ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রাতভর বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর বেশিরভাগ নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। সড়ক-অলিগলি, বাসাবাড়ি হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে ডুবে গেছে।
জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো মানুষ। থমকে গেছে মানুষের জীবনযাত্রা।
এদিকে পানিবন্দি বাসায় আটকে পড়েছেন খোদ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের চকবাজার, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, বাদুড়তলা, শুলকবহর, মোহাম্মদপুর, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, কালারপোল, বড়পোল, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
সোমবার (২৭ মে) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব এলাকায় বেশিরভাগ রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে পানিতে। দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে ঢুকে গেছে পানি। বিপাকে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। জ্বলছে না রান্নার চুলা।
বেসরকারি অফিস, শিল্প ও কারখানা খোলা থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন চাকরিজীবীরা। বাড়তি ভাড়া দাবি করছেন রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা চালকরা। উন্মুক্ত নালা ও ফুটপাতের ভাঙা স্ল্যাব পথচারীদের জন্য ঝুঁকি বাড়িয়েছে অনেকটা।
যতটুকু চোখ যায় শুধু অথৈ জলরাশি। আর দালানগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে বর্ষায় তলিয়ে যাওয়া হাওরাঞ্চলের কোনো স্থাপনা মাত্র। এ বিস্তীর্ণ জলরাশিতে নেই কোনো পথিকের দেখা। কোমর পরিমাণ পানিতে আটকে যাওয়ার ভয়ে সড়ক প্রায় যানশূন্য। মাঝে মধ্যে দু-একটি রিকশার দেখা মিললেও সেসব অর্ধেক তলিয়ে গেছে। কোনোভাবে গলাপানি থেকে মাথা তুলে চলছে রিকশা।
এ অবস্থায় জীবিকার তাগিদে যারা ঘর থেকে বেরিয়েছেন নগর ব্যবস্থাপনার প্রতি তাদের ক্ষোভের অন্ত নেই। তাদের অভিযোগ, কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রতি বছর নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
কিন্তু বর্ষা এলেই দেখা যায় সেসব পরিকল্পনা আদতে শুভঙ্করের ফাঁকি। একটু বৃষ্টিতে পুরো শহর তলিয়ে যায়। আর ভারী বর্ষণে রাস্তাঘাট ছোট ছোট নদীতে পরিণত হচ্ছে।
কামরুল হাসান নামে আগ্রাবাদের এক বাসিন্দা বলেন, ‘শহরের সব নালা সংস্কার করতে হবে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে এ অবস্থা। ভুল পরিকল্পনার ফলে সমস্যা যাচ্ছে না।’
শরিফুল ইসলাম নামে বহদ্দারহাটের একজন বলেন, ‘আজকের বিষয় আলাদা। তবে এটা স্বাভাবিক চিত্র। শহরের খালগুলো খনন করা থাকলে হয়ত এত পানি জমত না।’
নগরের চকবাজার এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান বলেন, ‘বৃষ্টির পানিতে রাস্তাঘাট সব তলিয়ে গেছে। কীভাবে অফিসে যাব বুঝতে পারছি না।’
এদিকে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় ১৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে, সোমবার (২৭ মে) সকালে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে মঙ্গলবার (২৮ মে) সকালে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে এবং সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
মন্তব্য করুন