আমেরিকা প্রবাসীর সাক্ষর জালিয়াতি করে ডেভেলপার কোম্পানি গঠন, ব্যাংক হতে ঋণ গ্রহণ ও ফ্ল্যাট বিক্রির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় সিটি স্ক্যাপ প্ল্যানার্স কোম্পানির পরিচালক মো. মোমেনের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রবিউল আলমের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফয়সাল নূর।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলে, মো. আরাফাত (৪০), শিহাব উদ্দিন (৪৩), মোহাম্মদ নাজমুস সাকিব (৪০), মাহবুবুর রহমান (৪৫), এএসএম রফিকুল ইসলাম (৪১), এসএম সাইফুল ইসলাম (৩৯), মোহাররামুল কবির (৪৯), পিযুষ চন্দ্র রায় (৪০), সুরাইয়া বেগম (৬১), মোহাম্মদ শাহজাহান (৮০), জেসমিন মান্নান (৫১), শাহরিয়ার মাহমুদ (৩৯) ও রাশেদ হোছাইন (৩৫)।
অ্যাডভোকেট ফয়সাল নূর বলেন, বয়োবৃদ্ধ আমেরিকা প্রবাসী মোহাম্মদ বাবুল মিয়া দেশে না থাকা সত্ত্বেও তার নাম ব্যবহার করে চট্টগ্রাম নগরীতে সিটি স্ক্যাপ প্ল্যানার্স লিমিটেড নামে ভুয়া ডেভেলপার কোম্পানি গঠন করে মো. মোমেনসহ ১৪ আসামি। পরবর্তীতে বাবুল মিয়ার নাম ব্যবহার করে ব্যাংক হতে নেন কোটি কোটি টাকার ঋণ। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন মানুষের কাছে ফ্ল্যাট বিক্রয় করেও হাতিয়ে নেন ৩ কোটি টাকা।
আদালত সূত্র জানায়, মোহাম্মদ বাবুল মিয়া দীর্ঘ ৩০ বছরের বেশি সময় স্থায়ীভাবে আমেরিকায় বসবাস করছেন। তার অনুপস্থিতিতে আসামিরা তার নাম ব্যবহার করে সিটি স্ক্যাপ প্ল্যানার্স লিমিটেড নামে ভুয়া ডেভেলপার কোম্পানি ও বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্ট খুলে বেশ কয়েকটি অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে। আসামিরা দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি ক্রয়-বিক্রয় এবং জমিতে সুউচ্চ ইমারত নির্মাণের পরিকল্পনা করে ফ্ল্যাট বিক্রয়ের জন্য বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে বিক্রয়ের লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে। তারা প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। আসামিরা বাদীকে এই ভুয়া কোম্পানির কখনো চেয়ারম্যান, কখনো ব্যবস্থাপনা পরিচালক বানিয়েছেন। আসামিরা ফ্ল্যাটক্রেতাদের কাছে ফ্ল্যাটের দখল বুঝিয়ে না দেওয়ায় এবং গৃহীত ঋণ পরিশোধ না করায় বাদীসহ আসামিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী আইনে মামলা দায়ের করে। বাদী ২০২৩ সালে দেশে বেড়াতে আসলে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি বিষয় জানতে পেরে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় পিবিআই (মেট্রো), চট্টগ্রাম মামলার তদন্ত করে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন কাগজপত্র জব্দ করে ৭০৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দেয়। জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফারমস এর বিভাগীয় অফিস এবং জুবিলি রোডের যমুনা ব্যাংকের কাগজপত্রসহ বাদীর টিপ ও সাক্ষর পরীক্ষা করে চট্টগ্রাম সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবরেটরির হস্তলিপি বিশারদের মতামতের প্রেক্ষিতে বাদীর ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। পরে মামলার ১৪ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালত। এতে হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেওয়ার ৬ সপ্তাহ পরে বৃহস্পতিবার আত্মসমর্পণ করে জামনের আবেদন করলে তা না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
মন্তব্য করুন