যথাযথ প্রশিক্ষণ নিয়ে বৈধভাবে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন টাঙ্গাইলের আশিক মিয়া। কিন্তু যাওয়ার পরপরই স্বাস্থ্যগত জটিলতায় তাকে দেশে ফিরতে হয়। কিন্তু যাওয়ার আগে মাত্র চার হাজার ৪০০ টাকায় ব্র্যাকের প্রবাসীবন্ধু বিমা করেছিলেন তিনি। এখন তিনি আগামী ছয় মাস প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা করে পাবেন।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) টাঙ্গাইলের বাসাইলে ব্র্যাকের স্থানীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে আশিকের হাতে বিমার অর্থ তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাম্মৎ আকলিমা বেগম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান, ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক বেলায়েত হোসেন ও গার্ডিয়ান লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট নওশাদুল করিম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে বিদেশফেরত চারজনকে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠার জন্যে সাড়ে ৬ লাখ টাকার অর্থ সহায়তার চেক হস্তান্তর করা হয়।
বাসাইল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাম্মৎ আকলিমা বেগম বলেন, বাসাইলের অনেক মানুষ বিদেশে থাকেন। ভীষণ কষ্ট করে তারা অর্থ পাঠিয়ে পরিবার ও দেশের অর্থনীতি ঠিক রাখেন। কিন্তু এই প্রবাসীরা কখনো বিপদে পড়লে, দুর্ঘটনায় পড়লে তাদের সুরক্ষা দেওয়ার কেউ থাকে না। এই বিমা তাদের সুরক্ষা দেবে।
ব্র্যাক জানিয়েছে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ জীবিকার সন্ধানে বিদেশ যান। কিন্তু স্বাস্থ্য সমস্যা, প্রতিষ্ঠান বন্ধ, হঠাৎ চাকরি হারানো, দুর্ঘটনাসহ নানা কারণে অনেকে চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরত আসেন। আবার অনেকে প্রবাসে মারা যান। এই প্রবাসীদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্র্যাক ও গার্ডিয়ান লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে ‘প্রবাসীবন্ধু’ বিমা চালু করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বিদেশে যাওয়ার আগে মাত্র চার হাজার ৪০০ টাকায় এই বিমা করলে গ্রাহকরা অসুস্থ হয়ে বিদেশে হাসপাতালে ভর্তি হলে পাবেন ৫০ হাজার টাকার চিকিৎসা ব্যয়। স্বাভাবিকভাবে ও দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে বিমা গ্রাহকের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবে চার লাখ টাকা। প্রবাসে দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করলে পাবেন দুই লাখ টাকা। এছাড়াও বিদেশে চাকরি হারানোর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৬ মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে পাবেন ১৫ হাজার টাকা।
বিমার আওতায় গ্রাহকরা কোনো কারণে ফেরত এলে দুই লাখ টাকা ও দেশে ফেরার পরে মারা গেলে দাফনের খরচ হিসেবে হাজার টাকা পাবেন। এছাড়াও বিমা পলিসি গ্রহণকারী ব্যক্তি নিজের জন্য পাবেন যতদিন প্রয়োজন টেলিমেডিসিন সেবা।
‘প্রবাসীবন্ধু’ বিমার প্রথম অর্থ পাওয়া আশিক মিয়া বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পর অসুস্থতার কারণে তাকে দেশে ফেরত চলে আসতে হয়। বিমার এই অর্থ দেশেই নতুন করে জীবন শুরু করতে সাহায্য করবে।
ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, প্রবাসীদের অবদান আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। যাদের কারণে এই অর্জন সেই প্রবাসীদের বিপদে সুরক্ষা দেবে এই বিমা।
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বলেন, আশিক মিয়ার মতো প্রবাসীদের গল্প আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে, বিদেশযাত্রায় শুধু স্বপ্ন নয়, ঝুঁকিও রয়েছে। বিমা সেই ঝুঁকিগুলোকে কমিয়ে তাদের সুরক্ষিত রাখবে। পাশাপাশি বিদেশ ফেরতদের জন্য ব্র্যাকের কাউন্সেলিং, উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ ও ব্যবসা শুরু করার জন্য অর্থ সহায়তা, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণসহ নানা উদ্যোগ রয়েছে।
মন্তব্য করুন