দুই মাস আগের মারামারি রেশ কাটতে না কাটতে আবারও চট্টগ্রামের নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষু ও সমিতির নেতাদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ৬ জন ভিক্ষু। তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার (১১ মে) সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তবে আহতের পরিচয় জানা যায়নি।
জানা যায়, বৌদ্ধ বিহারের দখল নিয়ে ভিক্ষু ও সমিতির নেতাদের মধ্যে প্রথমে কথাকাটাকাটি থেকে হাতাহাতি হয়। পরে তা রূপ নেয় মারামারি ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায়। দফায় দফায় সংঘর্ষ থামাতে বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও।
ভিক্ষুদের অভিযোগ, শনিবার সকাল ১১টার দিকে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির নেতারা এসে বিহারের আসন থেকে বৌদ্ধ মূর্তিকে সরিয়ে তারা সেখানেই বসে যায়। তালা ঝুলিয়ে দেয় বিহারে। বিহারে টানিয়ে দেয় ব্যানার। বেলা ২টার ২টার পর ভিক্ষু নেতারা জড়ো হলে শুরু হয় দুই পক্ষের উত্তেজনা। মূলত বিহারকে নিজের দেখলে নিতেই সমিতির নেতাদের এমন কর্মকাণ্ড বলে অভিযোগ তাদের। তবে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সাধারণ মানুষ ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, বিহারের থাকবে ভিক্ষুরা, নেতারা নয়।
শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এক পক্ষকে পুলিশ বিহার থেকে বের করে দিলে শান্ত হয় পরিস্থিতি। ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়েন বেশ কয়েকজন ভিক্ষু। পরে অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। ভিক্ষু নেতাদের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে বিহার দখলে নিতেই সকাল থেকে জড়ো হয় তারা। বিষয়টি নিশ্চিত করেন কোতোয়ালি থানার এসআই রবিউল। তিনি কালবেলাকে বলেন, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক ভিক্ষু বলেন, আজ অবৈধ সন্ত্রাসীদের এনে আমাদের বৌদ্ধ বিহার দখলে নিতে চেয়েছিলেন বৌদ্ধ সমিতির নেতারা। কিন্তু সেটা বাধা দিতে গিয়ে আমাদের বৌদ্ধ বিক্ষুদের ওপর তারা বিভিন্নভাবে আক্রমণ করেছেন। ইতোমধ্যে ৬ জনের মতো ভিক্ষুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের উপরে বিভিন্নভাবে হামলা করা হয়েছে। আমরা যারা বৌদ্ধ জনসাধারণ এবং বৌদ্ধ ভিক্ষু রয়েছি আমরা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাই।
এদিকে, গতকাল সন্ধ্যার দিকে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নেতৃত্বে বিহারের সামনে মানববন্ধন করা হয়। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা জানায়, দুই মাস আগে বিহারের কিছু সম্পত্তি নিয়ে বৌদ্ধ সমিতির নেতাদের সাথে তাদের বিরোধ হয়। এটা নিয়ে ৮ মার্চ মারামারির পর বিহার থেকে বৌদ্ধ সমিতির নেতাদের বের করে দেওয়া হয়। শনিবার তারা আবার বিহারের দখল নিতে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
নন্দনকানন বিহারের উপাধ্যক্ষ জিনবোধি ভিক্ষু বলেন, বৌদ্ধ বিহার কারও সম্পত্তি নয়। কোনো সংগঠন করার জায়গাও না। কিন্তু একটা সংগঠন ভিক্ষুদের ওপর হামলা করে বিহার দখলে নিতে চায়। অন্যদিকে, বৌদ্ধ সমিতির নেতাদের দাবি, কয়েকজন ভিক্ষুর নেতৃত্বে কিছু কুচক্রী বিহারটি কুক্ষিগত করে রাখতে চাইছে।
কোতোয়ালি থানার ওসি ওবায়দুল হক জানান, বিহারের দখল ধরে রাখা নিয়ে দুই মাস থেকে ঝামেলা চলছিল। দুপুর থেকে দুইপক্ষ মুখোমুখি হয়। বিকেলে হাতাহাতি থেকে মারামারিতে লিপ্ত হয়। পরে পুলিশ এক পক্ষকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারের দখল নিয়ে ভিক্ষু ও সমিতি নেতাদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়েছিল। আলাদা আলাদা মানববন্ধন করছিল দুই পক্ষই।
মন্তব্য করুন