকের কাছে মোবাইলে জানতে চাইলে দৈনিক কালবেলা পত্রিকার প্রতিনিধি পরিচয় দিলে ফোন কেটে দিয়ে বন্ধ করে দেন। পরে মোবাইল ফোনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করলে তিনি ঘটনাটি দেখবেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে হোটেলের মালিক রনি বলেন, প্রতি মাসে ২-৩ বার স্যানিটারি পরিদর্শক এসে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আমাদের ভীষণ যন্ত্রণা দেয়। আমার কাছে সব কাগজপত্র ঠিক থাকলেও তারপরও বিভিন্ন অজুহাতে আমাদের হয়রানি করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার ফারহান রাজিব বলেন, নিরাপদ খাদ্য আইনে কোনো লাইসেন্স নাই।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ হোসাইনের কাছে শারীরিক পরীক্ষা ছাড়া সনদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরীক্ষা করার দায়িত্ব স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের। পরীক্ষা করে পাঠাচ্ছেন বিধায় স্বাক্ষর দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া লাইসেন্সের বিষয়ে বলেন, আইন আছে, বিধায় দেওয়া হচ্ছে। সরকার স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের যে দায়িত্ব দিয়েছেন তারা সেটাই দিচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে জানিয়ে এসব প্রশ্ন অবাঞ্ছনীয় বলে উল্লেখ করেন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মহিউদ্দিন বলেন, শারীরিক পরীক্ষা ছাড়া কোনোভাবেই স্বাস্থ্য সনদ দেওয়া যাবে না।
মন্তব্য করুন